সুপ্রিমকোর্ট প্রতিবদেক:
রাজধানী ধানমন্ডির ২নং রোডের প্রায় ৩০০ কোটি মূল্যের পরিত্যক্ত সম্পত্তি ২৯নং বাড়িটি সরকারের বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে তথ্য গোপন করে এই বাড়ির মালিকানা দাবি করে রিট পিটিশন দায়ের করায় সাংবাদিক আবেদ খানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
পৃথক দুটি রিট নিষ্পত্তি করে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদী সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ সোমবার এ রায় দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান। তিনি রায়ের বিষয়টি সারাদেশ’কে জানান। তিনি বলেন, জালজালিয়াতি করে এবং নানা ফাক ফোকর দিয়ে সরকারি সম্পত্তি দখলে লিপ্ত থাকে কোনো কোনো মহল। আজকের এ রায়টি সরকারের মূল্যবান ওই সম্পত্তি রক্ষায় যুগান্তকারী রায়। তিনি সরকারি সম্পদ দখলকারীদের বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশে গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানান। এতে করে আইনি ব্যবস্থায় সরকারের সম্পত্তি উদ্ধার তরান্বিত হবে।
আবেদনকারী নেহাল আহমেদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী নকিব সাইফুল্লাহ। নেহাল আহমেদের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী ড. কাজী আকতার হামিদ আদালতে শুনানিতে অংশ নেন।
ডেপুটি এটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান বলেন, ধানমন্ডি ২নং রোডের আলোচিত ২৯নং বাড়ি ১৯৭২ সালে তৎকালীন মালিক পরিত্যাগ করে চলে যাওয়ায় সরকার পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে দখল ও নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। পরে ওই সম্পত্তির উত্তরাধিকার হিসেবে মালিকানা দাবি করে তোয়াব খান, আবেদ খান ও অন্যরা প্রথম সেটেলমেন্ট কোর্টে ১৯৮৯ সালে মামলা করেন। সাক্ষ্য ও পক্ষদ্বয়ের কাগজপত্র ও সরকারি নিবন্ধক দপ্তরের নথি পর্যালোচনা করে প্রথম সেটেলমেন্ট কোর্ট বর্ণিত সম্পত্তি সরকার আইনসঙ্গতভাবেই পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে দখল ও নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে বলে রায় দেন।
তিনি জানান, এই রায় বহাল থাকা অবস্থায় এস. নেহাল আহমেদ নামে এক ব্যক্তি ১৯৮৭ সালের আবেদন দেখিয়ে প্রথম সেটেলমেন্ট কোর্টে ১৯৯৬ সালে মামলা করেন। এই মামলায় সরকারের পক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা হয়নি। প্রথম সেটেলমেন্ট কোর্ট কোনো সাক্ষী না দিলেও বা সমর্থনীয় এবং আবশ্যকীয় কাগজপত্র দাখিল করা না হলেও এস. নেহাল আহমেদ দাবিকারী ব্যক্তির পক্ষে রায় দেন। এই রায় বাস্তবায়নে এস. নেহাল আহমেদ হাইকোর্টে দুটি রিট করেন।
এই মামলাগুলোতে সরকারের পক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্বক প্রকৃত তথ্য উপাত্ত দাখিল না করায় হাইকোর্ট পুনরায় এস. নেহাল আহমেদের পক্ষে রায় দেন। রায়ের বিরুদ্ধে দেরিতে আপিল করায় আদালত আপিল তামাদি ঘোষণা করে খারিজ করে দেন।
পরে বিষয়টি সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে এলে ২০১৮ সালে প্রথম সেটেলমেন্ট কোর্টের ১৯৯৭ সালের রায় চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা হয়। রিটের শুনানি নিয়ে আদালত সরকারের পক্ষে রুল দেন। রুলের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, প্রথম সেটেলমেন্ট কোর্টের ১৯৯৭ সালের রায়টি প্রতারণামূলকভাবে ১৯৯৬ সালে তামাদির মেয়াদকে পাশ কাটানোর জন্য ১৯৮৭ সালে দায়ের দেখিয়ে লাভ করেছেন। এমন প্রতারণার কারণে ও মালিকানার স্বপক্ষে উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ না থাকায় ওই রায়টি বাতিলযোগ্য।
আদালতকে আরও বলা হয়, এস. নেহাল আহমেদ দাবিকারী ব্যক্তি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন বা বাংলাদেশে অবস্থান করেছেন এমন কোনো দালিলিক প্রমাণ দাখিল করতে পারেননি। আবার বর্তমানে দাখিল করা এস. নেহাল আহমেদ নামের জাতীয় পরিচয়পত্রে বর্ণিত নামের বানান, বাবার নামের বানান ও বয়স বর্ণিত সম্পত্তি পরিত্যাগকারী এস. নেহাল আহমেদের নামের সঙ্গে যথেষ্ট অসঙ্গতি রয়েছে। এ কারণে এস. নেহাল আহমেদের পক্ষের রায় বাতিলযোগ্য।
নেহাল আহমেদের আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, সরকারের পক্ষে ২২ বছর বিলম্বে রিট দায়ের করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, রিট পিটিশন দায়েরে কোনো সময়সীমা নেই। তবে যৌক্তিক সময়সীমার মধ্যে দায়ের করা সমীচীন।
ডেপুটি এটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল বলেন, একই সম্পত্তির বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত ও সমর্থনীয় কাগজপত্র ছাড়াই সাংবাদিক আবেদ খান তাদের বিরুদ্ধে সেটেলমেন্টের কোর্টের রায় গোপন করে ২০১৫ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। ওই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করে রিটটি করা হয়। তথ্য গোপন করে রিট করায় আদালত তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন।
নেহাল আহমেদের পক্ষে আইনজীবী ড. কাজী আকতার হামিদের জুনিয়র এডভোকেট মোহাম্মদ আবুল হাসিম বাসস’কে বলেন, আজ আদালত রায়ে বলেছেন, ওই সম্পত্তি সরকারের হেফাজতে থাকবে। এছাড়া রিটে তথ্য গোপন করায় আবেদ খানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এসএম/কেকে//
Leave a Reply