Dhaka ১০:৫৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
মামলা হলেই গ্রেফতার নয়, তদন্তে দায় পাওয়া গেলে ব্যবস্থা: আইজিপি `অন্তর্ভূক্তিমূলক রাষ্ট্রকাঠামোই জাতীয়তাবাদের উপহার’-অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান বিপুল আনন্দ উৎসাহ উদ্দীপনায় দেশব্যাপী বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপিত ‘জুলাই আন্দোলন নির্মূলে পরিচালিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় সহস্রাধিক লোকের সাক্ষ্য’ বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই হোক এবারের নববর্ষের অঙ্গীকার : প্রধান উপদেষ্টা সোয়াই নদীর পুনঃখনন কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে : ৫’শ মিটার কাজে বাঁধা দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিলের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ডিইউজে বেগম খালেদা জিয়াকে প্রতীকি ক্ষতিপূরণ দেয়া উচিত: সর্বোচ্চ আদালতে ব্যারিস্টার সালাউদ্দিন দোলন সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও এতিমদের নিয়ে ককক্সবাজার ভ্রমনে দূর্বার তারুণ্য ফাউন্ডেশন শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বিএফইউজে-ডিইউজে’র আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

ভুল চিকিৎসায় গ্রিন লাইফ হাসপাতালে রোগী মৃত্যু: দাবী স্বজনদের

  • Update Time : ১০:৩৫:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ জুন ২০২৩
  • / ২১ Time View

ঢাকা, ৬ জুন:
রাজধানীর গ্রিন লাইফ হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

স্বজনদের দাবি, তাদের সঙ্গে কোনো কথা না বলেই মো. জাকির হোসেনের (৫১) হার্টে রিং বসানো হয়। পরবর্তীতে তার অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকদের অবহেলায় ১৫ মার্চ মৃত্যু হয় রোগীর।

মঙ্গলবার ৬ জুন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগীরা। এসময় তারা রোগী মৃত্যুর অভিযোগ তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জাকির হোসেনের স্ত্রী নুরুন নাহার বলেন, ১২ মার্চ বুকে ব্যথা নিয়ে গ্রিন লাইফ হাসপাতালে ভর্তি হন জাকির। ভর্তির পরই তার ইসিজি করা হয়। সকালে ইসিজি রিপোর্টে তার স্বামীর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বলে জানা যায়। তবে সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাশেদুল হাসান কনক তা ধরতে পারেননি। রোগীকে তিনটি গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ দিয়ে ছাড়পত্র দেন তিনি। যেসব টেস্ট করানো প্রয়োজন ছিল সেই মুহূর্তে তা উনি করাননি, করাতেও বলেননি। এমন কি একজন কার্ডিওলজিস্টও দেখানোর পরামর্শও দেননি।

নুরুন নাহার আরও অভিযোগ করে বলেন, একই দিন সন্ধ্যায় বিআরবি হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোলজির চিকিৎসক মো. মাহবুবুল আলম প্রিন্সকে দেখালে উনি রোগীর ডায়াবেটিস ও বুকে ব্যথার বিষয়টি জেনে একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখানোর পরামর্শ দেন। পরে গ্রিন লাইফের ডা. শেখর কুমার মণ্ডলকে (ক্লিনিক্যাল ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট) দেখালে তিনি রোগীর ইসিজি ও ইকো করান। এসব পরীক্ষার ফল দেখে রোগী ঘণ্টা দেড়েকের বেশি বাঁচবে না বলে জানান তিনি। একই সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব রোগীর এনজিওগ্রাম করে হার্টে রিং পরাতে বলেন।

পুনরায় গ্রিন লাইফে ভর্তি প্রসঙ্গে নুরুন নাহার বলেন, আমরা অন্য হাসপাতালে যেতে চাইলেও আমাদের এক প্রকার ভয়-ভীতি দেখিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে গ্রিন লাইফ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। লিখিতভাবে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কথা বলা হলেও তিনি আমাদের ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে গ্রিন লাইফ হাসপাতালে আসতে বাধ্য করেন। এমনকি রোগী ভর্তি হওয়ার আগেই আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের পরামর্শ না করে বা মতামত না নিয়ে রোগীকে রিং পরানো হয়।

গ্রিন লাইফ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার অভিযোগ তুলে নুরুন নাহার বলেন, রোগীকে রিং পরানোর পর হাসপাতালে পোস্ট অপারেটিভ ম্যানেজমেন্ট করতে চরম অবহেলা ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার পরিচয় দেওয়া হয়েছে। ডায়াবেটিস রোগী জানার পরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ইনসুলিন না দিয়ে সারারাত ফেলে রাখে। রাতে রোগীর সুগার কন্ট্রোল না করাতে রোগীর কিটোন বডি পজিটিভ চলে আসে। চিকিৎসার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে সময়মতো ডায়ালাইসিস সেবা দিতে পারেনি। ফলে মাল্টিপল অর্গান বিকল হয়ে ১৫ মার্চ মারা যান জাকির হোসেন।

এ অবস্থায় কর্তব্যরত চিকিৎসক ও দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন জাকির হোসেনের পরিবার।

অধ্যাপক ডা. গোলাম আযম, ডা. শেখর কুমার মণ্ডল, ডা. রাশেদুল হাসান কনকের বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন বাতিলসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি জানায় পরিবারটি। এজন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিএমডিসিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। দায়ীদের শাস্তির দাবিতে কলাবাগান থানায় জিডি করেছে পরিবারটি।

