সারাদেশ ডেস্ক :
সেলুনের যন্ত্রপাতি দিয়ে গান তুললেন ৫ বন্ধু। রাতারাতি সেই গান ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। প্রশংসায় ভাসতে থাকেন তারা। তারপর খোলেন ব্যান্ড ‘সাদা-কালো’। বলছিলাম নোয়াখালী জেলা শহরের নরসুন্দর ধ্রুব মজুমদার ও তার চার বন্ধুর কথা।
চার বন্ধু হলেন- তন্ময় দেবনাথ ছোটন, সবুজ দেবনাথ, বিজয় চন্দ্র শীল ও শান্ত দাস। ধ্রুব মজুমদার নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে ডিগ্রি শেষ করেছেন। ছোটবেলা থেকে বাবার সেলুনে সময় দিতেন তিনি। সেলুনে চুল কাটাতে এসে ২০১২ সালে পরিচয় হয় তন্ময় দেবনাথ ছোটন, সবুজ দেবনাথ ও বিজয় চন্দ্র শীলের সঙ্গে। তারপর গড়ে ওঠে তাদের সখ্যতা। প্রতিদিন রাত ১০টার পর দোকানের শাটার বন্ধ করে দিয়ে চলে গানের আসর।
প্রতিদিন গানের আসর বসলেও কখনো কোনো গান তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাড়েননি। কিন্তু সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া হাওয়া সিনেমার ‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানের একটি ভিডিও ছাড়েন তারা এবং তা রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যায়। গানটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
সাদা কালো ব্যান্ডের মূল শিল্পী সবুজ দেবনাথ নোয়াখালী সরকারি কলেজে প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তর করছেন।
তিনি বলেন, আমি হারমোনিয়াম দিয়ে হাওয়া সিনেমার ‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানটি তুলছিলাম। আমরা প্রতিদিন রাত ১০টার পর সবাই একত্রিত হয়ে সেলুনে গান গাই। বিজয় আমাকে খুব অনুরোধ করে বলল, দাদা এই গানটা আমি ফেসবুকে দেব। তারপর গানটা রেকর্ড করা হয় এবং ফেসবুকে ছাড়া হয়। রাত না পেরুতেই গানটি ভাইরাল হয়ে যায়। সবাই আমাদের প্রশংসা করে এবং নতুন নতুন গান আপলোড দিতে বলে। যেহেতু আমরা সাদা কালো গান গেয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছি, তাই আমাদের ব্যান্ডের নাম দিয়েছি সাদা কালো।
নরসুন্দর ধ্রুব মজুমদার বলেন, ছোটবেলা থেকে আমার বাদ্যযন্ত্র বাজানোর প্রতি টান ছিল। কোনো অনুষ্ঠান হলে আমাকে বাদ্যযন্ত্র বাজানোর জন্য নিতো। আমাদের পারিবারিক ব্যবসা সেলুনের। পড়ালেখার পাশাপাশি বাবার সেলুনের দোকানে সময় দিতাম। ২০১২ সালে চুল কাটাতে আসে তন্ময় দেবনাথ। আমাকে গুনগুনিয়ে গান গাইতে দেখে সে আমার দোকানে নিয়মিত আসত। তারপর শুরু হয় দোকানে গানের আসর। ফেসবুকে কখনো গান ছাড়ব, এটা আমরা ভাবি নাই।
প্রতিটি গানের সঙ্গে হারমোনিয়াম বাজায় তন্ময় দেবনাথ ছোটন। তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। গানের প্রতি নেশা থাকায় ঢাকায় ২ মাস চাকরি করে নোয়াখালী ফিরে এসেছেন।
তিনি বলেন, এখানে চুল কাটাতে আসতাম। যদিও তখন ধ্রুবকে চিনতাম না। দেখতাম দোকানে হারমোনিয়াম ও বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র পড়ে আছে। এভাবে কয়েক বার আসার পর জানতে পারি, সেলুনের দোকানের মালিকের ছেলে ধ্রুব সারা দিনের কাজ শেষে ক্লান্তি দূর করতে বাদ্যযন্ত্র বাজান। তারপর আমরা তার সঙ্গে যুক্ত হই। এভাবে আমাদের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ফেসবুকনির্ভর ছিলাম না আমরা। হঠাৎ একটা গান ছাড়ার পর সবাই খুব বাহবা দিচ্ছে। সবার ভালোবাসা পাওয়ায় আমাদের ভালো লাগছে।
সাদা কালো ব্যান্ডের সদস্য শান্ত দাস বলেন, আমার বাবা গানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি আমাকে ঢোল বাজানো শিখিয়েছেন। সবুজ দাদা, তন্ময় দাদাদের গানগুলো ভালো লাগে। তাই তাদের সঙ্গে যুক্ত হই।
গানটি নিজের ফেসবুক আইডিতে আপলোড করেন বিজয় চন্দ্র শীল।
তিনি বলেন, আমার অনুরোধে গানটি ভিডিও করা হয়। আমার মোবাইলে মেগাবাইট ছিল না। আমি তন্ময় দাদার ফোন থেকে হটস্পটের মাধ্যমে গানের ভিডিওটা আপলোড দেই। সকালে মামার বাড়িতে ছিলাম, তখন আমার মুঠোফোনে অনেকগুলো ফোন আসে। তখনও আমার এমবি ছিল না। আমার ছোট বোনের ফেসবুকে ঢুকে দেখি ৩ লাখ ভিউ হয়েছে।
মর্ডান হেয়ার কাট সেলুনের মালিক ও ধ্রুব মজুমদারের বাবা সুভাষ চন্দ্র মজুমদার বলেন, প্রায় ১০ বছর ধরে এরা সবাই কাজ শেষে রাত ১০টায় সেলুনে একত্রিত হয়। তারপর চলে গানের আসর। আমি রাত ১২-১টা পর্যন্ত তাদের গান শুনি। শুনেছি তাদের গান নাকি ভাইরাল হয়েছে।
পার্শ্ববর্তী ঐশী ইলেকট্রনিক ওয়ার্কশপের মালিক নরেশ চন্দ্র দে বলেন, সারা দিন দোকান খোলা রেখে রাত ১০টার দিকে বন্ধ করি। তারপর এরা গান শুরু করে। আমি তাদের গান শুনে সারা দিনের ক্লান্তি দূর করি। ওরা সবাই শিক্ষিত ছেলে। তাদের গানের সুর, তাল ও ছন্দ অসাধারণ।
Leave a Reply