1. newsroom@saradesh.net : News Room : News Room
  2. saradesh.net@gmail.com : saradesh :
অস্বাভাবিক মৃত্যু, ডাক্তার, পুলিশের ভূমিকা ও আইনগত প্রতিকার - সারাদেশ.নেট
শনিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৩৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
সরকারি খরচায় সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইডে ৩০৪৮ মামলায় আইনি সহায়তা শ্রম আইন প্র্যাকটিস এবং প্রাসঙ্গিক কথা : ড. উত্তম কুমার দাস, এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করতে চায় রোমানিয়া কুমিল্লা সাংবাদিক ফোরাম, ঢাকা’র ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বিচারপতি মোঃ আশফাকুল ইসলাম আপিল বিভাগে ভ্যাকেশন জাজ মনোনীত আপিল বিভাগের জেষ্ঠ্য বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কারামুক্ত হলেন আইনজীবীদের নেতা ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বেসিক প্রিন্সিপালস্ অফ ডেন্টাল ফার্ফাকোলজি এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ ‘ইতালিয়ান ভাষার’ ওপর পরীক্ষা উদ্বোধন করলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত ইতালিয়ান ভাষা শিক্ষাকোর্স ও পরীক্ষা কেন্দ্র উদ্বোধন বুধবার

অস্বাভাবিক মৃত্যু, ডাক্তার, পুলিশের ভূমিকা ও আইনগত প্রতিকার

  • Update Time : শনিবার, ১ মে, ২০২১

মোঃ জে আর খাঁন রবিন, এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট : মানুষ জন্ম গ্রহন করলেই মৃত্যু অবধারিত। এ মৃত্যু স্বাভাবিক, অস্বাভাবিক, হত্যা, আত্মহত্যা বা দূর্ঘটনাজনিত যে কোন কারনেই ঘটতে পারে।

বিখ্যাত ফরাসী দেহ ব্যবচ্ছেদবিদ (Anatomist) Bichat এর মতানুসারে যে কোন মৃত্যুর দূরবর্তী বা পরোক্ষ কারন যাই হোকনা কেন, মৃত্যুর প্রত্যক্ষ বা প্রাথমিক নিম্নোক্ত ৩ টি কারণ রয়েছে :
ক) অচেতনাবস্থা বা স্নায়ুতন্ত্রের ব্যর্থতা
খ) মূর্ছা বা রক্ত সঞ্চালনে ব্যর্থতা।
গ) শ্বাসরুদ্ধ হওয়া বা শ্বাস প্রক্রিয়ার ব্যর্থতা।

অচেতনাবস্থা বা স্নায়ুতন্ত্রের ব্যর্থতা :
অচেতনাবস্থার অনেকগুলি কারণ ও উপসর্গ রয়েছে এবং মৃত্যু পরবর্তী চেহারার মধ্যে নিম্নোক্ত উপসর্গ বিদ্যমান থাকে;
* যখম, অন্যকোন রোগ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ * মস্তিষ্কের আবরণ কনজেেস্টেড * উভয় ফুসফুস কনজেস্টেড এবং পানি বহুল * হৃদপিণ্ডের ডানদিক সাধারণত ভর্তি থাকে এবং বামদিক শুন্য থাকে।

মূর্ছা বা রক্ত সঞ্চালনে ব্যর্থতা : মূর্ছার অনেকগুলো কারন ও উপসর্গ থাকলেও মৃত্যু পরবর্তী চেহারার মধ্যে নিম্নোক্ত উপসর্গ বিদ্যমান থাকে;

* রক্তশূন্যতায় মারা গেলে হৃদপিণ্ড সংকুচিত এবং প্রকোষ্ঠগুলি ফাকা থাকবে এবং ওজনহীনতায় মারা গেলে হৃদপিণ্ডের প্রকোষ্ঠ রক্ত ভর্তি থাকবে। * ফুসফুস, মস্তিষ্ক এবং পেটের অঙ্গ সমুহ বিবর্ণ হবে। * রক্তের সুক্ষ নালী ও জাল প্রসারিত হবে।

