1. newsroom@saradesh.net : News Room : News Room
  2. saradesh.net@gmail.com : saradesh :
অবকাঠামো নির্মাণ, শিল্প বিকাশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের অগ্রযাত্রায় গর্বিত সহযোগী আব্দুল মোনেম লিমিটেড : মঈনুদ্দিন মোনেম - সারাদেশ.নেট
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৪৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
ভূমিদস্যু কামরুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ১০ আইনজীবীর আবেদন টাকা আত্মসাতের মামলায় সাইমেক্স লেদারের এমডি বিএনপি নেতা টিএস আইয়ুব ও তার স্ত্রী কারাগারে সরকারি খরচায় সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইডে ৩০৪৮ মামলায় আইনি সহায়তা শ্রম আইন প্র্যাকটিস এবং প্রাসঙ্গিক কথা : ড. উত্তম কুমার দাস, এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করতে চায় রোমানিয়া কুমিল্লা সাংবাদিক ফোরাম, ঢাকা’র ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বিচারপতি মোঃ আশফাকুল ইসলাম আপিল বিভাগে ভ্যাকেশন জাজ মনোনীত আপিল বিভাগের জেষ্ঠ্য বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কারামুক্ত হলেন আইনজীবীদের নেতা ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বেসিক প্রিন্সিপালস্ অফ ডেন্টাল ফার্ফাকোলজি এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ

অবকাঠামো নির্মাণ, শিল্প বিকাশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের অগ্রযাত্রায় গর্বিত সহযোগী আব্দুল মোনেম লিমিটেড : মঈনুদ্দিন মোনেম

  • Update Time : শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

দিদারুল আলম :
ষাটের দশকে তৎকালীন পাকিস্তানের সমগ্র সম্পদের সিংহভাগই কুক্ষিগত ছিল মাত্র বাইশ পারিবারের হাতে, যাদের মধ্যে একজন মাত্র ছিলেন বাঙালি-এ কে খান। পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনের সময় বঙ্গবন্ধুসহ বহুনেতাই তাদের ভাষণে ওই বাইশ পরিবারের সম্পদ কুক্ষিগতকরণের বিষয়টিকে অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে তুলে ধরতেন। একটি বৈষম্যমুক্ত শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খা থেকেই লড়াই-সংগ্রাম ও যুদ্ধের মধ্যদিয়ে অর্জিত হলো বাংলাদেশ।

নিজ চেষ্টা, উদ্যোগে বৈষম্যমুক্ত দেশীয় অর্থনৈতিক কাঠামোর ক্ষেত্র তৈরিতে অবকাঠামো নির্মানে দেশে পথিকৃৎ আব্দুল মোনেম। আব্দুল মোনেমের নামে গড়ে উঠা কোম্পানি আব্দুল মোনেম লিমিটেড (এএমএল) দেশের শীর্ষ শিল্প পরিবার। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মানসহ বিভিন্ন খাতে রয়েছে আব্দুল মোনেমের অবিস্মরণীয় অবদান।

আবদুল মোনেমের জেষ্ঠ্য পুত্র ও এএমএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মঈনুদ্দিন মোনেম বলেন, অবকাঠামো নির্মাণ, শিল্প বিকাশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের অগ্রযাত্রায় গর্বিত সহযোগী আব্দুল মোনেম লিমিটেড (এএমএল)।

তিনি বলেন, একসময় যোগাযোগ ব্যাবস্থাসহ সকল ক্ষেত্রেই আধুনিকায়ন ও বিশ্বমানের কোনো ছাপই ছিলনা বাংলাদেশে। ছিল আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষ জনবলের অভাব। ওই বৈরী পরিস্থিতি থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল হতে দৃঢ় মনোবল, অসীম আত্মবিশ্বাস, একাগ্রতা ও সততার সাথে শুন্য থেকে শীর্ষে উঠার এক জীবন্ত গল্প তৈরি করলেন আমার বাবা আব্দুল মোনেম।

