সারাদেশ ডেস্ক :
রাজধানীর উত্তরায় প্রাইভেটকারের ওপর নির্মাণাধীন বিআরটি প্রকল্পের ক্রেন থেকে গার্ডার পড়ে একই পরিবারের ৫ সদস্য নিহতের ঘটনায় ক্রেন চালককে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
চালক ছাড়াও সহকারী ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাকর্মীসহ ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার (১৭ আগস্ট) রাতে ঢাকা, গাজীপুর, সিরাজগঞ্জ ও বাগেরহাট থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, রাজধানীর উত্তরায় গার্ডার ছিটকে প্রাইভেটকারের ওপর পড়ে একই পরিবারের পাঁচ সদস্য নিহতের ঘটনার শুরু থেকেই র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। দুর্ঘটনার পর থেকে আজ সারাদেশে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা দল অভিযান চালায়।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, ঘটনার পর পরই জড়িতরা ঢাকা থেকে বিভিন্ন এলাকায় পালিয়ে আত্মগোপন করে ছিল।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে বলেও জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
গত সোমবার (১৫ আগস্ট) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে উত্তরায় প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনে বিআরটি প্রকল্পের ক্রেন থেকে গার্ডার ছিটকে পড়ে প্রাইভেটকারের পাঁচ যাত্রী নিহত হন। ওই গাড়িতে থাকা নবদম্পতি গুরুতর আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান। হতাহতরা ঢাকায় একটি বৌভাতের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ফিরছিলেন।
নিহতরা হলেন- আইয়ুব আলী হোসেন রুবেল (৫৫), ফাহিমা আক্তার (৩৮), ঝরণা আক্তার (২৭), জান্নাতুল (৬) ও জাকারিয়া (৪)। এরইমধ্যে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আহত নবদম্পতি হৃদয় (২৬) ও রিয়া মনি (২১) উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন।
ঘটনার রাতেই নিহত ফাহিমা আক্তার ও ঝরণা আক্তারের ভাই মো. আফরান মণ্ডল বাবু বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় এ মামলা করেন। মামলা নম্বর-৪২।
মামলায় অবহেলাজনিতভাবে ক্রেইন পরিচালনাকারী চালক, প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এরইমধ্যে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২২ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত।
এ বিষয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোহসীন জানিয়েছেন, উত্তরার দুর্ঘটনায় দায়ের করা মামলায় অবহেলাজনিতভাবে ক্রেইন পরিচালনাকারী চালক, সিজিজিসি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে দায়িত্বপ্রাপ্ত অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এ দুর্ঘটনার তদন্ত ও জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
দুর্ঘটনার পরপরই সোমবার রাতে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে কমিটিকে একদিনের মধ্যে প্রাথমিক ও দুদিনের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।
‘এখানে ন্যূনতম নিরাপত্তা নেই’ উল্লেখ বিআরটি প্রকল্পের কাজ আপাতত বন্ধ থাকবে বলে মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম।
গত ১৫ জুলাই গাজীপুরে বিআরটি প্রকল্পের ‘লঞ্চিং গার্ডার’ চাপায় এক নিরাপত্তারক্ষী নিহত হন। ওই দুর্ঘটনায় এক শ্রমিক ও একজন পথচারী আহত হন। এরপরও জননিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাওয়ায় সোমবার আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটে।
Leave a Reply