দিদারুল আলম দিদার: সাহিত্যের মাঝে আমরা যে বিষয়টা খুঁজি তা হলো রসাস্বাদন, জীবনবোধ ও জীবন চিত্র।
তবে রসদান করাই সাহিত্য ও সাহিত্যিকের উদ্দেশ্য। নদী যেমন চলতে চলতে প্রসারিত হতে হয়, তেমনি সাহিত্যও চলতে চলতে একজনের মনের মাধুরী মিশ্রিত রস-বাণী বিশ্বময় ব্যাপ্তি লাভ করে।
সাহিত্য হলো অন্তরের, জীবন ও জীবনের গভীরের গোপন কথা। মুখের ভাষায় যা প্রকাশ করা যায় না, তা-ই প্রকাশ করতে হয় ছবির মাধ্যমে, সাহিত্যে কথা-মালায়। আর অঙ্কিত ছবি মূলত সাহিত্য, যা সবার জন্য সৃষ্টি হয়।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘সাহিত্য’ গ্রন্থে বলেছেন, “অন্তরের জিনিসকে বাইরের, ভাবের জিনিসকে ভাষায়, নিজের জিনিসকে বিশ্বমানবের ও ক্ষণকালের জিনিসকে চিরকালের করিয়া তোলার নামই সাহিত্য।”
মানুষও কাল্পনিক জগতের চাহিদায় ব্যাকুল থাকে। এ কাল্পনিক জগৎ যখন শিল্পসম্মতভাবে প্রকাশ পায় তখন তাই হয় সাহিত্য। কারণ মন একান্তে যা গড়ে তোলে তা তার নিজের জন্য এবং মনের কথা ভাব, রস, রূপক, অলঙ্কারর, ছন্দ ইত্যাদি আভাস-ইঙ্গিতের আশ্রয় গ্রহণ করে অন্যের মনে প্রবেশ করাই হলো সাহিত্য।
মানব হৃদয় ও মানব চরিত্রের মাঝে সাহিত্য বিচরিত। তাই নিজের আনন্দের জন্য লেখা বিষয় সাহিত্য নয়, নিজেকে প্রকাশ করার প্রবল ইচ্ছা, চারদিকের অবস্থার সাথে সংযোগ স্থাপনের ইচ্ছা, কাল্পনিক ও বাস্তব জগতের সাথে মিলবন্ধন এবং রূপ বা রসপ্রিয়তার সংস্পর্শে সাহিত্য রূপ লাভ করে।
মানুষ নিজে নিজে সম্পূর্ণ নয়। তাকে সম্পূর্ণ করে তুলতে প্রকৃতি প্রভাবিত করে থাকে। প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্ক নিগূঢ় হলেই তবে সে পূর্ণতর হয়ে উঠে।
সাহিত্যের বিষয় জ্ঞানের নয়, ভাবের। এজন্য জ্ঞানের সাহিত্যকে বিশুদ্ধ সাহিত্য হিসেবে গণ্য করা হয় না। একজন সাহিত্যিক কখনো বিচারকের আসনে আসীন হন না। তাই, সাহিত্যিকের পক্ষে সরাসরি শিক্ষাদান বা কোনো বিষয়ের ওপর মতবাদ প্রচার করা সম্ভব না।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পুতুলের নাচের ইতিকথা’ এবং ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ উপন্যাস তার অন্যতম উদাহরণ। তাই সাহিত্যিক জ্ঞানের কথা না বলে জ্ঞানের কথাকে প্রমাণ করবেন এবং ভাবের কথাকে বিশ্বময় সঞ্চার করবেন। তিনি যা বলেছেন, তা মিথ্যা এবং তিনি যা বলেছেন, তা সত্য নয় এই একই অর্থের দু’ স্বতন্ত্র ভাবের উদয় হয়। ভাবেরও দুটো স্বতন্ত্র দিক রয়েছে। তার একটা নিজের জন্য এবং অন্যটা পরের জন্য। আর শেষেরটাই হলো সাহিত্য। বিশ্বপ্রকৃতি তথা মানবজীবন সাহিত্যের প্রাণস্বরুপ।
সাহিত্য শিল্পের একটি অংশ বলে বিবেচিত হয়, অথবা এমন কোনো লেখনী, যেখানে শিল্পের বা বুদ্ধিমত্তার আঁচ পাওয়া যায়, অথবা যা বিশেষ কোনো প্রকারে সাধারণ লেখনী থেকে আলাদা৷ মোটকথা, ইন্দ্রিয় দ্বারা জাগতিক বা মহাজাগতিক চিন্তা চেতনা, অনুভূতি, সৌন্দর্য ও শিল্পের লিখিত বা লেখকের বাস্তব জীবনের অনুভূতি হচ্ছে সাহিত্য।
ধরন অনুযায়ী সাহিত্যকে কল্পকাহিনি বা বাস্তব কাহিনি কিংবা পদ্য, গদ্য এই দুইভাগে ভাগ করা যায়। পদ্যের মধ্যে ছড়া, কবিতা ইত্যাদি, গদ্যের মধ্যে প্রবন্ধ, নিবন্ধ, গল্প, উপন্যাস ইত্যাদি শাখা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
এছাড়াও অনেকে নাটককে আলাদা প্রধান শাখা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করেন। নাটকের মধ্যে নাটিকা, মঞ্চনাটক ইত্যাদিকে ভুক্ত করা যায়।
সাহিত্য কি- এ নিয়ে আরো বিশদভাবে আলোচনা করা যায়।
এসএস//
Leave a Reply