আমার বাবা আব্দুল মোনেমের সাফল্যের মূলভিত্তি ছিল-সততা, শ্রম আর কাজের গুণগত মান।

মঈনুদ্দিন মোনেম বলেন, একসময় দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে বিদেশী প্রতিষ্ঠানের উপর আমাদের নির্ভর করতে হতো। সে অবস্থা থেকে আমার বাবা আব্দুল মোনেম নিজের প্রতিষ্ঠানকে আন্তর্জাতিক মানের মতো গড়ে তুলেছেন। পদ্মা সেতু থেকে কর্ণফুলী টানেল কিংবা যমুনা সংযোগ সড়ক অথবা নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামো-এসব কিছুরই বড় একটা অংশই বাস্তবে রূপ দিয়েছে আমার বাবা আব্দুল মোনেমের সুদূরপ্রসারী ভাবনা। তার নিজস্ব চিন্তা সাহস আর অভিনবত্বে বাংলাদেশকে এনে দিতে থাকেন একের পর এক সাফল্য। বিদেশি প্রতিষ্ঠান নয় নিজ দেশের প্রতিষ্ঠান দিয়েই আন্তর্জাতিক মানের স্থাপনা ও অবকাঠামো নির্মাণ সম্ভব এটি আমার বাবা আব্দুল মোনেম প্রমান করেছেন।

তিনি বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামোগত উন্নয়ন ৪৪ কিলোমিটার দীর্ঘ খুলনা-মোংলা হাইওয়ে, ৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ ভাটিয়াপাড়া-গোপালগঞ্জ-মোল্লারহাট রোড, গোপালগঞ্জ বাইপাসসহ, গড়াই ব্রিজ, মাওনা ব্রিজ, গুলশান বনানী ব্রিজ, বনানী ফ্লাইওভার, লালন ব্রিজের সংযোগ সড়কসহ আরো অনেক কিছু আমার বাবা আব্দুল মোনেমের প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে দৃশ্যমান।
১৯৮৪ সালে খুলনা-মোংলা হাইওয়ের কাজ করে প্রথমবারের মতো এএমএল আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড লাভ করে। সেই আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড বজায় রেখে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে প্রতিষ্ঠানটি পৌঁছে যায় এক নতুন উচ্চতায়। আর পদ্মা বহুমুখী ব্রিজে কাজ করার মধ্য দিয়ে সেই অবস্থান সুসংহত স্থায়িত্ব লাভ করে।

মালয়েশিয়ান কনস্ট্রাকশন ফার্ম এইচসিএমের সঙ্গে এএমএল একটি জয়েন্ট ভেঞ্চার স্থাপন করেছে। এই ভেঞ্চারের অধীনে পদ্মার মূল সেতুর দুদিকে জাজিরা ও মাওয়া প্রান্তে দুটি সংযোগ সড়ক তৈরির দুটি আলাদা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। দুটি চুক্তির মধ্যে ছিল পাঁচটি ব্রিজ, ২০টি কালভার্ট ও আটটি আন্ডারপাসের নির্মাণকাজ। পদ্মা ব্রিজের জন্য সার্ভিস এরিয়া-২ তৈরি করার আন্তর্জাতিক টেন্ডারও পায় একমাত্র এএমএল। সুউচ্চ ভবন, হাইড্রোলিক স্ট্রাকচার, বিমানবন্দর, নদীতে জেটি ও টার্মিনাল, বাস টার্মিনাল, ফ্যাক্টরি এবং এমন আরো অনেক কিছু তৈরি করেছে এএমএল।

মঈনুদ্দিন মোনেম বলেন, এএমএল সফলভাবে হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে সংস্কার প্রকল্প সম্পন্ন করেছে। সবচেয়ে কম সম্ভাব্য সময়ে ওই প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছিল। সফলভাবে সিলেটে ওসমানী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের কাজ, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে এসএম বারাক অ্যান্ড দামালকোটের কাজ, ঢাকার গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদে তিনটি বাস টার্মিনাল, সাত লাখ বর্গফুট জায়গা জুড়ে তিনটি টাওয়ার মোনেম বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট বানিয়েছে।

