Dhaka ১০:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫, ১৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও এতিমদের নিয়ে ককক্সবাজার ভ্রমনে দূর্বার তারুণ্য ফাউন্ডেশন শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বিএফইউজে-ডিইউজে’র আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত ১৯ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে অবকাশ : জরুরি মামলা শুনানিতে অবকাশকালীন বেঞ্চ জান প্রাণ দিয়ে জনআস্থা ধরে রাখতে হবে : তারেক রহমান বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যান সমিতির নতুন কমিটির অভিষেক : সভাপতি রফিকুল মহাসচিব সাত্তার সাংগঠনিক তোফাজ্জল কোটায় চাকরি : কুমিল্লার এসপি হচ্ছেন জুলাই বিপ্লবে গুলি করা ছাত্রলীগ ক্যাডার নাজির সম্প্রচারিত সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, কাল্পনিক এবং ভিত্তিহীন : সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন মতিঝিল থানা ৮নং ওয়ার্ড যুবদলের কর্মীসভা অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগসহ ১১টি দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে রিট বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যান সমিতির সভাপতি রফিক, মহাসচিব সাত্তার সাংগঠনিক সম্পাদক তফাজ্জল

সাংবিধানিক অধিকার, মৌলিক অধিকার ও রিট : এডভোকেট জে, আর খাঁন (রবিন)

  • Update Time : ০৬:১৯:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর ২০২০
  • / ১ Time View

দিদারুল আলম : সুপ্রিমকোর্টের তরুণ মেধাবী আইনজীবী মোঃ জে. আর. খাঁন (রবিন)।

সারাদেশ.নেট এর সঙ্গে “সাংবিধানিক অধিকার, মৌলিক অধিকার ও রিট নিয়ে” কথা বলেছেন।

এডভোকেট রবিন বলেন, সংবিধান একটি দেশের মেরুদন্ড হিসেবে কাজ করে। সংবিধান হচ্ছে সেসব মৌলিক নিয়ম কানুন এবং প্রথার সমষ্টি যা কোনো রাষ্ট্রের সরকারের বিভিন্ন বিভাগ অর্থাৎ আইন বিভাগ,শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ করে। শাসকের ক্ষমতা বর্ণনা করে, শাসিতের মৌলিক অধিকার বর্ননা করে, শাসক ও শাসিতের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ করে। শাসক তাঁর ক্ষমতার গণ্ডি লঙ্ঘন করে শাসিতের অধিকারে হস্তক্ষেপ করলে তার প্রতিবিধানের জন্য বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা করে।

এডভোকেট রবিন বলেন, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির ভূখণ্ড এক সময় পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত ছিল।পরবর্তীতে বিভিন্ন যৌক্তিক কারণে, দীর্ঘ ৯ মাসের এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। ১৯৭২ সনের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হয় এবং এ সংবিধান ১৯৭২ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে বলবৎ হয়। বাংলাদেশ সংবিধানের নাম “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান”। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের সংবিধান রয়েছে। তবে আমাদের সংবিধান লিখিত এবং সংসদীয় গনতান্ত্রীক সরকারের রুপরেখা বা কাঠামোসহ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি, জনগনের মৌলিক অধিকার সমুহ, রাস্ট্রের নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা, বিচার বিভাগের কার্যপরিধি সহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহের নিয়ামক বিধানাবলী।

এডভোকেট রবিন বলেন, বাংলাদেশ সংবিধানে ১৫৩ টি অনুচ্ছেদ রয়েছে, তন্মধ্যে “অনুচ্ছেদ ৭(১) অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগন; এবং জনগনের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে।।
অনুচ্ছেদ ৭(২) অনুযায়ী জনগনের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরুপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি এ সংবিধানের সহিত অসমঞ্জস হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ন, ততখানি বাতিল হইবে”

সারাদেশ.নেট : সংবিধান, সাংবিধানিক আইন, সাংবিধানিক অধিকার, মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার কি এবং কোন অধিকার কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায় ?

