Dhaka ১০:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫, ১৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও এতিমদের নিয়ে ককক্সবাজার ভ্রমনে দূর্বার তারুণ্য ফাউন্ডেশন শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বিএফইউজে-ডিইউজে’র আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত ১৯ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে অবকাশ : জরুরি মামলা শুনানিতে অবকাশকালীন বেঞ্চ জান প্রাণ দিয়ে জনআস্থা ধরে রাখতে হবে : তারেক রহমান বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যান সমিতির নতুন কমিটির অভিষেক : সভাপতি রফিকুল মহাসচিব সাত্তার সাংগঠনিক তোফাজ্জল কোটায় চাকরি : কুমিল্লার এসপি হচ্ছেন জুলাই বিপ্লবে গুলি করা ছাত্রলীগ ক্যাডার নাজির সম্প্রচারিত সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, কাল্পনিক এবং ভিত্তিহীন : সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন মতিঝিল থানা ৮নং ওয়ার্ড যুবদলের কর্মীসভা অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগসহ ১১টি দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে রিট বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যান সমিতির সভাপতি রফিক, মহাসচিব সাত্তার সাংগঠনিক সম্পাদক তফাজ্জল

মৌলিক অধিকার ও জনস্বার্থে মামলা : এডভোকেট জে. আর. খাঁন (রবিন)

  • Update Time : ০৫:১২:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২০
  • / ৩ Time View

ল’ডেস্ক :
মোঃ জে. আর. খাঁন (রবিন) সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী । জনস্বার্থ সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলা দায়ের এবং পরিচালনা করে বিচারপ্রার্থী মানুষের নজরে আসেন।
তরুণ এই আইনজীবী মৌলিক অধিকার ও জনস্বার্থে মামলা নিয়ে কথা বলেছেন সারাদেশ ডট নেট-এর ল’ডেস্কের সঙ্গে।

এডভোকেট জে. আর. খাঁন (রবিন) বলেন, বর্তমান বিশ্বে ৫ ধরনের আইন ব্যবস্থার মধ্যে “কমন আইন” ব্যবস্থা অন্যতম। বাংলাদেশও অন্যান্য দেশের ন্যায় এ আইন ব্যবস্থা উত্তরাধিকার সূত্রে ব্রিটিশ “কমন ল” ব্যবস্থা থেকে প্রাপ্ত। কমন ল” ভূক্ত দেশ সমূহের সংবিধানে উল্লেখিত মানুষের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের জন্য নিন্মোক্ত ৫ ধরনের রীটের উল্লেখ রয়েছে; ১।ম্যান্ডামাস ২। সার্শিওরারাই ৩। প্রহিবিশন। ৪। কো- ওয়ারেন্টো ৫ হেবিয়াস কর্পাস। যা জারী করার ক্ষমতা একমাত্র মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের।
বাংলাদেশ সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ এবং ভারতের ২২৬-এ অনুচ্ছেদে এ বিষয়ে বর্নিত রয়েছে।

