ধর্ম ডেস্ক : অন্যসব আবেগের মতোই রাগও মানুষের একটি সহজাত প্রবৃত্তি। রাগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে মানুষ বড় ধরনের বিপদে পড়ে যেতে পারে। এ কারণে রাসুল (সা.) তাঁর সাহাবিদের রাগ নিয়ন্ত্রণের তাগিদ দিতেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে বলল, আপনি আমাকে উপদেশ দিন। তিনি (নবীজি) বলেন, তুমি রাগ কোরো না। লোকটি কয়েকবার তা বলেন, নবীজি (সা.) প্রত্যেকবারই বলেন, রাগ করো না।’ (বুখারি, হাদিস : ৬১১৬)
বুখারি শরিফের ব্যাখ্যাকার আব্দুল ওয়াহেদ (ইবনে তিন) (রহ.) বলেন, রাসুল (সা.)-এর উপদেশ ‘রাগ করো না’-এর মধ্যে ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। কারণ রাগ মানুষের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি করে, সম্পর্ক নষ্ট করে, যা মানুষের ইহকালীন ক্ষতির কারণ হয়। কেউ কেউ রাগের বশবর্তী হয়ে আবার অন্যের ক্ষতি করার চেষ্টা করে বসে, যা মানুষের পরকালকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। (ফাতহুল বারি : ১০/৫২০)
এ কারণেই হয়তো রাসুল (সা.) বলেছেন, প্রকৃত বীর সে নয়, যে কুস্তিতে মানুষকে হারিয়ে দেয়; বরং সেই প্রকৃত বীর, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। (বুখারি, হাদিস : ৬১১৪)
তা ছাড়া মানুষ যখন রেগে যায়, তখন তার ওপর শয়তান ভর করে। ফলে সে অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে। অন্যের ক্ষতি করার চেষ্টা করে। রাসুল (সা.)-এর সামনে একবার এক ব্যক্তি আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-কে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকল। আবু বকর চুপচাপ তার গালি শুনতে থাকলেন, আর তার দিকে চেয়ে রাসুল (সা.) মুচকি হাসতে থাকলেন। অবশেষে আবু বকর সিদ্দিক জবাবে তাকে একটি কঠোর কথা বলে ফেলেন। তাঁর মুখ থেকে সে কথাটি বের হওয়ামাত্র নবী (সা.)-এর ওপর চরম বিরক্তি ভাব ছেয়ে গেল এবং ক্রমে তা তাঁর পবিত্র চেহারায় ফুটে উঠতে থাকল। তিনি তখনই উঠে চলে গেলেন। আবু বকরও (রা.) উঠে তাঁকে অনুসরণ করলেন এবং পথিমধ্যেই জিজ্ঞেস করলেন, ব্যাপার কী? সে যখন আমাকে গালি দিচ্ছিল তখন আপনি চুপচাপ মুচকি হাসছিলেন। কিন্তু যখনই আমি তাকে জবাব দিলাম তখনই আপনি অসন্তুষ্ট হলেন? রাসুল (সা.) বলেন, তুমি যতক্ষণ চুপচাপ ছিলে ততক্ষণ একজন ফেরেশতা তোমার সঙ্গে ছিল এবং তোমার পক্ষ থেকে জবাব দিচ্ছিল। কিন্তু যখন তুমি নিজেই জবাব দিলে তখন ফেরেশতার স্থানটি শয়তান দখল করে নিল। আমি তো শয়তানের সঙ্গে বসতে পারি না। (আল মুজামুল আউসাত : ৭/১৮৯)
এসএস//
Leave a Reply