শ্বাসরুদ্ধ হওয়া : শ্বাসরুদ্ধের অনেকগুলি কারণ ও উপসর্গ রয়েছে এবং আক্রমণ ঘটিত শ্বাসরুদ্ধকর মৃত্যুর নিম্নোক্ত ধরন বিদ্যমান থাকে;
* মুখ এবং নাসারন্ধ্র হাত, কাপড় ইত্যাদি দ্বারা বন্ধ করা অথবা বালু, মাটি, কাদা, গোবর ইত্যাদি দ্বারা ছিদ্র বন্ধ করা। * ফাঁস লাগানো বা গলা টিপে হত্যা:
* শ্বাসনালীতে কোন বাইরের দ্রব্য আটকে যাওয়া,
* শাসনালী তরল পদার্থে পূর্ণ থাকায় শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে না পারা যেমন-পানিতে ডোবা
* শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে বাধাগ্রস্ত হওয়া যেমন প্রচন্ড ভীড়ের চাপ, বাঁশডলা, দালান ইত্যাদির নিচে চাপা পড়া
* নিক্রিয় গ্যাস দ্বারা শ্বাস কার্য চালাইতে বাধ্য করা। যেমন অগ্নিকান্ডে ঘরে আবদ্ধ হলে না পুড়েও কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন-মনক্সাইডে শ্বাস প্রশ্নাসের জন্য মৃত্যু ঘটতে পারে।

শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যুর পরবর্তী মৃতের চেহারায় বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীন বিম্নোক্ত উপসর্গ সমুহ পরিলক্ষিত হয়:-
ক) বাহ্যিক চেহারা
* মুখমন্ডল, ঠোট, কান, আঙ্গুল ও পায়ের বিবর্ণাবস্থা * যুখমন্ড
* গলায় দড়ি দিয়ে মৃত্যু হলে লালা পড়ার দাগ
* মৃত্যু পরবর্তী দাগ * ধীরে ধীরে রাইগর মর্টিস বা মৃত্য-পরবর্তী কাঠিন্য।

খ) অভ্যন্তরীণ লক্ষণসমূহ:

১) রক্ত (Blood) * রং-গাঢ় বা কালাে তবে কার্বন মনক্সাইড বিষক্রিয়ায় নহে * অধিকতর তরল। * জমাট বাঁধে দেরীতে এবং ধীরে ধীরে। * রক্তনালীগুলিতে রক্ত ভরা থাকে বিশেষতঃ ভিতরের অঙ্গসমূহের।

২.ফুসফুস (Lungs)

* ধীরে ধীরে মৃত্যু হলে ফুসফুস কনজেস্টেড থাকে।
* তাড়াতাড়ি মৃত্যু হলে ফুসফুস রক্তহীন থাকে।
* ফুসফুসের ভিতর চাপ বেড়ে যাবার জন্য ফুসফুসের মারজিনে এবং পৃষ্ঠদেশে কিছু কিছু বায়ুর থলি ফেটে গিয়ে ছােট ছােপ এমফাইসেমা তৈরী হয়।

৩) ট্র্যাকিয়া এবং ব্রংকাই (শ্বাসনালী)-এ রক্ত রঞ্জিত ফেনা থাকতে পারে।

৪) হৃদপিন্ড-ধীরে মৃত্যু হলে হৃদপিন্ডের ডানদিক রক্ত অল্প প্রসারিত হয়। তাড়াতাড়ি মৃত্যু ঘটলে রক্ত জমার জন্য হৃদপিন্ডের ডান দিক খুব বেশী প্রসারিত হয়।

৫. মস্তিষ্কের আবরণ এবং অন্যান্য আবরণ

* কনজেসশন- থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে। * ছােট ছােট রক্তক্ষরণের চিহ্ন থাকতে পারে- মেনিনজেস, পুরা, পেরিকার্ডিয়াম ইত্যাদি আবরণে এইগুলিকে Tardieu’s spot বলে। এই দাগগুলির বেশ গুরুত্ব রয়েছে।

