সারাদেশ ডেস্ক:
কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কম্বোডিয়াতে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশিকে ‘সাইবার ক্রীতদাস’ বানিয়েছে একটি প্রতারক চক্র।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে চক্রটির হোতাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য জানিয়েছে র্যাব। গ্রেপ্তার হওয়া নাজমুল ইসলাম (৩০), নূর ইসলাম সাজ্জাদ (২৫) ও মো. সিরাজুল ইসলামের (৫৭) বরাতে র্যাব জানায়, কম্বোডিয়ায় উচ্চ বেতনের আশ্বাস দিয়ে তারা প্রাথমিকভাবে জনপ্রতি ৪-৫ লাখ টাকা আদায় করেছে।
র্যাব-৩-এর স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ফারজানা হক বলেন, ‘প্রাথমিক অনুসন্ধান ও জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তাররা সংঘবদ্ধ মানব পাচার চক্রের সদস্য। চক্রের মূল হোতা কম্বোডিয়া প্রবাসী নাজমুল ইসলাম। সে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে উচ্চ বেতনে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি দেওয়ার নাম করে ভিকটিম এবং তাদের অভিভাবকদের প্রলুব্ধ করে। কম্বোডিয়ায় যাওয়ার খরচ বাবদ প্রাথমিকভাবে তারা ৪-৫ লাখ টাকা নেয়। আগ্রহী বেকার তরুণ-তরুণীদের প্রথমে কম্পিউটার বিষয়ে পরীক্ষা দেওয়া হয়। উত্তীর্ণ হলে কম্বোডিয়া প্রবাসী আলীম ও শরিফুলের সহায়তায় তাদের জন্য কম্বোডিয়ান ট্যুরিস্ট ই-ভিসা করা হয়। তারপর তাদের বিমানযোগে কম্বোডিয়ায় পাঠানো হয়।
কম্বোডিয়ায় যাওয়ার পর নাজমুল তার সহযোগী কম্বোডিয়া প্রবাসী রাকিব ও রফিকের সহায়তায় প্রথমে ভুক্তভোগীদের প্রবাসী আরিফের হোটেলে নিয়ে যায় এবং তাদের কাছ থেকে পাসপোর্ট ছিনিয়ে নেওয়া হয়। হোটেলে কিছুদিন অবস্থান করার পর তাদের কম্পিউটার বিষয়ে প্রশিক্ষণের জন্য কম্বোডিয়া প্রবাসী কামাল ওরফে লায়ন কামাল ও আতিকের সহায়তায় একটি বিদেশি ট্রেনিং সংস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বিদেশি প্রশিক্ষকরা ভুক্তভোগীদের ছদ্মনামে অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করে কীভাবে প্রতারণা করা যায়, ভুয়া ক্লোনড ওয়েবসাইট ব্যবহার করে ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা আত্মসাৎ করার কৌশল, ভুয়া নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে বা চ্যাটিং করে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার নাম করে কৌশলে ডিপোজিট হাতিয়ে নেওয়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভয়েস কল ও ভিডিও কল রেকর্ডিং করে পরে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আত্মসাৎ করার কৌশল শেখায়।
কেউ টার্গেট সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হলে বা কাজ করতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে নির্যাতন করা হয়। তার খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। ট্রেনিং শেষে ভুক্তভোগীদের একটি বিদেশি কোম্পানির কাছে ২-৩ হাজার ডলারের বিনিময়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়। সেখানেও একই ধরনের কাজ বড় পরিসরে করানো হয়। চক্রটি পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশিকে সাইবার ক্রীতদাস হিসেবে কম্বোডিয়ায় পাচার করেছে।
Leave a Reply