অন্যদিকে জনস্বার্থে মামলা বলতে বুঝায় সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ছাড়াও দেশের যে কোন নাগরিক সৎ উদ্দেশ্যে দেশের জনগনের মৌলিক অধিকার রক্ষার্থে ও জনগনের পক্ষে দায়ের কৃত মামলা। বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানীর মতে জনস্বার্থ মামলাকে নিম্নোক্ত তিনভাগে ভাগ করা যায়; ১। জনগুরুত্ব সম্পর্কীয় মামলা (Public importance litigation), যে মামলায় আবেদনকারীর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট থাকলেও সিদ্ধান্ত বহু লোকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ২।বহু সংখ্যক লোকের একক স্বার্থসম্পর্কীয় মামলা (Representative Suit or litigation), একটি নিদিষ্ট জনগোষ্ঠীর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলা। ৩। জনস্বার্থ সম্পর্কীয় মামলা।(Public interest litigation), দেশের সকল মানুষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলা।
জনগনের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগে প্রতিকার প্রার্থনা করা যায়। তাছাড়া দেওয়ানী কার্যবিধির ধারা ৯১,৯২, ১ আদেশের ৮ বিধি, ৩২ আদেশ অনুয়ায়ী জনস্বার্থ মূলক মামলা করা যায়। তবে এক্ষেত্রে এটর্নি জেনারেল এর পূর্ব অনুমতি নিতে হয়। অন্যদিকে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৩৩ ধারা অনুযায়ী জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ম্যজিস্ট্রেট আদালতেও প্রতিকার প্রার্থনা করা যায়। এক্ষেত্রে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিসহ জনস্বার্থে যে কেউ আবেদন করতে পারে।
এডভোকেট রবিন বলেন, কমন আইন ব্যবস্থায় সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদন ছাড়া “কমন ল” ভূক্ত দেশের মাননীয় বিচারকগন ম্যান্ডামাস, সার্শিওরারাই ও প্রহিবিশন রীট আমলে নেয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত রক্ষনশীল ছিলেন। যদিও সময়ের সাথে সাথে তাঁদের এই রক্ষনশীলতা পর্যায়ক্রমে অনেক শিথিল হয়েছে।। বর্তমানে ভারতের সংবিধানে রীট এখতিয়ারের ক্ষেত্রে অনুচ্ছেদ ২২৬-এ যদিও সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ছাড়াও অন্যের আবেদনের সুযোগ রয়েছে কিন্ত ১৯৭০’ র দশকের আগ পর্যন্ত সেদেশের বিচারকগন ম্যান্ডামাস, সার্শিওরারাই ও প্রহিবিশন রীট সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদন ছাড়া আমলে নিতেন না। এমন অনেক বিষয় থাকে যেখানে সাধারন জনগন সরাসরি সংক্ষুব্ধ হলেও মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে মাননীয় আদালতে আসতে পারে না বা আসার সাহস পান না। তাই তাদের অধিকার বাস্তবায়নে জনস্বার্থে মামলা দায়েরের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৪ সালে “ব্রাউন বনাম বোর্ড অব এডুকেশন” (১৯৫৪) ৩৪৭ ইউ এস ৪৮৩) মামলার মাধ্যমে আমেরিকায় জনস্বার্থ মূলক মামলার প্রথম সূচনা হয়। ওই মামলায় মামনীয় আদালত মামলা আমলে নেয়ার ক্ষেত্রে রক্ষনশীল মনোভাব থেকে উদার মনোভাব পোষন করেন এবং ওই মামলায় শিক্ষা, চাকুরী এবং আবাসনের ক্ষেত্রে বর্নবাদী বৈযম্য নিষিদ্ধ করা হয়।পরবর্তীতে ১৯৬০ ও ৭০’র দশকে যুক্তরাষ্ট্রে জনস্বার্থ মূলক মামলা প্রতিষ্ঠানিক রুপ পেতে শুরু করে।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অগ্রযাত্রায় অনুপ্রানিত হয়ে সাধারন মানুষের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ভারতের সুপ্রীমকোর্ট জনস্বার্থ মূলক মামলাকে একটি কার্যকরী পন্থা হিসেবে ব্যবহার করেন এবং “এস. পি.গুপ্তা বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া” (এ. আই. আর ১৯৮২ এস. সি ১৪৯) মামলার মাধ্যমে ভারতে জনস্বার্থ মূলক মামলার প্রথম সুচনা হয়। উক্ত মামলায় হাইকোর্টের বিচারকের সংখ্যা এবং একজন অতিরিক্ত বিচারকের চাকুরি নিশ্চিত সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপনকে চ্যালেঞ্জ করে একদল আইনজীবীর আনা আবেদনকে আদালত জনস্বার্থমূলক মামলা হিসেবে আমলে নেন। অতঃপর “বেনজির ভুট্টো বনাম ফেডারেশন অব পাকিস্তান” (পি. এল. ডি ১৯৮৮এস. সি ৪১৬) মামলার মাধ্যমে পাকিস্তানে জনস্বার্থ মূলক মামলার অগ্রযাত্রা শুরু হয়। উক্ত মামলায় পাকিস্তানের সুপ্রীম কোর্ট মত প্রকাশ করেন; “প্রত্যেক ব্যক্তির স্বাধীনতা ও অধিকার ভোগ করার জন্যে জীবন যাপনের পর্যাপ্ত মান অপরিহার্য, আইনের শাসনকে অবশ্যই এমন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আবহ সৃষ্টি করতে হবে যা মর্যদা ও আকাঙ্খাসহ বেঁচে থাকতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করবে” “কাজী মুখলেসুর রহমান বনাম বাংলাদেশ” (২৬ ডি. এল. আর এডি ৪৪) মামলার মাধ্যমে বাংলাদেশ জনস্বার্থ মূলক মামলার সূচনা হয়।এ মামলায় ভারত- বাংলাদেশ সীমান্তরেখা পূনঃনির্ধারনকারী একটি চুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করা হলে অসমোয়চিত (premature) বলে খারিজ হলেও সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক আবেদনকারীর লোকাস স্ট্যান্ডাই স্বীকৃত হয়।