এএমএল শুধু নির্মাণকাজের মধ্যেই কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ না থেকে পরবর্তী সময়ে আইসক্রিম ইউনিট ও বেভারেজ ইউনিট, ২০০০ সালে ম্যাংগো পাল্প প্রসেসিং, ২০০৪ সালে ইগলু ফুডস, ড্যানিশ বাংলা ইমালসন, সিকিউরিটিজ ও ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড, ইগলু ডেইরি প্রডাক্টস লিমিটেড, ২০০৭ সালে সুগার রিফাইনারি লিমিটেড ও এএম এনার্জি লিমিটেড, ২০০৮ সালে নোভাস ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ২০১০ সালে এএম অ্যাসফল্ট অ্যান্ড রেডিমিক্স লিমিটেড, ২০১২ সালে এএম অটো ব্রিকস লিমিটেড, ২০১৪ সালে এএম ব্র্যান অয়েল কোম্পানি এবং ২০১৫ সালে আব্দুল মোনেম ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক গ্রুপে পরিণত হয়েছে। এএমএল বেভারেজ ইউনিটের অধীনে এএমএল কোকা-কোলা ব্র্যান্ডের কোকা-কোলা, ফ্যান্টা, স্প্রাইট ও কিনলে ড্রিংকিং ওয়াটার বোতলজাত করে আসছে।

আব্দুল মোনেম লিমিটেডের পণ্য ‘ইগলু আইসক্রিম’ বাংলাদেশে একটি অতিপরিচিত ও জনপ্রিয় নাম।

মঈনুদ্দিন মোনেম বলেন, আমার বাবা আব্দুল মোনেমের শেষ স্বপ্ন ছিল প্রাইভেট ইকোনমিক জোন তৈরি। ওই জোনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিনিয়োগ আসবে। এক কোটি লোকের কাজের সুযোগ তৈরি করে দেয়ার প্রবল ইচ্ছা ছিল আমার বাবা আব্দুল মোনেমের। ২০১৫ সালে আব্দুল মোনেম ইকোনমিক জোন লাইসেন্স পায়, যা প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করেন। ইকোনমিক জোনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।

মঈনুদ্দিন মোনেম বলেন, চাকরির সুযোগ তৈরি ও বৈচিত্র্যময় ব্যবসায়িক কার্যক্রমের পাশাপাশি আব্দুল মোনেম লিমিটেড মনে করে, সমাজের ভালো থাকা নিশ্চিত করার জন্য আরো অনেক কিছু করার রয়েছে। জনগণ, সমাজ ও দেশের প্রতি অবদানের যখন স্বীকৃতি দেয়া হয় তা আমাদের আরো অনুপ্রাণিত করে। এএমএল পেয়েছে সেরা করদাতার সম্মাননা, সর্বোচ্চ মূল্য সংযোজন কর প্রদানকারীর সম্মাননা, আইএফএডব্লিউপিসিএ গোল্ড মেডেল, বিজনেস পারসন অব দি ইয়ার ২০০৮, কমার্শিয়ালি ইম্পরট্যান্ট পারসন ২০১০, ২০১১ ও ২০১৩, যমুনা ব্যাংক লিমিটেডের এক্সিলেন্স ফর বিজনেস পারফরম্যান্স।

মঈনুদ্দিন মোনেম আরো বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন গল্প ও আব্দুল মোনেমের আখ্যান একই সূত্রে গাঁথা।

তিনি বলেন, নশ্বর এ পৃথিবীতে বিখ্যাত ব্যক্তিরা প্রতিদিন জন্মগ্রহণ করেন না। তারা আসেন হয়তো শতবর্ষের ব্যবধানে। তাদের সংক্ষিপ্ত জীবনে পৃথিবীতে রেখে যান অনেক কীর্তিগাথা। যা মানুষ মনে রাখে সুদীর্ঘকাল। এর সুফল ভোগ করে প্রজন্মের ওর প্রজন্ম।

মঈনুদ্দিন মোনেম বলেন, সম্পূর্ণ একক প্রচেষ্টায় শূন্য অবস্থান থেকে শীর্ষ সারিতে আরোহণ করা সুপ্রতিষ্ঠিত সফল ব্যক্তির অন্যতম আমার বাবা। আব্দুল মোনেম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন আলহাজ আব্দুল মোনেম। যিনি আমার গর্বিত বাবা। লক্ষ্যে পৌঁছার অদম্য মনোবল, চেষ্টা আর অধ্যবসায় যে একজন মানুষকে তার লালিত স্বপ্নের শিখরে নিয়ে যায়, তার এক অনন্য উদাহরণ আমার বাবা আব্দুল মোনেম। সুদীর্ঘকাল নানা টানাপড়েন, ত্যাগ-তিতিক্ষা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে বাবা অর্জন করেন বিরল সফলতা।

মঈনুদ্দিন মোনেম বলেন, পঞ্চাশের দশকের শুরুর দিকে এসএসসি পাস করে বাবা যখন ঢাকায় আসেন, তখন তার হাতে ছিল গুটিকয়েক টাকা, যা দিয়ে চলাই ছিল কঠিন। এ সময় সরকারের সার্ভে পদে পরীক্ষা দেন এবং প্রথম স্থান অধিকার করেন। কিন্তু চাকরিতে তার মন টেকেনি। স্বপ্ন ছিল আরো বড় কিছু করার, বড় কিছু হওয়ার। তার একমাত্র লক্ষ্য ছিল ব্যবসা। মাত্র ৭০ টাকা পুঁজি করে কীভাবে ব্যবসা করতে হয়, সেটা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। দক্ষতা ও সততা দিয়ে গড়ে তুলেছেন সুবিশাল ব্যবসায়ীক ও শিল্প সাম্রাজ্য।

মঈনুদ্দিন মোনেম বলেন, বাবা বিশ্বাস করতেন, সবচেয়ে ভালো প্রযুক্তি ব্যবহার করে সব কাজে এক নম্বর হওয়া সম্ভব। অংশীদারত্বের ভিত্তিতে ঠিকাদার হিসেবে কাজ শুরু করলেও পরে ১৯৫৬ সালে মাত্র ২০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে নিজের প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম লিমিটেড (এএমএল) গড়ে তোলেন। দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে নেতৃত্ব দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৫৭ সালে এএমএল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যাত্রা করে। আর অবকাঠামো বিনির্মাণ দিয়ে মূল ব্যবসা শুরু করে আব্দুল মোনেম গ্রুপ। পরবর্তী সময়ে এএমএল বহুমাত্রিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।

মঈনুদ্দিন মোনেম বলেন, বাবা ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ ও পরোপকারী মানুষ। মহান আল্লাহর ওপর নির্ভরশীলতা এবং সততাকে সবসময় গুরুত্ব দিয়েছেন। কাজের বিষয়ে তিনি খুবই দক্ষ ও দূরদর্শী ছিলেন। শুধু ফিল্ড সার্ভে করলেই তিনি বুঝতে পারতেন এ প্রকল্পে কী কী প্রয়োজন হবে এবং কীভাবে প্রকল্পটি সুন্দরভাবে শেষ করা যাবে। এটি তার অন্যতম ব্যতিক্রমী গুণ ছিল।

মঈনুদ্দিন মোনেম বলেন, ব্যবসা ও পরিবার একসঙ্গে সফলভাবেই সামলেছেন বাবা। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই ছেলে ও তিন মেয়ের জনক। সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন।

মঈনুদ্দিন মোনেম বলেন, আমি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি, এটা আমার বাবার কৃতিত্ব। তিনি আমাকে বলেছেন-তুমি হার্ভার্ডে ট্রাই করো। আমি বলেছি, এমআইটিতে পড়াই তো যথেষ্ট। কিন্তু তিনি বলেছেন, যা-ই করবে নাম্বার ওয়ান হতে হবে।

