সারাদেশ ডেস্ক : দাম্পত্য জীবনের সংকট নিরসনে কোরআনে দুটি আয়াতে বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘পুরুষ নারীর কর্তা। কেননা আল্লাহ তাদের একে অপরের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং এ জন্য যে পুরুষ তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে। সুতরাং সাধ্বী স্ত্রীরা অনুগতা এবং লোকচক্ষুর অন্তরালে আল্লাহ যা সংরক্ষিত করেছেন তা হেফাজত করে। স্ত্রীদের মধ্যে যাদের অবাধ্যতার আশঙ্কা করো তাদের সদুপদেশ দাও, তারপর তাদের শয্যা বর্জন করো এবং তাদের (মৃদু) প্রহার করো। যদি তারা তোমাদের অনুগত হয়, তবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পথ অন্বেষণ কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহান, শ্রেষ্ঠ। তাদের উভয়ের মধ্যে বিরোধ আশঙ্কা করলে তোমরা তার (স্বামী) পরিবার থেকে একজন এবং তার (স্ত্রী) পরিবার থেকে একজন সালিস নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ে নিষ্পত্তি চাইলে আল্লাহ তাদের মধ্যে মীমাংসার অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবিশেষ অবহিত।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৩৪-৩৫)
স্বামী অভিভাবক : উল্লিখিত আয়াতে নারীর ওপর পুরুষের কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছে অভিভাবক হিসেবে, পরিবারের ব্যবস্থাপক হিসেবে। নতুবা স্বামীর ওপর ও সংসারে নারীরও বিধিবদ্ধ অধিকার রয়েছে। সুতরাং স্বামী কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী আচরণ করবে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নারীদের তেমনি ন্যায়সংগত অধিকার আছে, যেমন আছে তাদের ওপর পুরুষদের; কিন্তু নারীদের ওপর পুরুষদের মর্যাদা আছে। আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২২৮)
যে দুই গুণের অভাবে কলহ সৃষ্টি হয় : আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ আদর্শ স্ত্রীর দুটি গুণ উল্লেখ করেছেন। তা হলো, স্বামীর আনুগত্য এবং স্বামীর অনুপস্থিতিতে সতীত্ব রক্ষা করা। বিবাদসংক্রান্ত আয়াতে এই দুটি গুণের উল্লেখ করার মাধ্যমে আল্লাহ এ ইঙ্গিতই করছেন যে বেশির ভাগ দাম্পত্য কলহের পেছনে অবাধ্যতা ও অনৈতিকতাই দায়ী। অবশ্য ইসলাম নারী-পুরুষ উভয়কেই অনৈতিকতা পরিহারের নির্দেশ দিয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিন পুরুষদের বলো তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে। …মুমিন নারীদের বলো তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে।’ (সুরা নুর, আয়াত : ৩০-৩১)
সংশোধনের জন্য করণীয় : স্ত্রীর ভেতর শরিয়তবিরোধী কোনো বিষয় দেখা দিলে, যা নিয়ে দাম্পত্য জীবন যাপন করা সম্ভব নয়, স্বামী তাকে সংশোধনের চেষ্টা করবে। সে প্রথমে তাকে সদুপদেশ দেবে। তাতে ঠিক না হলে বিছানা পৃথক করবে এবং তাতেও কাজ না হলে মৃদু প্রহার করতে পারবে। কোরআনের বর্ণনাভঙ্গি থেকে স্পষ্ট হয় যে স্বামী শুধু অপারগতার সময় স্ত্রীকে মৃদু আঘাত করতে পারবে এবং তা অবশ্যই প্রশংসনীয় কোনো বিষয় নয়; বরং ইসলাম স্ত্রীদের প্রতি সদাচরণে উদ্বুদ্ধ করেছে।
ইমাম জাসসাস (রহ.) মৃদু প্রহারের জন্য তিনটি শর্তের কথা বলেছেন। তা হলো, এক. রাগ, ক্ষোভ বা প্রতিশোধের জন্য আঘাত করবে না; বরং স্ত্রীর জন্য কল্যাণকামী হিসেবে সংশোধনের উদ্দেশ্যে শাসন করবে।
দুই. সদুপদেশ ও বিছানা ত্যাগের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলেই শুধু মৃদু আঘাত করা যাবে।
তিন. স্ত্রীর চেহারা ও স্পর্শকাতর অঙ্গে আঘাত করতে পারবে না। এমন আঘাত করবে না যাতে ক্ষত তৈরি হয়, অঙ্গহানির শঙ্কা তৈরি করে বা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করে। তাকে শুধু মৃদু আঘাত করারই অনুমতি দেয়া হয়েছে। (আহকামুল কোরআন লিল-জাসসাস : ৩/১৫)
আল্লামা আশরাফ আলী থানভি (রহ.) মৃদু আঘাতের সংজ্ঞায় বলেছেন, ‘যে আঘাতে শরীরে কোনো দাগ বা চিহ্ন পড়ে না।’(তালিমুদ্দিন)
এসএস//
Leave a Reply