এডভোকেট রবিন বলেন, সংবিধান হল দেশ পরিচালনার জন্য সরকার কর্তৃক একটি লিখিত দলিল, অন্যদিকে সাংবিধানিক আইন হলো দেশের সুশাসনের মূল নীতি ও পদ্ধতি। জনগনের মৌলিক অধিকার সংবিধান দ্বারা সুরক্ষিত ও নিশ্চিত, যা আইন প্রনেতাগন কোন রকম সংশোধন, পরিবর্তন বা বাতিল করতে পারেন না এবং সাংবিধানিক অধিকার সাধারণ আইন দ্বারা রক্ষিত এবং আইন প্রনেতাগণ এটিকে সংশোধন,পরিবর্তন বা বাতিল করতে পারেন। কারো মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন হলে সংক্ষুব্ধ ব্যাক্তি হাইকোর্ট বিভাগে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করতে পারেন।অন্যদিকে সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুন্ন হলে সাধারন আদালতে প্রতিকার প্রার্থনা করতে পারেন।
মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে হাইকোর্ট বিভাগে প্রতিকার চাওয়া যায় না। মৌলিক অধিকার নিজ দেশের নাগরিকের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য আর মানবাধিকার পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য।

এডভোকেট রবিন বলেন, মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন হলে অনুচ্ছেদ ৪৪ অনুযায়ী অনুচ্ছেদ ১০২ মোতাবেক হাইকোর্ট বিভাগে রিট দায়েরের মাধ্যমে প্রতিকার প্রার্থনা করতে পারেন। রিট নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় এটা বলা যে, রিটের সর্বপ্রথম উৎপত্তি লাভ করে ইংল্যান্ডে এবং দ্বাদশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে এটি ধীরে ধীরে বিকশিত হয়। প্রাথমিক অবস্থায় রিট ছিল রাজার বিশেষাধিকার। রাজা বা রানী ন্যায় বিচারের উৎস হিসেবে রিট জারী করতেন। চেঞ্চারী ছিল “কমন ল” কোর্টের রিট অফিস।
চেঞ্চারী আদালতে একই ধরনের মামলা বার বার দায়ের হতে থাকলে রীটের একটি সাধারন আকৃতি প্রণয়ন করা হয়।পরবর্তীতে ১৭৭৩ সনের রেগুলেটিং আ্যক্টের অধিন রাজা তৃতীয় জর্জ কর্তৃক ১৭৭৪ সনের ২৬ শে মার্চ ইস্যুকৃত রাজকীয় সনদের আওতায় কলকাতায় সুপ্রিমকোর্ট প্রতিষ্ঠা করে বিচারপতিগনকে ইংল্যান্ডের কিংগস্ বেঞ্চের এখতিয়ার প্রদান করার মাধ্যমে এ উপমহাদেশে রিটের অগ্রযাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন পরিক্রমায় রিট আমাদের সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত হয়। উল্লেখ্য পৃথিবীতে “কমন ল” ভূক্ত দেশের রিট প্রক্রিয়া একই ধরনের।

রিট অর্থ লিখিত আদেশ বা Written documents যা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিগন প্রদান করতে পারেন। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০২ এ প্রদত্ত অধিকার বলে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়। অনুচ্ছেদ ১০২ (১) এ কোন সংক্ষুদ্ধ ব্যাক্তির আবেদনক্রমে এই সংবিধানের তৃতীয় ভাগের দ্বারা অর্পিত অধিকারসমূহের যে কোন একটি বলবৎ করিবার জন্য প্রজাতন্ত্রের বিষয়াবলীর সহিত সম্পর্কিত কোন দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তিসহ যে কোন ব্যাক্তি বা কর্তপক্ষকে হাইকোর্ট বিভাগ উপযুক্ত নির্দেশাবলী বা আদেশাবলী দান করিতে পারিবেন। (২) হাইকোর্ট বিভাগের নিকট যদি সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয় যে,আইনের দ্বারা কোন সমফলপ্রদ বিধান করা হয় নাই,তাহা হইলে
(ক) যে কোন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদনক্রমে-(অ) প্রজাতন্ত্র বা কোন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বিষয়াবলীর সহিত সংশ্লিষ্ট যে কোন দায়িত্ব পালনে রত ব্যাক্তিকে আইনের দ্বারা অনুমোদিত নয়,এমন কোন কার্য করা হইতে বিরত রাখিবার জন্য কিংবা আইনের দ্বারা তাঁহার করণীয় কার্য করিবার জন্য নির্দেশ প্রদান করিয়া,অথবা
(আ) প্রজাতন্ত্র বা কোন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বিষয়াবলীর সহিত সংশ্লিষ্ট যে কোন দায়িত্ব পালনে রত ব্যাক্তির কৃত কোন কার্য বা গৃহীত কোন কার্যধারা আইনসংগত কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে করা হইয়াছে বা গৃহীত হইয়াছে ও তাঁহার কোন আইনগত কার্যকারিতা নাই বলিয়া ঘোষণা করিয়া উক্ত বিভাগ আদেশদান করিতে পারিবেন, অথবা (খ) যে কোন ব্যাক্তির আবেদনক্রমে – (অ) আইনগত কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে বা বেআইনি উপায়ে কোন ব্যাক্তিকে প্রহরায় আটক রাখা হয় নাই বলিয়া যাহাতে উক্ত বিভাগের নিকট সন্তোষজনক প্রতীয়মান হইতে পারে,সেইজন্য প্রহরায় আটক উক্ত ব্যাক্তিকে উক্ত বিভাগের সম্মুখে আনয়নের নির্দেশ প্রদান করিয়া,অথবা (আ) কোন সরকারী পদে আসীন বা আসীন বলিয়া বিবেচিত কোন ব্যাক্তিকে তিনি কোন কর্তৃত্ববলে অনুরূপ পদমর্যাদা অধিষ্ঠানের দাবী করিতেছেন,তাহা প্রদর্শনের নির্দেশ প্রদান করিয়া
উক্ত বিভাগ আদেশদান করিতে পারিবেন”। এ অনুচ্ছেদ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, বাংলাদেশ সংবিধানের তয় ভাগে বর্নিত মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ভিন্ন কোন উপায় না থাকিলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি রীট দায়েরের মাধ্যমে প্রতিকার প্রার্থনা করতে পরেন।রীট সাধারনত ৫ প্রকার এবং প্রজাতন্ত্রের বিষয়াবলীর সহিত সম্পর্কিত দায়িত্ব পালনকারী কোন ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দায়ের করা যায় কোন প্রাইভেট ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়। (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া)

১০২(২) (ক)(অ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্ট সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তি বা ব্যক্তিগনকে কোন কাজ করার জন্য নির্দেশ প্রদানকে “Writ of mandamus” ( আদেশ মূলক রীট) বলা হয় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিগন কর্তৃক বে আইনী ভাবে কোন কাজ না করার নির্দেশকে প্রদানকে Writ of Prohibition (নিষেধাজ্ঞা মূলক) রিট বলা হয়। ১০২(২) (ক)(আ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তি বা ব্যক্তিগনের বে আইনী ভাবে কৃত কোন কাজের আইনগত কার্যকারিতা নাই মর্মে ঘোষনা করাকে “Writ of certiorari (উৎপ্রেষনামূলক রীট) বলা হয়। ১০২(২) (খ)(অ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ বেআইনীভাবে কোন ব্যক্তিকে আটক রাখা হয় নাই তা নিশ্চিত হওয়ার লক্ষ্যে আটক ব্যক্তিকে হাইকোর্ট বিভাগে হাজির হওয়ার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণকে নির্দেশ প্রদান করাকে “Writ of Habeas Corpus (বন্দী হাজির রিট) বলা হয়। ১০২(২) (খ)(আ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক কোন ব্যক্তি (সরকারীও সায়ত্ত শাসিত প্রতিষ্ঠানের) কোন্ ক্ষমতা বলে বা কর্তৃত্ত বলে অনুরূপ পদে বহাল আছে তা প্রর্দশনের নির্দেশ প্রদানকে “Writ of Quo-Warranto”(কারণ দর্শাও রীট) বলা হয়।

