সারাদেশ ডেস্ক: রাজধানীর কমলাপুর, শাহজাহানপুর, মতিঝিল, মুগদা, পল্টন, হাতিরঝিল এবং তেজগাঁও এলাকা থেকে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতাসহ ২৯ সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩।
বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত ১৮ টি মোবাইলফোন, ৭ টি সুইচ গিয়ার, ২ টি এন্টি কাটার, ৬ টি ব্লেড, ১ টি কাঁচি, চাকু, ক্ষুর, বিষাক্ত মলমের কৌটা, স্বর্ণের চেইন এবং নগদ ৩২৪ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব জানায়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন অসংখ্য যাত্রী ও পথচারী ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকেন। ভুক্তভোগীদের বেশির ভাগই কোন আইন শৃংঙ্খলা বাহিনীর দ্বারস্থ হয় না। ফলে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের তৎপরতা দিন দিন বেপরোয়াভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের প্রায় সকলেই মাদকাসক্ত। ফলশ্রুতিতে র্যাব ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
এরই প্রেক্ষিতে র্যাব-৩ এর একটি দল বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর কমলাপুর এলাকা থেকে এক নারীর গলা থেকে স্বর্ণের চেইন ছিনতাই করে দৌড়ে পালানোর সময় পিছু ধাওয়া করে এক মো. আরিফ হোসেন (২৯) নামের একজন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে।
এছাড়াও শাহজাহানপুর, মতিঝিল, মুগদা, পল্টন, হাতিরঝিল এবং তেজগাঁও থানাধীন এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ অজ্ঞানপার্টি ও ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য ইসলাম (২২), বাবু (২৭), টিটু (২০), শরিফ (২১), নুরেআলম (২২), মুরাদীল মুস্তাকিম ওরফে মুরাদ (১৯), জালাল (১৯), হৃদয় (১৮), হোসেন ওরফে মোটু (১৯), জয় (১৯), সুমন (২১), ইয়াছিন রাব্বি (২০), টিটু (৪০), পরান (২৬), রাসেল (২২), জীবন সরদার(২১), শুক্কুর (২০), সাগর হোসেন (২২), মাসুম খান (১৯), মিহির তালুকদার (২১), হোসেন (২২), ফারুক (২৮), মেহেদী হাসান রানা (২৪), সুজন (২২), জুলহাস (৩০), কবির হোসেন (২২), দেওয়ান আলী (২৫), ও তৌহিদ হ্ওালাদারকে (২২) গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রাজধানীর বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন এলাকায় ছিনতাইকারী সদস্যরা ঘোরাফেরা করতে থাকে। তারপর যাত্রীদের টার্গেট করে কখনও তাদেরকে দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে কখনও বিষাক্ত চেতনানাশক ঔষধ মিশিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করে। এভাবে তার সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে তারা ভিড়ের মধ্যে মিশে যায়।
এছাড়াও কখনও ভিড়ের মধ্যে যাত্রীদের চোখে-মুখে বিষাক্ত মলম বা মরিচের গুড়া বা বিষাক্ত স্প্রে করে যাত্রীদের যন্ত্রণায় কাতর করে সর্বস্ব কেড়ে নেয়। উক্ত সময়ে ভূক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা সীমাহীন দূর্ভোগে পরেন। এসব ছিনতাইকারী সদস্যদের ভূক্তভোগীরা খুব কম ক্ষেত্রেই সনাক্ত করতে পারেন। ফলে এসব ছিনতাইকারী সদস্যরা নির্বিঘ্নে তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
র্যাব-৩ এর স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) সহকারী পুলিশ সুপার ফারজানা হক বলেন, সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীরা রাজধানীর বিভিন্ন অলি গলিতে উৎ পেতে থাকে। সুযোগ পাওয়া মাত্রই তারা পথচারী, রিকশা আরোহী, যানজটে থাকা সিএনজি, অটোরিকশার যাত্রীদের ধারালো অস্ত্র প্রদর্শন করে সর্বস্ব লুটে নেয়। সন্ধ্যা হতে ভোর পর্যন্ত তুলনামূলক জনশূন্য রাস্তা, লঞ্চঘাট, বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন এলাকায় ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
ছিনতাইকাজে বাধা দিলে তারা নিরীহ পথচারীদের প্রাণঘাতী আঘাত করতে দ্বিধা বোধ করেনা। খিলগাঁও, মালিবাগ রেইল গেইট, দৈনিক বাংলা মোড়, পীরজঙ্গি মাজার ক্রসিং, কমলাপুর বটতলা, মতিঝিল কালবার্ট রোড, নাসিরের টেক হাতিরঝিল, শাহবাগ, গুলবাগ, রাজউক ক্রসিং, ইউবিএল ক্রসিং পল্টন মোড়, গোলাপ শাহর মাজার ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং, আব্দুল গণি রোড, মানিকনগর স্টেডিয়ামের সামনে, নন্দীপাড়া ব্রিজ, বাসাবো ক্রসিং এলাকায় সন্ধ্যা হতে ভোর রাত পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বেশি দেখা যায়। এসব ছিনতাইকারীদের আইনের আওতায় আনার ফলে পথচারীদের মাঝে স্বস্তি দেখা যায়।
রাজধানীবাসী এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজধানীতে আসা যাত্রীরা যাতে নিরাপদে দৈনন্দিন কাজকর্ম সম্পন্ন করে নির্বিঘ্নে স্বস্তির সাথে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন এ লক্ষ্য নিয়ে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের বিরুদ্ধে র্যাবের সাড়াঁশি অভিযান অব্যাহত থাকবে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
Leave a Reply