মো:ফয়সাল উদ্দিন-সোহাগ শরীফ : মহামারি করোনা জনিত পরিস্থিতির কারণে চির চেনা বিশ্বের সকল সেক্টরেই নেতীবাচক প্রভাব পরেছে। চীনের উহান প্রদেশে গত বছরের ডিসেম্বরে করোনা ভাইরাস তথা কোভেড-১৯ ধরা পরে। পরে এ ভাইরাস বিশ্বব্যাপি মহামারি আকারে ছড়িয়ে পরে। এরই মধ্যে বিশ্বে সাড়ে ১২ লাখ লোক এ ভাইরাস সংক্রমণে প্রাণ হারিয়েছে। কয়েক কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। প্রতি মুহূর্তেই এ হার আরো বাড়ছে।
আমাদের দেশেও এ ভাইরাসে এরই মধ্যে ৬ হাজারেরও বেশী লোকের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে কয়েক লাখ । এখন আসন্ন শীতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশংকা রয়েছে।
এর প্রভাবে সারাবিশ্বে যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা স্থবির। বিভিন্ন সেকটেরই নেতীবাচক প্রভাব বিদ্যমান। আমাদের দেশে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকসহ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এখনো বন্ধ রয়েছে। যদিও ভার্চুয়ালি বা অনলাইনে কিছু ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা চলছে। তা কার্যকরেও রয়েছে প্রয়োজনীয় লজিষ্টিক সাপোর্টের সীমাবদ্ধতা।
গত ১৬ মার্চ থেকে বাংলাদেশের সবধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার মধ্যে রাখতে ও সিলেবাস সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ও ইউজিসি প্রাথমিক স্তরে টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে ও উচ্চশিক্ষায় অনলাইনে শিক্ষাদান কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু গতানুগতিক শিক্ষা থেকে দূরে থেকে নতুন শিক্ষাধারায় কতটুকু উপকৃত হচ্ছে এবং এটি কতোটা ফলপ্রসূ হচ্ছে, তা নিয়ে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। কারণ দুর্বল নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা ও বাংলাদেশে অনলাইন ক্লাস বিষয়টি শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের কাছে নতুন বিষয়। মহামারি করোনাকালে শিক্ষাব্যবস্থা যেনো মুখ থুবড়ে না পরে, সেজন্যই অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠাভ্যাস ধরে রাখার এ প্রচেষ্টা।
বাংলাদেশে প্রায় ৪০ মিলিয়ন শিক্ষার্থী রয়েছে, যার মধ্যে ১৭.৩৩ মিলিয়ন প্রাথমিক, ১৫.৮৬ মিলিয়ন মাধ্যমিক আর ৩.১৫ মিলিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থী, যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ। প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় কলেজ এবং সরকারি–বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসে যুক্ত করা বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ। কেননা, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে তথ্যপ্রযুক্তির বিস্তার সকলের মাঝে সমানভাবে হয়নি। অনলাইন ক্লাসের অন্যতম সমস্যা হলো ডিভাইস সমস্যা। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই এসেছে মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রান্তিক পর্যায়ের অনেক পরিবারের কাছে টিভি সেট নেই। ফলে টিভি চ্যানেলের শিক্ষাদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সিংহভাগ শিক্ষার্থী। এছাড়াও উচ্চস্তরের শিক্ষার্থীরাও ক্লাসের আওতায় আসতে পারছে না ল্যাপটপ বা স্মার্টফোন না থাকায়। যদিও ঋণ প্রদানের মাধ্যমে ডিভাইস কেনার প্রশ্নটি সামনে এসেছে। তবুও উপলব্ধির বিষয় এই যে তাদের উপর ঋণ পরিশোধের বিষয়টি থেকেই যাচ্ছে। একারণে অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছে না। আশানুরূপ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে উপস্থিত হচ্ছে না-তার মূল কারণ নেটসংযোগ না পাওয়া। দুর্বল নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থার কারণে অনেক শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত হতে পারছে না। যদিও বা কেউ কেউ উপস্থিত হচ্ছে কিনতু অনেকেই শিক্ষকের কথা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারে না। ফলে শিক্ষার মাঝে অসম্পূর্ণতা থেকেই যাচ্ছে। এছাড়াও ডেটা প্যাকের মূল্য ও এর মেয়াদের সমস্যা তো রয়েছেই। অর্থাৎ অনলাইন পাঠদান যে আশানুরূপ ফলপ্রসূ হচ্ছে না, তা বলাই বাহুল্য। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা মানসিক হতাশা ও উদ্বিগ্নতায় ভুগছে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সম্মান শেষবর্ষ ও মাষ্টার্সের শিক্ষার্থীরা হতাশায় ভুগছে বেশি। কারণ করোনা মহামারি না থাকলে এতোদিনে তাদের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্ব শেষ হয়ে যেতো। একাডেমিক পর্ব শেষ না হওয়ায় ও সার্টিফিকেট না থাকায় এ পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা চাকরির জন্য আবেদন করতে পারছে না। যাপিত জীবনে আর্থিকভাবে অসচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা ছেড়ে সংসারের হাল ধরছে। ইতোমধ্যে এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাদের পরীক্ষা না নিয়ে শতভাগ পাশ দেয়া হয়েছে। এটাকে অনেকে কারোনা ‘পাস’ বলে অভিহিত করছেন। এ সিদ্ধান্তটি ভালো না মন্দ হয়েছে, তা ভবিষ্যতে বলা যাবে।
কিন্তু স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এখনো পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। তাদের ব্যাপারে কবে কী ধরনের সিদ্ধান্ত আসবে. তাও জানা নেই। ফলে এই পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই মানসিক উৎকণ্ঠা, অনিশ্চয়তার কারণে পড়াশোনা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে এবং নিচ্ছেন। তাই শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন নিশ্চয়তার লক্ষ্যে দ্রুত সিদ্ধান্তে আসা জরুরি।
এসএস//
Leave a Reply