স্বাস্থ্য ডেস্ক: মুখ খুবই স্পর্শকাতর অংশ। তাই নিজে নিজে ওষুধ ব্যবহার করতে যাবেন না। যা করবেন তা অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।
সব চাইতে জরুরি বিষয় হল চিকিৎসার পরও মুখের ঘা যদি দু’সপ্তাহ থেকে তিন সপ্তাহ স্থায়ী হয়, তবে অবশ্যই বায়োপসি বা মাংসের টিস্যু পরীক্ষা করে দেখতে হবে। কারণ, মুখের বেশ কিছু ঘা বা সাদা ক্ষতকে বিজ্ঞানীরা প্রি-ক্যান্সার লিশন বা ক্যান্সারের পূর্বাবস্থার ক্ষত বলে থাকেন। মুখের ঘা দেখা মাত্রই তা প্রতিরোধে দাঁত ও মুখের যত্নশীল হওয়া এবং মুখের ভিতরের অংশে ‘ঘা’ হওয়া মাত্রই চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরামর্শ অনুযায়ি চিকিৎসার ব্যবস্থা নিন। মুখের ভেতরে, গালের নরম মাংসপেশিতে, জিহ্বার এক পাশে একধরনের ঘা দেখা যায়। যার নাম ‘অ্যাপথাস আলসার’। ছোট্ট একটি গোলাকার অংশ সাদাটে হয়ে ওঠে। আর ‘সাদা অংশটার মধ্যে অনেক সময় পুঁজ’ জমে থাকে। পুঁজের চারপাশে হালকা একটা সীমানা থাকে। গোলাকার বা ছোট্ট ডিম্বাকৃতির অংশে যা হয়।
কারণ : ঘা হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায়নি। তবু মনে করা হয়, কিছু বিষয়ে এমনটা হতে পারে।
যেমন : ১.রক্তে আয়রন ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের অভাব।
২.কিছু রক্তের অসুখ।
৩.অ্যালার্জিজনিত সমস্যা।
৪.অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা।
৫.গালে বা ঠোঁটের মাংসপেশিতে দাঁতের ধাক্কায় কেটে যাওয়ার পর সংক্রমণ হয়ে এই ঘা হতে পারে।
৬.মাদকদ্রব্য, অ্যালকোহল গ্রহণকারীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার জন্য এই ঘা হতে পারে। তবে এটি কোনো ছোঁয়াচে অসুখ নয়।
৭.অতিরিক্ত পান, সুপারি, জর্দা থেকে মুখের ভেতরে চামড়া উঠে, মাড়ি বা মুখের নরম মাংসপেশি ক্ষয় হয়েও এই সমস্যা হয়।
৮.ক্রোমোজোমের সমস্যাজনিত কারণে কিছু কিছু ক্যানসার রোগীর মুখে এই ঘা হয়।
৯.দাঁতের গোড়ায় সংক্রমণ, আবার অনেকের গর্ভাবস্থায়ও বারবার এই সমস্যা হয়।
১০. অপুষ্টি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়া, দুর্বল স্বাস্থ্য, কিছু নির্দিষ্ট খাবারের কারণেও হয়ে থাকে।
উপসর্গ :
১.অ্যাপথাস আলসারের চারপাশে ব্যথা, জ্বালা, পোড়া, হালকা চুলকানোর (যদি পুঁজ জমে যায়) সমস্যা থাকে।
২.অনেক সময় মুখের একাধিক জায়গায় এই ঘা হয়। তখন খাবার গিলতে, কথা বলতে বা মুখ হাঁ করতেও কষ্ট হতে পারে।
৩.অনেকের এই ঘা থেকে খুব বেশি জ্বালাপোড়ার জন্য একটু লালা ঝরতে পারে।
করণীয় :
১. মুখের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। পান, সুপারি, জর্দা, গুল, তামাক পাতা, মাদক, অ্যালকোহল, অতিরিক্ত চা, কফি বর্জন করা।
২.আয়রন ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ট্যাবলেট খেতে হবে।
৩.পেটের কোনো অসুখ হলে তার চিকিৎসা জরুরি।
৪.পানিশূন্যতা, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও দাঁতের ক্যারিজ জাতীয় অসুখ থাকলে তার দ্রুত সমাধান জরুরি।
৫.মাউথওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে হবে।
৬.এক কাপ গরম পানিতে এক চিমটি লবণ ফেলে কুলকুচি ও গার্গল করুন। এতে ঘা হওয়া জায়গাটি তাড়াতাড়ি সেরে উঠবে। খাওয়ার আগে কুলকুচি করলে বেশি ফল পাবেন।
৭.প্রথমে গরম পানি গার্গল করে সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডা পানিতে গার্গল করতে পারেন। এই টোটকা কাজে দেবে। কয়েকবার পাল্টে পাল্টে করলে উপকার পাবেন।
৮. মুখে আঘাতের বিষয়ে সাবধানে থাকবেন। দাঁত ব্রাশের সময় সতর্ক থাকবেন। দাঁত আঁকাবাঁকা থাকলে সেটার চিকিৎসা করান।
৯. এ সমস্যা রোধের জন্য পরিমিত খাবার, ঘুম, মানসিকভাবে চাঙা থাকার চেষ্টা করতে হবে।
১০.স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া খুব জরুরি। যেমন, ফল, শাকসবজি, দুধ, মাছ এবং চর্বি ছাড়া মাংস। এসব খাবারে প্রচুর পরিমাণ জিঙ্ক, ভিটামিন ও আয়রন থাকায় মুখের ঘা সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সঙ্গে নিয়মিত মাউথ ওয়াশ ব্যবহারের অভ্যাস করুন।
যাঁদের ডায়াবেটিস বা হৃদরোগ আছে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং দীর্ঘদিন নানাহ ওষুধ খাচ্ছেন, তাঁদের মুখেও এক ধরনের জীবাণু বাড়তে থাকে। যাঁদের ধূমপান এবং জর্দা দিয়ে পান ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে তাদের মধ্যে মুখের ঘা খুব বেশি হয় এবং সেই সঙ্গে মুখে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। বিশেষত যাঁরা পানের সঙ্গে জর্দা খান এবং অনেকবার পান খান তাদের মুখের ঘা বেশি থাকে। সাধারণ ক্ষেত্রে আয়রন বা ভিটামিন বি-১২-এর অভাবেই এ সমস্যা বেশি হয়।
পরামর্শ: অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ- নিতে হবে।
ডা: সৈয়দা ফারজানা আফরিন
ওর্যাল এন্ড ডেন্টাল সার্জন
বিডিএস (ডিইউ),পিজিটি (ডেন্টিষ্ট্রি)
(শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল)
স্বত্ত্বাধিকারী: আফরিন ডেন্টাল কেয়ার,
রোড: ৫, ব্লক: বি , বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা।
যোগাযোগ: ০১৭১৬৮১০৫৫১
Leave a Reply