মঈনুদ্দিন মোনেম বলেন, আমার বাবার টাকা ছিল না। এক বেলা খাবারের টাকা জোগাড় করাই ছিল খুব কষ্ট। অথচ সেই ব্যক্তি স্বপ্ন দেখছেন, তার ছেলে পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। সেজন্য আমি একজন আব্দুল মোনেমকে শুধু পিতা হিসেবেই নয়, বরং তাকে আমার জীবনের একজন গাইড, একজন মেন্টর, একজন আর্কিটেক্ট মনে করি। তিনি আমার কাজের অনুপ্রেরণা ছিলেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তার প্রতিটি পদক্ষেপ আর অক্লান্ত শ্রম নিবেদিত ছিল নিজ হাতে গড়া শিল্প গ্রুপ আব্দুল মোনেম লিমিটেডের জন্য। নির্মাণ আর অবকাঠামো দিয়ে ব্যবসা শুরু করে ডালপালা ছড়ান বহুমাত্রিক প্রতিষ্ঠানে। কাজের সুযোগ করে দেন অসংখ্য মানুষের। দীর্ঘ ৬৪ বছরের কর্মজীবন তাকেও দিয়েছে দুহাত ভরে। রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা এসেছে বাবা আব্দুল মোনেমের হাতে।

মঈনুদ্দিন মোনেম বলেন, ব্যবসায়ের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে বিপদগ্রস্ত ও অসহায় মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে বাবা গড়ে তোলেন আব্দুল মোনেম ফাউন্ডেশন। এ ফাউন্ডেশন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আব্দুল মোনেমের নিজ গ্রাম বিজেশ্বরে প্রায় ৫২ একর জমি দান করেছে। সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ বেশ কয়েকটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। এছাড়া একটি এতিমখানা পরিচালনাসহ সব খরচ বহন করছে ফাউন্ডেশনটি। এখানে প্রায় তিন হাজার এতিম পড়াশোনা করে। দেশে বন্যা বা অন্য কোনো ধরনের বিপর্যয়ের সময়ও এ ফাউন্ডেশন ত্রাণ বিতরণ ও অন্যান্য সহযোগিতা করে থাকে।

মঈনুদ্দিন মোনেম বলেন, খেলাধুলায়ও দারুণ আগ্রহী ছিলেন আব্দুল মোনেম। বাংলাদেশে ফুটবলের সুবর্ণ সময়ে ঢাকার মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। ১৯৮৪ থেকে ১৯৯৪-৯৫ মৌসুম পর্যন্ত ঢাকার মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি ছিলেন। তার সময়ে ফুটবল লিগে ১৯৮৬, ১৯৮৭ ও ১৯৮৮ সালে হ্যাটট্রিক শিরোপা জেতে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি।

বাইশ পরিবার এখন শুধুই অতীত। আবদুল মোনেমের সাফল্যের হাত ধরে দেশের নির্মাণখাতসহ বিভিন্ন সেক্টরে আরো উদ্যোক্তা তৈরী হয়েছেন। দেশে শিল্প-কল কারখানা ব্যাপক প্রসার ঘটেছে এবং দিনে দিনে এর প্রসার আরো ত্বরান্বিত হচ্ছে। কিন্তু ব্যবসায়ীক জীবনের শুরু থেকে সততা ও গুনগত মান বজায় রেখে নিজেদের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির ধারাবাহিকতার নজির একমাত্র আব্দুল মোনেমের গড়া প্রতিষ্ঠানই করছেন বাংলাদেশে।

১৯৩৭ সালের ৫ জানুয়ারি বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার আখাউড়ায জন্ম আব্দুল মোনেমের। ২০২০ সালের ৩১ মে মহান রবের ডাকে সারা দিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান বিভিন্ন ক্ষেত্রে পথিকৃৎ দেশের সফল ব্যাক্তিত্ব আব্দুল মোনেম।

মানুষ বেচেঁ থাকে তার কর্মের মাধ্যমে। তেমনি আব্দুল মোনেমও বেচেঁ থাকবেন তার কর্মে ও সাফল্যগাথায়।

ডিএএম/এসএম//

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *