নিজস্ব প্রতিবেদক:
কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন পালিয়া যাওয়া শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের অন্যতম সহযোগী ২৭তম বিসিএস ব্যাচের পুলিশ কর্মকর্তা নাজির আহমেদ খান।
তার বাড়ি ফরিদপুর জেলার আলফাডাংগায়। বর্তমানে তিনি গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (লজিস্টিকস) হিসেবে কর্মরত আছেন।
এর আগে ২০১৩ সালের পর থেকে তিনি বগুড়ার সিনিয়র এএসপি, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সিনিয়র এসি, লালবাগের এডিসি, প্রকিউরমেন্ট এন্ড ওয়ার্কশপের এডিসি-ডিসি, ওয়ারি ট্রাফিকের ডিসি, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশে ডিসি (ডিবি) এবং ডিসি (নর্থ) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
নাজির আহমেদ ১৯৯৫-২০০১ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের দুর্দান্ত ক্যাডার ছিলেন, ঐ সময়ে কথায় কথায় তিনি সাধারণ ছাত্রদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালাতেন। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ক্যাম্পাস ছেড়ে পালিয়ে যান তিনি। পরবর্তীতে সরকার পরিবর্তন হলে ২৭তম বিসিএসে ২য় বারের রেজাল্টে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় পুলিশ ক্যাডারে যোগদান করেন বলে সূত্র জানায়।
এলাকায় জনশ্রুতি আছে তার বাবা আব্দুল গফুর খান কোনদিন মুক্তিযুদ্ধই করেননি। তার পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। আওয়ামী স্বৈরশাসনের অন্যতম কারিগর, আলফাডাঙ্গার কুখ্যাত সন্তান ডিএমপির সাবেক কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়ার ক্যাশিয়ার ও পারিবারিক আত্মীয়। আওয়ামী লীগের আমলে মুক্তিযোদ্ধার ভূয়া তালিকা সর্বজনবিদিত। দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এ তালিকা করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালের বগুড়া সিনিয়র এসপি অবস্থায় ভোটারবিহীন নির্বাচনকে ঠেকাতে বিরোধী দলের কার্যক্রমকে নস্যাৎ করার অন্যতম কারিগর ছিলেন নাজির আহমেদ। এরপর ২০১৮ সালে ঢাকার লালবাগ এলাকায় নিশি ভোটের মূল সমন্বয়ক, লালবাগ ও সূত্রাপুর এলাকায় কুখ্যাত হাজী সেলিমের সকল অপকর্মের সহযোগী। ডিসি (ডিবি) হিসেবে গাজীপুরে ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনে ন্যাক্কারজনকভাবে ভূমিকা পালন তিনি।
পুরো চাকুরীজীবনে আওয়ামী লীগ বিরোধী নেতা-কর্মীদের মামলা-হামলা, নির্যাতনে অত্যন্ত আগ্রাসী ভূমিকা পালন করেছেন। মহান জুলাই বিপ্লবে নারকীয় ভূমিকা পালন করেছেন নাজির। এ সময় ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে ঠেকানোর জন্য গাজীপুরে ফ্যাসিষ্ট জাহাঙ্গীরের হাতে পুলিশের প্রায় ৩০টি অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন তিনি।
ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার গদি টিকিয়ে রাখতে এবং ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে রুখে দিতে নিজেও সরাসরি গুলি ছুঁড়েছিলেন বলে স্থানীয়রা জানায়।
পরে ছাত্র-জনতা জাহাঙ্গীরসহ এই অফিসারের উপর আক্রমণ করলে সে পালিয়ে যায়। জুলাই গণবিপ্লবে হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর অনেক দিন গা ঢাকা দিয়েছিলো আলোচিত এই পুলিশ কর্মকর্তা। তার কুমিল্লা পোষ্টিং হওয়ার কথা জানাজানি হলে সেখানে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ লক্ষ্য করা গেছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লার সমন্বয়করা বলেন,
এই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সঠিক হলে তাকে কুমিল্লায় মেনে নেয়া হবে না।
এসএম/কেকে//
Leave a Reply