বিশেষতঃ মৃত্যুর কারণ যে শ্বাস রুদ্ধ হওয়া সে বিষয়ে। এই দাগগুলির বৈশিষ্ট্য আছে:
যেমন- * এইগলি সব সময়ই থাকে না। * তাড়াতাড়ি শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যু হলে বেশী পাওয়া যায়। * সূক্ষ রক্তনালী ফেটে গিয়েই এই রক্তক্ষরণজনিত দাগগুলি হয়। Tardieu’s spot-জাতীয় ক্ষুদ্র রক্তক্ষরণ শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যুর প্রমাণ-যদি তা বিষক্রিয়া অথবা রােগের কারণে না হয়। তাই বলে এই দাগ শ্বাসরুদ্ধ হবার জন্যই, নির্দিষ্ট নয়। এই দাগ থেকে প্রমাণিত হয় যে মৃত্যুর অব্যবহিত পূ্বে শ্বাস-প্রশ্বাস চালবার প্রচন্ড চেষ্টা করা হয়েছিল। তাই দাগ না পাওয়া গেলেও Asphyxia জনিত মৃত্যু হতে পারে।

৬। পেটের অঙ্গসমূহ: বিশেষত- hযকৃৎ, প্লীহা এবং বুকে রক্ত জমাট থাকতে পারে পাকস্থলীর ভিতরের স্তর এমন ভাবে কনজেস্টেড থাকতে পারে যে মনে হবে ক্ষতকারী কোন বিষক্রিয়া।

৭। মস্তিষ্কঃ সাধারণঃ কনজেস্টেড থাকে, তবে ততটা নয়,যতটা অচেতনাবস্থা জনিত মৃত্যতে দেখা যায়।

আক্রমণাত্বক শ্বাসরুদ্ধকর মৃত্যুর ক্ষেত্রে যখন শ্বাসরুদ্ধ করা হয় তখন মৃত্যুর কারণ হতে পারে উদ্বদ্ধনে মৃত্যু (গলায় দড়ি বা Hanging), স্ট্যাঙ্গুলেশন, গলা টিপে হত্যা, পানিতে ডােবা, শ্বাস নিতে না পারা (Suffocation)।

অন্যদিকে মৃত্যুর প্রকৃতি (Nature of death) হতে পারে নিম্নোক্ত তিন প্রকার;
১) জিঘাংসা মূলক বা খুন বা হত্যা( Homocidal)
২) আত্মহত্যা(Suicidal)
৩) দূর্ঘটনামূলক(Accidental): জিঘাংসা মূলক মৃত্যু বা খুন বা হত্যাঃ এ রকম হত্যা বা খুনের কারণ হচ্ছ প্রতিশোধ, লোভ, কামলিপ্সা, উন্মাদ, উন্মাত্ত দৌড়, মধ্যপান জনিত মত্ততা।

আত্মহত্যাঃ
এ রকম হত্যার মূল কারন হচ্ছে পারিবারিক অশান্তি,মনস্তাপ ও লজ্জা,চরম শোক ও দুঃখজনক সংবাদ,দারিদ্র্য, দূর্ভিক্ষ ও আকাল, দূরারোগ্য ও যন্ত্রণাদায়ক ব্যাধি ইত্যাদি। আত্মহত্যার কৌশলও হয় বিভিন্ন রকম, যেমন-গলায় দড়ি দিয়ে,পানিতে ডুবে,বিষ খেয়ে,আগুনে পুড়ে,গুলি করে,অনশন করে,রেল লাইনে ঝাপিয়ে পড়ে, চুরিকাঘাতে, গলা কেটে, উপর থেকে লাপ দিয়ে।

দূর্ঘটনামূলক মৃত্যুঃ
এ রকম দূর্ঘটনা বিভিন্ন কারনে হয়ে থাকে, যেমন- লঞ্চডুবি,সড়ক দূর্ঘটনা,গাছ বা ছাদের নিচে চাপা পড়া,জাহাজ বিদীর্ন হওয়া। ইত্যাদি। এবার আলোচনা করার চেস্টা করব ফাঁসিতে আত্মহত্যার লক্ষন ও উপসর্গ নিয়ে; ফাঁসিতে আত্মহত্যা করে সংজ্ঞালোপ পাওয়ার পূর্বের উপসর্গ নিম্নরুপ; * চরম ভীতিমুক্ত উদ্বেগ * কানের ভিতর গর্জন বা শো শো শব্দ * চোখের সামনে আলোর ঝলকানি দেখা * প্রচন্ড মানসিক বিভ্রান্তি * অসহায় বোধ করা।