Writ of mandamus, Writ of Prohibition, Writ of certiorari শুধু মাত্র সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি দায়ের করতে পারে (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া)। অন্যদিকে Writ of Habeas Corpus, Writ of Quo- Warranto যে কোন ব্যক্তি দায়ের করতে পারে।।।

এসএস//

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

সাংবিধানিক অধিকার, মৌলিক অধিকার ও রিট : এডভোকেট জে, আর খাঁন (রবিন)

Update Time : ০৬:১৯:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর ২০২০

দিদারুল আলম : সুপ্রিমকোর্টের তরুণ মেধাবী আইনজীবী মোঃ জে. আর. খাঁন (রবিন)।

সারাদেশ.নেট এর সঙ্গে “সাংবিধানিক অধিকার, মৌলিক অধিকার ও রিট নিয়ে” কথা বলেছেন।

এডভোকেট রবিন বলেন, সংবিধান একটি দেশের মেরুদন্ড হিসেবে কাজ করে। সংবিধান হচ্ছে সেসব মৌলিক নিয়ম কানুন এবং প্রথার সমষ্টি যা কোনো রাষ্ট্রের সরকারের বিভিন্ন বিভাগ অর্থাৎ আইন বিভাগ,শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ করে। শাসকের ক্ষমতা বর্ণনা করে, শাসিতের মৌলিক অধিকার বর্ননা করে, শাসক ও শাসিতের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ করে। শাসক তাঁর ক্ষমতার গণ্ডি লঙ্ঘন করে শাসিতের অধিকারে হস্তক্ষেপ করলে তার প্রতিবিধানের জন্য বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা করে।

এডভোকেট রবিন বলেন, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির ভূখণ্ড এক সময় পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত ছিল।পরবর্তীতে বিভিন্ন যৌক্তিক কারণে, দীর্ঘ ৯ মাসের এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। ১৯৭২ সনের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হয় এবং এ সংবিধান ১৯৭২ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে বলবৎ হয়। বাংলাদেশ সংবিধানের নাম “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান”। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের সংবিধান রয়েছে। তবে আমাদের সংবিধান লিখিত এবং সংসদীয় গনতান্ত্রীক সরকারের রুপরেখা বা কাঠামোসহ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি, জনগনের মৌলিক অধিকার সমুহ, রাস্ট্রের নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা, বিচার বিভাগের কার্যপরিধি সহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহের নিয়ামক বিধানাবলী।

এডভোকেট রবিন বলেন, বাংলাদেশ সংবিধানে ১৫৩ টি অনুচ্ছেদ রয়েছে, তন্মধ্যে “অনুচ্ছেদ ৭(১) অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগন; এবং জনগনের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে।।
অনুচ্ছেদ ৭(২) অনুযায়ী জনগনের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরুপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি এ সংবিধানের সহিত অসমঞ্জস হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ন, ততখানি বাতিল হইবে”

সারাদেশ.নেট : সংবিধান, সাংবিধানিক আইন, সাংবিধানিক অধিকার, মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার কি এবং কোন অধিকার কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায় ?

এডভোকেট রবিন বলেন, সংবিধান হল দেশ পরিচালনার জন্য সরকার কর্তৃক একটি লিখিত দলিল, অন্যদিকে সাংবিধানিক আইন হলো দেশের সুশাসনের মূল নীতি ও পদ্ধতি। জনগনের মৌলিক অধিকার সংবিধান দ্বারা সুরক্ষিত ও নিশ্চিত, যা আইন প্রনেতাগন কোন রকম সংশোধন, পরিবর্তন বা বাতিল করতে পারেন না এবং সাংবিধানিক অধিকার সাধারণ আইন দ্বারা রক্ষিত এবং আইন প্রনেতাগণ এটিকে সংশোধন,পরিবর্তন বা বাতিল করতে পারেন। কারো মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন হলে সংক্ষুব্ধ ব্যাক্তি হাইকোর্ট বিভাগে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করতে পারেন।অন্যদিকে সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুন্ন হলে সাধারন আদালতে প্রতিকার প্রার্থনা করতে পারেন।
মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে হাইকোর্ট বিভাগে প্রতিকার চাওয়া যায় না। মৌলিক অধিকার নিজ দেশের নাগরিকের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য আর মানবাধিকার পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য।

এডভোকেট রবিন বলেন, মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন হলে অনুচ্ছেদ ৪৪ অনুযায়ী অনুচ্ছেদ ১০২ মোতাবেক হাইকোর্ট বিভাগে রিট দায়েরের মাধ্যমে প্রতিকার প্রার্থনা করতে পারেন। রিট নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় এটা বলা যে, রিটের সর্বপ্রথম উৎপত্তি লাভ করে ইংল্যান্ডে এবং দ্বাদশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে এটি ধীরে ধীরে বিকশিত হয়। প্রাথমিক অবস্থায় রিট ছিল রাজার বিশেষাধিকার। রাজা বা রানী ন্যায় বিচারের উৎস হিসেবে রিট জারী করতেন। চেঞ্চারী ছিল “কমন ল” কোর্টের রিট অফিস।
চেঞ্চারী আদালতে একই ধরনের মামলা বার বার দায়ের হতে থাকলে রীটের একটি সাধারন আকৃতি প্রণয়ন করা হয়।পরবর্তীতে ১৭৭৩ সনের রেগুলেটিং আ্যক্টের অধিন রাজা তৃতীয় জর্জ কর্তৃক ১৭৭৪ সনের ২৬ শে মার্চ ইস্যুকৃত রাজকীয় সনদের আওতায় কলকাতায় সুপ্রিমকোর্ট প্রতিষ্ঠা করে বিচারপতিগনকে ইংল্যান্ডের কিংগস্ বেঞ্চের এখতিয়ার প্রদান করার মাধ্যমে এ উপমহাদেশে রিটের অগ্রযাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন পরিক্রমায় রিট আমাদের সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত হয়। উল্লেখ্য পৃথিবীতে “কমন ল” ভূক্ত দেশের রিট প্রক্রিয়া একই ধরনের।

রিট অর্থ লিখিত আদেশ বা Written documents যা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিগন প্রদান করতে পারেন। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০২ এ প্রদত্ত অধিকার বলে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়। অনুচ্ছেদ ১০২ (১) এ কোন সংক্ষুদ্ধ ব্যাক্তির আবেদনক্রমে এই সংবিধানের তৃতীয় ভাগের দ্বারা অর্পিত অধিকারসমূহের যে কোন একটি বলবৎ করিবার জন্য প্রজাতন্ত্রের বিষয়াবলীর সহিত সম্পর্কিত কোন দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তিসহ যে কোন ব্যাক্তি বা কর্তপক্ষকে হাইকোর্ট বিভাগ উপযুক্ত নির্দেশাবলী বা আদেশাবলী দান করিতে পারিবেন। (২) হাইকোর্ট বিভাগের নিকট যদি সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয় যে,আইনের দ্বারা কোন সমফলপ্রদ বিধান করা হয় নাই,তাহা হইলে
(ক) যে কোন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদনক্রমে-(অ) প্রজাতন্ত্র বা কোন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বিষয়াবলীর সহিত সংশ্লিষ্ট যে কোন দায়িত্ব পালনে রত ব্যাক্তিকে আইনের দ্বারা অনুমোদিত নয়,এমন কোন কার্য করা হইতে বিরত রাখিবার জন্য কিংবা আইনের দ্বারা তাঁহার করণীয় কার্য করিবার জন্য নির্দেশ প্রদান করিয়া,অথবা
(আ) প্রজাতন্ত্র বা কোন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বিষয়াবলীর সহিত সংশ্লিষ্ট যে কোন দায়িত্ব পালনে রত ব্যাক্তির কৃত কোন কার্য বা গৃহীত কোন কার্যধারা আইনসংগত কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে করা হইয়াছে বা গৃহীত হইয়াছে ও তাঁহার কোন আইনগত কার্যকারিতা নাই বলিয়া ঘোষণা করিয়া উক্ত বিভাগ আদেশদান করিতে পারিবেন, অথবা (খ) যে কোন ব্যাক্তির আবেদনক্রমে – (অ) আইনগত কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে বা বেআইনি উপায়ে কোন ব্যাক্তিকে প্রহরায় আটক রাখা হয় নাই বলিয়া যাহাতে উক্ত বিভাগের নিকট সন্তোষজনক প্রতীয়মান হইতে পারে,সেইজন্য প্রহরায় আটক উক্ত ব্যাক্তিকে উক্ত বিভাগের সম্মুখে আনয়নের নির্দেশ প্রদান করিয়া,অথবা (আ) কোন সরকারী পদে আসীন বা আসীন বলিয়া বিবেচিত কোন ব্যাক্তিকে তিনি কোন কর্তৃত্ববলে অনুরূপ পদমর্যাদা অধিষ্ঠানের দাবী করিতেছেন,তাহা প্রদর্শনের নির্দেশ প্রদান করিয়া
উক্ত বিভাগ আদেশদান করিতে পারিবেন”। এ অনুচ্ছেদ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, বাংলাদেশ সংবিধানের তয় ভাগে বর্নিত মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ভিন্ন কোন উপায় না থাকিলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি রীট দায়েরের মাধ্যমে প্রতিকার প্রার্থনা করতে পরেন।রীট সাধারনত ৫ প্রকার এবং প্রজাতন্ত্রের বিষয়াবলীর সহিত সম্পর্কিত দায়িত্ব পালনকারী কোন ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দায়ের করা যায় কোন প্রাইভেট ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়। (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া)

১০২(২) (ক)(অ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্ট সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তি বা ব্যক্তিগনকে কোন কাজ করার জন্য নির্দেশ প্রদানকে “Writ of mandamus” ( আদেশ মূলক রীট) বলা হয় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিগন কর্তৃক বে আইনী ভাবে কোন কাজ না করার নির্দেশকে প্রদানকে Writ of Prohibition (নিষেধাজ্ঞা মূলক) রিট বলা হয়। ১০২(২) (ক)(আ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তি বা ব্যক্তিগনের বে আইনী ভাবে কৃত কোন কাজের আইনগত কার্যকারিতা নাই মর্মে ঘোষনা করাকে “Writ of certiorari (উৎপ্রেষনামূলক রীট) বলা হয়। ১০২(২) (খ)(অ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ বেআইনীভাবে কোন ব্যক্তিকে আটক রাখা হয় নাই তা নিশ্চিত হওয়ার লক্ষ্যে আটক ব্যক্তিকে হাইকোর্ট বিভাগে হাজির হওয়ার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণকে নির্দেশ প্রদান করাকে “Writ of Habeas Corpus (বন্দী হাজির রিট) বলা হয়। ১০২(২) (খ)(আ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক কোন ব্যক্তি (সরকারীও সায়ত্ত শাসিত প্রতিষ্ঠানের) কোন্ ক্ষমতা বলে বা কর্তৃত্ত বলে অনুরূপ পদে বহাল আছে তা প্রর্দশনের নির্দেশ প্রদানকে “Writ of Quo-Warranto”(কারণ দর্শাও রীট) বলা হয়।

Writ of mandamus, Writ of Prohibition, Writ of certiorari শুধু মাত্র সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি দায়ের করতে পারে (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া)। অন্যদিকে Writ of Habeas Corpus, Writ of Quo- Warranto যে কোন ব্যক্তি দায়ের করতে পারে।।।

এসএস//