ঘটনার দুই মাস পর গণমাধ্যমের সামনে অভিযোগ করার বিষয়ে জানতে চাইলে জাকির হোসেনের পরিবারের সদস্যরা জানান, রোগীর মৃত্যুর পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেন তারা। মৌখিক অভিযোগের সত্যতা পেয়ে সাড়ে ছয় লাখ টাকার বেশি হাসপাতালের বিল ছাড়াই ১৬ মার্চ মরদেহ হস্তান্তর করে তারা। একই সঙ্গে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানায়। তাৎক্ষণিকভাবে মৌখিক আদেশ ডা. শেখর ও কনককে বহিষ্কার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের কোথাও জানায়। তবে শেষপর্যন্ত তারা তাদের কথা না রাখায় আইনের দ্বারস্থ হয়েছে পরিবারটি।

এসটিআই/ডিএএম//

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ভুল চিকিৎসায় গ্রিন লাইফ হাসপাতালে রোগী মৃত্যু: দাবী স্বজনদের

Update Time : ১০:৩৫:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ জুন ২০২৩

ঢাকা, ৬ জুন:
রাজধানীর গ্রিন লাইফ হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

স্বজনদের দাবি, তাদের সঙ্গে কোনো কথা না বলেই মো. জাকির হোসেনের (৫১) হার্টে রিং বসানো হয়। পরবর্তীতে তার অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকদের অবহেলায় ১৫ মার্চ মৃত্যু হয় রোগীর।

মঙ্গলবার ৬ জুন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগীরা। এসময় তারা রোগী মৃত্যুর অভিযোগ তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জাকির হোসেনের স্ত্রী নুরুন নাহার বলেন, ১২ মার্চ বুকে ব্যথা নিয়ে গ্রিন লাইফ হাসপাতালে ভর্তি হন জাকির। ভর্তির পরই তার ইসিজি করা হয়। সকালে ইসিজি রিপোর্টে তার স্বামীর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বলে জানা যায়। তবে সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাশেদুল হাসান কনক তা ধরতে পারেননি। রোগীকে তিনটি গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ দিয়ে ছাড়পত্র দেন তিনি। যেসব টেস্ট করানো প্রয়োজন ছিল সেই মুহূর্তে তা উনি করাননি, করাতেও বলেননি। এমন কি একজন কার্ডিওলজিস্টও দেখানোর পরামর্শও দেননি।

নুরুন নাহার আরও অভিযোগ করে বলেন, একই দিন সন্ধ্যায় বিআরবি হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোলজির চিকিৎসক মো. মাহবুবুল আলম প্রিন্সকে দেখালে উনি রোগীর ডায়াবেটিস ও বুকে ব্যথার বিষয়টি জেনে একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখানোর পরামর্শ দেন। পরে গ্রিন লাইফের ডা. শেখর কুমার মণ্ডলকে (ক্লিনিক্যাল ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট) দেখালে তিনি রোগীর ইসিজি ও ইকো করান। এসব পরীক্ষার ফল দেখে রোগী ঘণ্টা দেড়েকের বেশি বাঁচবে না বলে জানান তিনি। একই সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব রোগীর এনজিওগ্রাম করে হার্টে রিং পরাতে বলেন।

পুনরায় গ্রিন লাইফে ভর্তি প্রসঙ্গে নুরুন নাহার বলেন, আমরা অন্য হাসপাতালে যেতে চাইলেও আমাদের এক প্রকার ভয়-ভীতি দেখিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে গ্রিন লাইফ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। লিখিতভাবে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কথা বলা হলেও তিনি আমাদের ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে গ্রিন লাইফ হাসপাতালে আসতে বাধ্য করেন। এমনকি রোগী ভর্তি হওয়ার আগেই আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের পরামর্শ না করে বা মতামত না নিয়ে রোগীকে রিং পরানো হয়।

গ্রিন লাইফ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার অভিযোগ তুলে নুরুন নাহার বলেন, রোগীকে রিং পরানোর পর হাসপাতালে পোস্ট অপারেটিভ ম্যানেজমেন্ট করতে চরম অবহেলা ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার পরিচয় দেওয়া হয়েছে। ডায়াবেটিস রোগী জানার পরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ইনসুলিন না দিয়ে সারারাত ফেলে রাখে। রাতে রোগীর সুগার কন্ট্রোল না করাতে রোগীর কিটোন বডি পজিটিভ চলে আসে। চিকিৎসার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে সময়মতো ডায়ালাইসিস সেবা দিতে পারেনি। ফলে মাল্টিপল অর্গান বিকল হয়ে ১৫ মার্চ মারা যান জাকির হোসেন।

এ অবস্থায় কর্তব্যরত চিকিৎসক ও দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন জাকির হোসেনের পরিবার।

অধ্যাপক ডা. গোলাম আযম, ডা. শেখর কুমার মণ্ডল, ডা. রাশেদুল হাসান কনকের বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন বাতিলসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি জানায় পরিবারটি। এজন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিএমডিসিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। দায়ীদের শাস্তির দাবিতে কলাবাগান থানায় জিডি করেছে পরিবারটি।

ঘটনার দুই মাস পর গণমাধ্যমের সামনে অভিযোগ করার বিষয়ে জানতে চাইলে জাকির হোসেনের পরিবারের সদস্যরা জানান, রোগীর মৃত্যুর পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেন তারা। মৌখিক অভিযোগের সত্যতা পেয়ে সাড়ে ছয় লাখ টাকার বেশি হাসপাতালের বিল ছাড়াই ১৬ মার্চ মরদেহ হস্তান্তর করে তারা। একই সঙ্গে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানায়। তাৎক্ষণিকভাবে মৌখিক আদেশ ডা. শেখর ও কনককে বহিষ্কার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের কোথাও জানায়। তবে শেষপর্যন্ত তারা তাদের কথা না রাখায় আইনের দ্বারস্থ হয়েছে পরিবারটি।

এসটিআই/ডিএএম//