সংজ্ঞালোপ পাওয়ার পরের উপসর্গ নিম্নরুপ; * খিচুনি * মুখমণ্ডল বিকৃত হওয়া * মূখ মন্ডল, ঠোঁট, কান ও আঙ্গুলের নখ মলিন ও বিবর্ন হওয়া * মূখের দু’প্রান্ত দিয়ে লালা নিঃসরণ। * শ্বাস নেয়ার জন্য আপ্রান চেস্টা ও ভয়ংকর ধস্তাধস্তি। * ঘাড়ের ও কপালের দু’পাশ্বের শিরা শক্ত ও স্ফীত হওয়া। * চোখ বড় হওয়া। * প্রসাব নির্গত হওয়া ও পুরুষের বেলায় বীর্যও নির্গত হওয়া।। * শ্বাস-প্রশ্বাস চুড়ান্তভাবে বন্ধ হওয়া।

আমাদের সমাজে প্রায়ই দেখা যায়, শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যাকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করলেও আত্মহত্যা ও শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার উপসর্গের ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়।

অধিকাংশ শ্বাসরােধকরণ মূলত হত্যামূলক। নিম্নোক্ত বিষয় থেকে তা নির্ধারণ করা যায়। হত্যামূলকঃ * দড়ি বা রজ্জুতে একাধিক গিট থাকবে। * সংজ্ঞাহীন হওয়ার পরও রজ্জুর গিরা শক্ত রাখার উপকরণের অনুপস্থিতি। * ঘাড়ে ও শরীরের অন্যান্য স্থানে হিংসাত্মক আক্রমণের চিহ্ন থাকবে।
* দড়ি বা রজ্জু ছাড়া অন্য উপায়ে গলা চেপে ধরার চিহ্ন। * ধস্তাধস্তির চিহ্ন থাকবে। * হতভাগ্য ব্যক্তির হস্তম্বয় এমনভাবে বাধা থাকবে, যা নিজে নিজে করা সন্ভব নয়, তাহলে নিশ্চিত যে ইহা আত্মহত্যামূলক।
* গলায় রজ্জুর দাগের বৈশিষ্ট্য-সােজা গলার চারদিকে জুড়ে থাকবে এবং গলার নিম্নভাগে থাকবে যেটা আত্মহত্যামূলক ফাঁসিতে হয় না। তাছাড়া একাধিক প্যাচের রজ্জুতে একাধিক গিট স্পষ্টতই হত্যামূলক এবং শ্বাসরােধ করে মৃত্যুর পরিচায়ক।

আত্মহত্যামূলক: গলা চেপে আত্মহত্যার ঘটনা অতি বিরল। যদি সত্যি আত্মহত্যামূলক হয় তবে সংজ্ঞাহীন হওয়ার পর যাতে দড়ির গিট আলগা হয়ে না যায় তজ্জন্য আত্মহত্যাকারী নিম্নোক্ত যে কোন একটি উপায় ব্যবহার করবেন।

* দড়ির একাধিক প্যাঁচ ঘাড়ের উপর দিয়ে ঘুরিয়ে এনে গিরা লাগাবে। * দড়ির সাথে একটা লাঠি পেচিয়ে দড়ির দুই প্রান্ত এমন ভাবে আটকাবে যেন গিট আলগা হতে না পারে।

গিটের বৈশিষ্ট্য: একটি গিট-আত্মহত্যার সমর্থক। দুইটি বা ততােধিক গিট-হত্যার জোর সমর্থক।

দূর্ঘটনামূলক: দুর্ঘটনামূলক শ্বাসরােধ করে মৃত্যু খুবই বিরল তবুও ইহা নিম্নোক্ত উপায়ে ঘটতে পারে * ঝুড়িতে ভারী মালপত্র বােঝাই করে থুতনীর নীচে দিয়ে দড়ি ঘুরিয়ে ঝুড়ি মাথায় রেখে চলার সময় হঠাৎ দুর্ঘটনামূলকভাবে ঝুড়ি মাথার উপর থেকে সরে পিছনে ঝুলে পড়লে গলায় চাপ লেগে মৃত্যু হতে পারে।

