একই ব্যক্তিকে একাধিক নোটিশ দিতে পারবে দুদক
- Update Time : ১২:১৬:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২
- / ১ Time View
সারাদেশ ডেস্ক:
দুর্নীতির একই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তিকে একাধিক নোটিশ দিতে পারবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বলে রায় দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
আপিল বিভাগ বলেছেন, অনুসন্ধান বা তদন্তের স্বার্থে কোনো ব্যক্তিকে একাধিক নোটিশ দেওয়া হলে তাতে দুদক আইন ও বিধির কোনো ব্যত্যয় হয় না।
দুর্নীতির যথাযথ ও কার্যকর অনুসন্ধান বা তদন্তের স্বার্থে কোনো ব্যক্তিকে একাধিক নোটিশ দেওয়ার এ বিধান অসৎ উদ্দেশ্যে নয়, বরং কমিশনের স্বচ্ছতাই প্রতিষ্ঠিত হয়।
‘দুদক বনাম আশরাফুল হক’ মামলার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপিতে এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বিচারপতির বেঞ্চ এমন রায় দেন।
বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে।
রায়ে আদালত বলেন, দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে নোটিশ প্রদান সংক্রান্ত ২০০৪ সালের দুদক আইনের ১৯ ও ২০ ধারা এবং ২০০৭ সালের দুদক বিধিমালার ৬, ৮ ও ১১ বিধিতে এ বিষয়ে বিশদ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। আইনের এসব ধারা ও বিধিমালার বিধি পর্যালোচনায় এটা কাচের মতো পরিষ্কার যে দুর্নীতির অনুসন্ধান ও তদন্তের স্বার্থে একই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন ইস্যুতে একাধিক নোটিশ দেওয়ার এ আইনি প্রক্রিয়া অত্যন্ত সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক। একাধিক নোটিশ দেওয়ার ফলে যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান বা তদন্ত চলমান তিনি তার পক্ষে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সঠিকভাবে অভিযোগ খণ্ডানোর সুযোগ পাচ্ছেন।
এর আগে আশরাফুল হক নামে এক ব্যক্তির সম্পদের হিসাব চেয়ে ২০১০ সালে নোটিশ দেয় দুদক। পরে সম্পদের হিসাব বিবরণী সংক্রান্ত নথি চেয়ে ২০১১ সালে ওই ব্যক্তিকে আরেকটি নোটিশ দেওয়া হয়। একই বিষয়ে একাধিক নোটিশ দেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন তিনি। ওই রিটের বিষয়ে শুনানি নিয়ে রুল জারি করেন আদালত। ওই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে সেটি খারিজ করে রায় দেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন ওই ব্যক্তি। আপিল বিভাগ একই বিষয়ে একাধিক নোটিশ দেওয়ার বিষয়টি বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করে ২০১৬ সালে রায় দেন।
রায়ে বলা হয়, দুর্নীতির একই বিষয়ে কোনো ব্যক্তিকে একাধিক নোটিশ দেওয়ার সুযোগ নেই। যদি কোনো দুদক কর্মকর্তা এ ধরনের নোটিশ দেন তাহলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে কমিশনকে।
আপিল বিভাগের ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে চার বছর পর ২০২০ সালে রিভিউ পিটিশন দাখিল করে দুদক। গত ৩০ জুন আপিল বিভাগ রিভিউ আবেদনটি পর্যবেক্ষণ সহকারে নিষ্পত্তি করে দেন।
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বিচারপতির বেঞ্চ রিভিউ আবেদনটি পর্যবেক্ষণ সহকারে নিষ্পত্তি করে দেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি মো. বোরহানউদ্দিন, বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কৃঞ্চা দেবনাথ।
গত ৩০ জুন আদালতে কমিশনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান ও আশরাফুলের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট এসএম শাহজানান।
দুদকের আইনজীবী মো. খুরশিদ আলম খান বলেন, আপিল বিভাগের এ রায়ের ফলে এখন থেকে একই দুর্নীতির অভিযোগে ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে একাধিক নোটিশ দিতে দুদকের সামনে আর কোনো আইনগত বাধা থাকলো না। তবে এসব নোটিশ দেওয়ার ক্ষেত্রে দুদককে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যাতে কোনো ব্যক্তির আত্মমর্যাদা নষ্ট না হয়।