রবিন বলেন, জনস্বার্থে বাংলাদেশ “সংবাদপত্র পরিষদ বনাম বাংলাদেশ” (১২ বি. এল. ডি ১২৯২ এডি ১৫৩) মামলা লোকাস স্ট্যান্ডাই এর অভাবে খারিজ হলেও “রিটায়ার্ড গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশান বনাম বাংলাদেশ” (৪৬ ডি. এল. আর , ৪২৬) মামলায় হাইকোর্ট বিভাগ আবেদনকারীর লোকাস স্ট্যান্ডাই রয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। কিন্তু “লোকাস স্ট্যান্ডাই” নিয়ে তখনও বিরোধের মীমাংসা হয় নাই। “ড. মোহিউদ্দিন ফারুক বনাম বাংলাদেশ” (১৭ বি. এল.ডি এডি ১) মামলায় সুপ্রীম কোর্ট এ মর্মে রায় প্রদান করেন যে; “যে কোন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি কথাটি কেবলমাত্র ব্যক্তিগতভাবে অর্থাৎ প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে বুঝায় না, বরং এটা জনসাধারন পর্যাপ্ত বিস্তৃত, অর্থাৎ সমষ্টিগত ও জোটবদ্ধ ব্যক্তিত্বকেও বোঝায়। যদি কোন আবেদনকারী সৎ উদ্দেশ্যে ও জনস্বার্থে জনগনের কোন দাবী উত্থাপন করেন, তাহলে তিনি আদালত কর্তৃক তার শুনানি গ্রহনের যোগ্যতা অর্জন করেন” অর্থাৎ সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বলতে কেবল মাত্র যে ব্যক্তি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাকেই বোঝায় না, বরং এমন কোন ব্যক্তিকেও বোঝায় যে অন্য কোনো মানুষের প্রতি কোনো সরকারি বা স্হানীয় কর্তৃপক্ষকের অন্যায়ের ফলে তার নিজের হৃদয়ে রক্তক্ষরন অনুভব করে” মূলত এ মামলার মাধ্যমে আমাদের দেশে জনস্বার্থমূলক মামলার দ্বার উন্মুক্ত হয়।

বিভিন্ন মামলার নজির তুলে ধরে আইনজীবী রবিন বলেন, কোন ব্যক্তির আবেদনক্রমে আদালত মামলা আমলে নিতে পারেন। অন্যদিকে মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়, এমন কোন বিষয় আদালতের নজরে আসলে স্ব-প্রনোদিত(Suo moto rule) রুল জারী করা সহ প্রয়োজনীয় আদেশ দিতে পারেন। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হল রাস্ট্র বনাম জিল্লুর রহমান(১৯ বি,এল,ডি ৩০৩) মামলাটি। এর পরবর্তীতে মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ উল্লেখ সংখ্যক বিষয়ে স্বপ্রনোদিত আদেশ প্রদান করেছেন। সম্প্রতি জেলখানায় বিনা বিচারে আটক থাকা বন্দী সহ একাধিক বিষয়ে বিচারপতি এম. এনায়েতুর রহিম স্ব- প্রনোদিত রুল জারী করেন। মোবাইল কোর্ট কর্তৃক শিশুদের সাজা নিয়ে মাননীয় বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ স্ব- প্রনোদিত রুল জারী সহ প্রয়োজনীয় আদেশ প্রদান করেন।
রবিন বলেন, বিচার বিভাগের হাতেই মুলত জনস্বার্থ মুলক মামলার ভবিষ্যত ন্যস্ত। অন্তর্নিহিত সুবিবেচনার ক্ষমতার সাথে প্রায়োগিক সর্তকতার সমন্বয়ের মাধ্যমে বিচার বিভাগ এক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা পালন করতে পারে এবং বর্তমানে করছেনও যা খুবই প্রশংসার দাবীদার। অন্যদিকে আইনজীবী সমাজিক ডাক্তার, সামাজিক ইঞ্জিনিয়ার, সামাজের নেতা, সর্বোপরি একটি প্রতিষ্ঠানও বটে।সে হিসেবে জনস্বার্থে কাজ করা আইনজীবীর উপরও দায়িত্ব বর্তায় এবং অনেক আইনজীবী সে লক্ষ্যে নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন ।তবে এটাও মনে রাখা উচিৎ জনস্বার্থে কোন কাজ যেন কোন আইনজীবীর পাবলিসিটি ইন্টারেস্ট বা পার্সোনাল ইন্টারেস্ট না হয়।

মোঃ জে. আর. খান (রবিন), এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট।

এসএস//

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

মৌলিক অধিকার ও জনস্বার্থে মামলা : এডভোকেট জে. আর. খাঁন (রবিন)

Update Time : ০৫:১২:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২০

ল’ডেস্ক :
মোঃ জে. আর. খাঁন (রবিন) সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী । জনস্বার্থ সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলা দায়ের এবং পরিচালনা করে বিচারপ্রার্থী মানুষের নজরে আসেন।
তরুণ এই আইনজীবী মৌলিক অধিকার ও জনস্বার্থে মামলা নিয়ে কথা বলেছেন সারাদেশ ডট নেট-এর ল’ডেস্কের সঙ্গে।

এডভোকেট জে. আর. খাঁন (রবিন) বলেন, বর্তমান বিশ্বে ৫ ধরনের আইন ব্যবস্থার মধ্যে “কমন আইন” ব্যবস্থা অন্যতম। বাংলাদেশও অন্যান্য দেশের ন্যায় এ আইন ব্যবস্থা উত্তরাধিকার সূত্রে ব্রিটিশ “কমন ল” ব্যবস্থা থেকে প্রাপ্ত। কমন ল” ভূক্ত দেশ সমূহের সংবিধানে উল্লেখিত মানুষের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের জন্য নিন্মোক্ত ৫ ধরনের রীটের উল্লেখ রয়েছে; ১।ম্যান্ডামাস ২। সার্শিওরারাই ৩। প্রহিবিশন। ৪। কো- ওয়ারেন্টো ৫ হেবিয়াস কর্পাস। যা জারী করার ক্ষমতা একমাত্র মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের।
বাংলাদেশ সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ এবং ভারতের ২২৬-এ অনুচ্ছেদে এ বিষয়ে বর্নিত রয়েছে।

অন্যদিকে জনস্বার্থে মামলা বলতে বুঝায় সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ছাড়াও দেশের যে কোন নাগরিক সৎ উদ্দেশ্যে দেশের জনগনের মৌলিক অধিকার রক্ষার্থে ও জনগনের পক্ষে দায়ের কৃত মামলা। বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানীর মতে জনস্বার্থ মামলাকে নিম্নোক্ত তিনভাগে ভাগ করা যায়; ১। জনগুরুত্ব সম্পর্কীয় মামলা (Public importance litigation), যে মামলায় আবেদনকারীর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট থাকলেও সিদ্ধান্ত বহু লোকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ২।বহু সংখ্যক লোকের একক স্বার্থসম্পর্কীয় মামলা (Representative Suit or litigation), একটি নিদিষ্ট জনগোষ্ঠীর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলা। ৩। জনস্বার্থ সম্পর্কীয় মামলা।(Public interest litigation), দেশের সকল মানুষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলা।
জনগনের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগে প্রতিকার প্রার্থনা করা যায়। তাছাড়া দেওয়ানী কার্যবিধির ধারা ৯১,৯২, ১ আদেশের ৮ বিধি, ৩২ আদেশ অনুয়ায়ী জনস্বার্থ মূলক মামলা করা যায়। তবে এক্ষেত্রে এটর্নি জেনারেল এর পূর্ব অনুমতি নিতে হয়। অন্যদিকে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৩৩ ধারা অনুযায়ী জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ম্যজিস্ট্রেট আদালতেও প্রতিকার প্রার্থনা করা যায়। এক্ষেত্রে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিসহ জনস্বার্থে যে কেউ আবেদন করতে পারে।
এডভোকেট রবিন বলেন, কমন আইন ব্যবস্থায় সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদন ছাড়া “কমন ল” ভূক্ত দেশের মাননীয় বিচারকগন ম্যান্ডামাস, সার্শিওরারাই ও প্রহিবিশন রীট আমলে নেয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত রক্ষনশীল ছিলেন। যদিও সময়ের সাথে সাথে তাঁদের এই রক্ষনশীলতা পর্যায়ক্রমে অনেক শিথিল হয়েছে।। বর্তমানে ভারতের সংবিধানে রীট এখতিয়ারের ক্ষেত্রে অনুচ্ছেদ ২২৬-এ যদিও সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ছাড়াও অন্যের আবেদনের সুযোগ রয়েছে কিন্ত ১৯৭০’ র দশকের আগ পর্যন্ত সেদেশের বিচারকগন ম্যান্ডামাস, সার্শিওরারাই ও প্রহিবিশন রীট সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদন ছাড়া আমলে নিতেন না। এমন অনেক বিষয় থাকে যেখানে সাধারন জনগন সরাসরি সংক্ষুব্ধ হলেও মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে মাননীয় আদালতে আসতে পারে না বা আসার সাহস পান না। তাই তাদের অধিকার বাস্তবায়নে জনস্বার্থে মামলা দায়েরের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৪ সালে “ব্রাউন বনাম বোর্ড অব এডুকেশন” (১৯৫৪) ৩৪৭ ইউ এস ৪৮৩) মামলার মাধ্যমে আমেরিকায় জনস্বার্থ মূলক মামলার প্রথম সূচনা হয়। ওই মামলায় মামনীয় আদালত মামলা আমলে নেয়ার ক্ষেত্রে রক্ষনশীল মনোভাব থেকে উদার মনোভাব পোষন করেন এবং ওই মামলায় শিক্ষা, চাকুরী এবং আবাসনের ক্ষেত্রে বর্নবাদী বৈযম্য নিষিদ্ধ করা হয়।পরবর্তীতে ১৯৬০ ও ৭০’র দশকে যুক্তরাষ্ট্রে জনস্বার্থ মূলক মামলা প্রতিষ্ঠানিক রুপ পেতে শুরু করে।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অগ্রযাত্রায় অনুপ্রানিত হয়ে সাধারন মানুষের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ভারতের সুপ্রীমকোর্ট জনস্বার্থ মূলক মামলাকে একটি কার্যকরী পন্থা হিসেবে ব্যবহার করেন এবং “এস. পি.গুপ্তা বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া” (এ. আই. আর ১৯৮২ এস. সি ১৪৯) মামলার মাধ্যমে ভারতে জনস্বার্থ মূলক মামলার প্রথম সুচনা হয়। উক্ত মামলায় হাইকোর্টের বিচারকের সংখ্যা এবং একজন অতিরিক্ত বিচারকের চাকুরি নিশ্চিত সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপনকে চ্যালেঞ্জ করে একদল আইনজীবীর আনা আবেদনকে আদালত জনস্বার্থমূলক মামলা হিসেবে আমলে নেন। অতঃপর “বেনজির ভুট্টো বনাম ফেডারেশন অব পাকিস্তান” (পি. এল. ডি ১৯৮৮এস. সি ৪১৬) মামলার মাধ্যমে পাকিস্তানে জনস্বার্থ মূলক মামলার অগ্রযাত্রা শুরু হয়। উক্ত মামলায় পাকিস্তানের সুপ্রীম কোর্ট মত প্রকাশ করেন; “প্রত্যেক ব্যক্তির স্বাধীনতা ও অধিকার ভোগ করার জন্যে জীবন যাপনের পর্যাপ্ত মান অপরিহার্য, আইনের শাসনকে অবশ্যই এমন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আবহ সৃষ্টি করতে হবে যা মর্যদা ও আকাঙ্খাসহ বেঁচে থাকতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করবে” “কাজী মুখলেসুর রহমান বনাম বাংলাদেশ” (২৬ ডি. এল. আর এডি ৪৪) মামলার মাধ্যমে বাংলাদেশ জনস্বার্থ মূলক মামলার সূচনা হয়।এ মামলায় ভারত- বাংলাদেশ সীমান্তরেখা পূনঃনির্ধারনকারী একটি চুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করা হলে অসমোয়চিত (premature) বলে খারিজ হলেও সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক আবেদনকারীর লোকাস স্ট্যান্ডাই স্বীকৃত হয়।