* চলমান যন্ত্রে জামার কলার আটকে গেলে।

* গলাবন্ধ বা নেকটাই বা অনুরূপ অন্য কিছু দুর্ঘটনামূলকভাবে আটকে গিয়ে।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে গলায় দড়ি বা ফাঁসিতে ঝুলে মৃত্যু ও শ্বাসরোেধকরণে মৃত্যুর মধ্যে নিম্নোক্ত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।

গলায় দড়ি দিয়ে মৃত্যুর ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত উপাদান বিদ্যমান।
* সাধারণত আত্মহত্যামূলক।
* ফাঁসির রজ্জুর দাগ তীর্যক, সর্বত্র সমান স্পষ্ট নয়, গলার বেশ উপরে অবস্থিত, যাতে মাঝে মাঝে দাগ থাকবেনা।
* সর্বত্র ফাঁসির দাগের নিচে Parchmentisation পরিদৃষ্ট।
* ফাসির দাগের সাথে Abrasion ও ecchymosis কদাচিৎ পরিদৃষ্ট।
* ফাসির দাগের নিচে Subentaneous tissues সাধারণত শ্বেত বর্ণের হবে এবং অনেকটা শক্ত হয়ে উঠবে।
* যৌন আঘাতের চিহ্ন থাকে না (আত্মহত্যামূলক হলে)।
* ঘাড়ের মাংসের জখম কদাচিত।
* ক্যারােটিভ ধমনীর ভিতরের স্তর লম্বা দড়িতে ঝুললেই কেবল ছিড়ে যেতে পারে।
* ল্যারিংস ও টরাকিয়ার ভগ্নদশা খুব বিরল এমনকি আদালতের নির্দেশে ফাঁসির বেলায়ও। * স্ক্যাচ, এ্যাব্রাসন,Bruise থাকে না।
* মুখমন্ডল সাধারণ বিবর্ণ এবং মলিন, রক্তক্ষরণ থাকেনা।
* সতেজ দেহে গলা লম্বা হয়ে যায়।
* শ্বাসরােধের বাহ্যিক লক্ষণ প্রকৃষ্ট নয়।
* নাক,মূখ ও কান থেকে সাধারনত রক্তপাত হয় না।
* মূখের কোণা দিয়ে লালা নিঃসৃত হবার চিহ্ন থাকে
* ফুসফুসে Emphysema tous bullae থাকে না।
* জিহ্বা খুব কমই বের হয়ে আসে।
* চক্ষুদ্বয় খুব উদ্ভাসিত দেখাবে না এবং প্রায়ই বন্ধ থাকে। শ্বাসরুদ্ধকরণের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত উপাদান বিদ্যমান।
* সাধারণত হত্যামূলক
* রজ্জুর দাগ সােজা, গােলাকার, গলার চারদিকেই স্পষ্ট, সর্বত্রই স্পষ্ট এবং গলার বেশ নিম্নাংশে অবস্থিত।
* ফাঁসির দাগের নিচে কদাচিৎ Parchmentisation দেখা যায়।
* ফাসির দাগের সাথে Abrasion ও ecchymosis কদাচিৎ পরিদৃষ্ট।
* ফাঁসির দাগের নিচে Subentaneous tissues taneous tissues ecchymosed হবে।
* অনেক সময় যৌন আঘাতের চিহ্ন থাকে। * ঘাড়ের মাংসের জখম বেশ হয়।
* সাধারণত ক্যারােটিভ ধমনীর ভিতরের স্তর ছিড়ে যায়।
* ল্যারিংস, ট্রাকিয়া ও হাইয়েড হাড়ের ভগ্নদশা প্রায়ই থাকে।
* স্ক্যাচ, এ্যাব্রাসন, আঙ্গুলের দাগ, নখের আঁচড়, bruises ইত্যাদি মুখমন্ডল, গলা ও দেহের অন্যত্র থাকে।
* মুখমন্ডল কনজেস্টেড, মলিন এবং ক্ষুদ্র রক্তক্ষরণ চিহ্ন থাকে।
* সতেজ দেহে গলা লম্বা হয়ে যায় না।
* শ্বাসরােধের বাহ্যিক লক্ষণ যথেষ্ট প্রকট।
* নাক,মূখ ও কান থেকে রক্তপাত হতে পারে।
* লালা নিঃসৃত হবার চিহ্ন থাকে না।
* ফুসফুসে Emphysema tous bullae থাকে।
* জিহ্ব বের হয়ে আসাই স্বাভাবিক।
* চক্ষুদ্বয় খুব উদ্ভাসিত দেখাবে এবং সাধারনতঃ খোলা থাকে।

কোন ব্যক্তির অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে প্রকৃত কারন নির্নয়সহ বিচারের আইনগত বিধান রয়েছে। যেমন এ রকম কোন মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথেই সংশ্লিষ্ট পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ফৌজদারি কার্য্যবিধির ১০৩ ধারায় ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত প্রয়োজনীয় আলামত জব্দ করবেন এবং ফৌজধারী কার্যবিধির ১৭৪(১) ধারা অনুযায়ী সার্বিক বিষয় অন্তর্ভূক্তসহ মৃতের সুরুতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করবেন।

প্রয়োজন মনে করলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৪(৩) ধারা তৎসহ পুলিশ রেগুলেশনের ৩০৩-৩০৮ ধারা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের নিকট মৃতের লাশ প্রেরণ করলে, ডাক্তার ময়না তদন্ত রিপোর্ট প্রস্তুত করতঃ মৃতের, মৃত্যুর প্রকৃত কারন উদঘাটন করবেন যা ফৌজদারি কার্যবিধির ৫০৯(ক) ধারা অনুযায়ী সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং নিয়মিত মামলা দায়েরের পর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে প্রযোজ্য ধারায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারা অনুযায়ী আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবেন এবং সে অনুযায়ী অথবা প্রযোজ্য ধারায় অভিযোগ গঠন করতঃ আদালত প্রকৃত আসামির বিরুদ্ধে বিচার কার্য সম্পূর্ণ করবেন।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি অনেক সময় অপমৃত্যু মামলাতেও চুড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল ক্রমে নিয়মিত হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।

অন্যদিকে আত্মহত্যার প্ররোচনায় দন্ডবিধির ৩০৬ ধারা মামলা দায়ের হলেও স্বাক্ষ্য আইনের ১০৬ ধারা অনুযায়ী যার জ্ঞাতসারে কোন ঘটনা ঘটে সে ঘটনা প্রমানের দায়িত্ব তার উপর বর্তায়। ব্যর্থতায় তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। উল্লেখ্য ভিকটিম নারী হলে নারীও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর প্রযোজ্য ধারায় মামলা ও বিচার কার্য্য চলবে।

পরিশেষে এটুকু বলব কেউ অপমৃত্যু বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর স্বীকার হলে আল্লাহ এবং বিচারক ছাড়া অনেক ক্ষেত্রেই তার আর কেউ আপন থাকেনা কারন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মামলা সংশ্লিষ্ট বাদী ও স্বাক্ষীগন কোন না কোন কারণে উদাসীন হয়ে পড়ে।

একটি মামলায় ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় মামলার সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আদর্শিক ও আন্তরিক হতে হয় কারণ সঠিক তদন্ত ও সাক্ষীর ভূমিকা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অপরিসীম। আদালত নথিতে থাকা কাগজ পত্র ও সাক্ষীদের সাক্ষ্য বিবেচনায় রায় প্রদান করেন এবং এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আইনজীবী আদালতকে শুধুমাত্র আইনগত সহযোগিতা করেন।

সার্বজনীন ন্যায়বিচারের মাধ্যম সুষ্ঠু সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। তাই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সকল বিতর্কের উর্ধ্বে থেকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে হতে হবে সৎ, আন্তরিক, বিশ্বস্ত ও দায়িত্বশীল।

মোঃ জে. আর. খাঁন (রবিন) এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট।

রেফারেন্স:
১। মেডিক্যাল আইন বিজ্ঞান
২। পেনাল কোড ১৮৬০ ৩। ফৌজদারি কার্যবিধি-১৮৯৮ ৪। সাক্ষ্য আইন১৮৭২।

ডিএএম//

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *