সারাদেশ ডেস্ক : বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়ার কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করছে সরকার।
করোনাভাইরাসের টিকা নিতে হলে এই অ্যাপে নিজেদের তথ্য দিয়ে তালিকাভুক্ত করতে হবে। সেখান থেকে সরকার টিকা গ্রহীতার সম্পর্কে যেমন সব তথ্য পাবেন, তেমনি যারা টিকা নেবেন, তারাও পরবর্তী আপডেট সম্পর্কে জানতে পারবেন।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস বিভাগের লাইন ডিরেক্টর ডা. হাবিবুর রহমান বলছেন, মোবাইল ফোনে অ্যাপটি ডাউনলোড করে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজে থেকেই রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। অ্যাপটা সবার জন্যই উন্মুক্ত থাকবে। যারা টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন, তাদেরও রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
কীভাবে নিবন্ধন হবে?
স্মার্ট মোবাইল ফোনে ডাউনলোডের পর ফোন নম্বর ও এনআইডি নম্বর দিয়ে ব্যবহারকারীরা অ্যাপে নিজেরা নিবন্ধন করবেন। অ্যাপে নিবন্ধন করার সময় নাম, জন্মতারিখ, এনআইডি নম্বর, অন্য কোন শারীরিক জটিলতা আছে কিনা, পেশা ইত্যাদি বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে।
তবে কারা আগে টিকা পাবেন, সেই অগ্রাধিকারের তালিকাটি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন থেকেও সংগ্রহ করা হবে।
প্রত্যেক ব্যক্তি করোনাভাইরাসের দুটি করে ডোজ পাবেন। তাদের প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের বিস্তারিতও অ্যাপের মাধ্যমে জানা যাবে। প্রতিবেশী ভারতেও টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয়ভাবে এরকম একটি অ্যাপের ব্যবহার করা হচ্ছে।
কারা আগে টিকা পাবেন
ডা. হাবিবুর রহমান বলছেন, প্রথমে আমরা যে তিন কোটি টিকা পাব, তাতে দেড় কোটি মানুষকে দুটি করে টিকার ডোজ দেয়া যাবে। প্রতি মাসে আমরা ২৫ লাখ মানুষকে টিকা দেব। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে যারা সামনের সারিতে কাজ করেন, তারা আগে টিকা পাবেন। যেমন স্বাস্থ্য বিভাগ, পুলিশ বিভাগ, প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ষাট বছরের বয়স যাদের বেশি, নানারকম জটিলতা যাদের রয়েছে, তারা আগে টিকা পাবেন।
প্রতি মাসে সরকারের তরফ থেকে জানিয়ে দেয়া হবে যে, কোন মাসে কাদের বা কোন শ্রেণী পেশার মানুষ টিকা পাবেন। সেই অনুযায়ী তারা মোবাইল অ্যাপে নিজেদের নিবন্ধন করবেন।
তখন সরকার একটি তালিকা পাবে। সেই তালিকা অনুযায়ী কবে কখন কাকে টিকা দেয়া হবে, কোথায় কোন সময় তারা টিকা পাবেন, সেটা ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে। সেই অনুযায়ী নির্ধারিত কেন্দ্রে হাজির হয়ে তারা টিকা নেবেন।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যাদের প্রযুক্তিগত দুর্বলতা রয়েছে, তাদের সহায়তা করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ ও জনপ্রতিনিধিদেরও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হতে পারে।
কোথায় পাওয়া যাবে অ্যাপ
অ্যান্ড্রয়েড ও অ্যাপল -উভয় স্টোরেই এই অ্যাপটি পাওয়া যাবে। স্মার্ট ফোনে অ্যাপটি ডাউনলোড করে নিতে বে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ-টু-আই ও তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ এই অ্যাপটি তৈরির কাজ শেষ করে এনেছে। এখন চলছে, শেষ মুহূর্তের মডিফিকেশন বা রূপান্তরের কাজ।
কীভাবে টিকা দেয়া হবে?
বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় জাতীয়ভাবে টিকাদানের খসড়া পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সেটি অনুযায়ী সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকাদের অগ্রাধিকার দিয়ে ভ্যাকসিন বণ্টন করা হবে। সেক্ষেত্রে প্রথমেই রয়েছে কোভিড-১৯ রোগীদের সেবায় সরাসরি নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মী, সম্মুখ সারিতে থাকা কর্মী এবং রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল যেসব রোগী তারা। দ্বিতীয় ধাপে থাকবে বয়স্ক, স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে এমন বয়স্ক মানুষ, শিক্ষাকর্মী, জনপরিবহনের কর্মীরা।
তিন পর্যায়ে মোট পাঁচটি ধাপে ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজারের বেশি মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হবে। যার মধ্যে প্রথম পর্যায়ের প্রথম ধাপে তিন শতাংশ বা ৫১ লাখ ৮৪ হাজার ২৮২ জনকে টিকা দেয়া হবে। দ্বিতীয় ধাপে সাত শতাংশ বা এক কোটি ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৭ জনকে টিকা দেয়া হবে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে একটি ধাপে ১১-২০ শতাংশ বা এক কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজারের বেশি মানুষ ভ্যাকসিন পাবেন।
তৃতীয় ও সর্বশেষ পর্যায়ে মোট দুটি ধাপে ভ্যাকসিন দেয়া হবে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ২১-৪০ শতাংশ বা তিন কোটি ৪৫ লাখ ৬১ হাজারের বেশি এবং দ্বিতীয় ধাপে ৪১-৮০ শতাংশ বা ছয় কোটি ৯১ লাখ ২৩ হাজার মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হবে।
টিকা দেয়ার কার্যক্রম শুরুর অন্তত দু’সপ্তাহ আগে অ্যাপটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার পরিকল্পনা করছেন কর্মকর্তারা।
এসএস//
Leave a Reply