রবিন বলেন, জনস্বার্থে বাংলাদেশ “সংবাদপত্র পরিষদ বনাম বাংলাদেশ” (১২ বি. এল. ডি ১২৯২ এডি ১৫৩) মামলা লোকাস স্ট্যান্ডাই এর অভাবে খারিজ হলেও “রিটায়ার্ড গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশান বনাম বাংলাদেশ” (৪৬ ডি. এল. আর , ৪২৬) মামলায় হাইকোর্ট বিভাগ আবেদনকারীর লোকাস স্ট্যান্ডাই রয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। কিন্তু “লোকাস স্ট্যান্ডাই” নিয়ে তখনও বিরোধের মীমাংসা হয় নাই। “ড. মোহিউদ্দিন ফারুক বনাম বাংলাদেশ” (১৭ বি. এল.ডি এডি ১) মামলায় সুপ্রীম কোর্ট এ মর্মে রায় প্রদান করেন যে; “যে কোন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি কথাটি কেবলমাত্র ব্যক্তিগতভাবে অর্থাৎ প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে বুঝায় না, বরং এটা জনসাধারন পর্যাপ্ত বিস্তৃত, অর্থাৎ সমষ্টিগত ও জোটবদ্ধ ব্যক্তিত্বকেও বোঝায়। যদি কোন আবেদনকারী সৎ উদ্দেশ্যে ও জনস্বার্থে জনগনের কোন দাবী উত্থাপন করেন, তাহলে তিনি আদালত কর্তৃক তার শুনানি গ্রহনের যোগ্যতা অর্জন করেন” অর্থাৎ সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বলতে কেবল মাত্র যে ব্যক্তি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাকেই বোঝায় না, বরং এমন কোন ব্যক্তিকেও বোঝায় যে অন্য কোনো মানুষের প্রতি কোনো সরকারি বা স্হানীয় কর্তৃপক্ষকের অন্যায়ের ফলে তার নিজের হৃদয়ে রক্তক্ষরন অনুভব করে” মূলত এ মামলার মাধ্যমে আমাদের দেশে জনস্বার্থমূলক মামলার দ্বার উন্মুক্ত হয়।

বিভিন্ন মামলার নজির তুলে ধরে আইনজীবী রবিন বলেন, কোন ব্যক্তির আবেদনক্রমে আদালত মামলা আমলে নিতে পারেন। অন্যদিকে মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়, এমন কোন বিষয় আদালতের নজরে আসলে স্ব-প্রনোদিত(Suo moto rule) রুল জারী করা সহ প্রয়োজনীয় আদেশ দিতে পারেন। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হল রাস্ট্র বনাম জিল্লুর রহমান(১৯ বি,এল,ডি ৩০৩) মামলাটি। এর পরবর্তীতে মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ উল্লেখ সংখ্যক বিষয়ে স্বপ্রনোদিত আদেশ প্রদান করেছেন। সম্প্রতি জেলখানায় বিনা বিচারে আটক থাকা বন্দী সহ একাধিক বিষয়ে বিচারপতি এম. এনায়েতুর রহিম স্ব- প্রনোদিত রুল জারী করেন। মোবাইল কোর্ট কর্তৃক শিশুদের সাজা নিয়ে মাননীয় বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ স্ব- প্রনোদিত রুল জারী সহ প্রয়োজনীয় আদেশ প্রদান করেন।
রবিন বলেন, বিচার বিভাগের হাতেই মুলত জনস্বার্থ মুলক মামলার ভবিষ্যত ন্যস্ত। অন্তর্নিহিত সুবিবেচনার ক্ষমতার সাথে প্রায়োগিক সর্তকতার সমন্বয়ের মাধ্যমে বিচার বিভাগ এক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা পালন করতে পারে এবং বর্তমানে করছেনও যা খুবই প্রশংসার দাবীদার। অন্যদিকে আইনজীবী সমাজিক ডাক্তার, সামাজিক ইঞ্জিনিয়ার, সামাজের নেতা, সর্বোপরি একটি প্রতিষ্ঠানও বটে।সে হিসেবে জনস্বার্থে কাজ করা আইনজীবীর উপরও দায়িত্ব বর্তায় এবং অনেক আইনজীবী সে লক্ষ্যে নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন ।তবে এটাও মনে রাখা উচিৎ জনস্বার্থে কোন কাজ যেন কোন আইনজীবীর পাবলিসিটি ইন্টারেস্ট বা পার্সোনাল ইন্টারেস্ট না হয়।

মোঃ জে. আর. খান (রবিন), এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট।

এসএস//