দিদারুল আলম:
নাটোরের ঘটনা। অসম প্রেমের করুণ সমাপ্তি!
ভালোবাসার কোনো বয়স জাত, ধর্ম, বর্ণ সীমানা নেই, ভালবাসা নিয়ে কোনো মন্তব্য কখনো এর গন্তব্যে ঠেকাতে পারে না। নাটোরে ছাত্র-শিক্ষিকা দম্পতির বিয়ে ঘিরে এরূপ বক্তব্য সারাদেশে ভাইরাল হয়েছিল কয়েকদিন আগেই। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত একসঙ্গে থাকার অঙ্গীকার করা আলোচিত সেই ছাত্র-শিক্ষিকার বিয়ের মাত্র আট মাসের মাথায় স্ত্রী খায়রুন নাহারের মৃত্যুর মাধ্যমে প্রেমের গন্তব্য ঠেকে গেল।
আলোচিত অসম প্রেমের নায়িকা জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজীপুর ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক খায়রুন নাহারের মৃত্যু হয়েছে রোববার ১৪ আগস্ট। তবে এটা হত্যা না আত্মহত্যা তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ছাত্রকে বিয়ে করে ভাইরাল হওয়া শিক্ষিকা এখন কেবলই ইতিহাস হয়ে রইলো।
রোববার ১৪ আগস্ট সকালে সদর থানা পুলিশ তার মরদেহ নাটোর শহরের বলারীপাড়ার ভাড়া বাসার চারতলা থেকে উদ্ধার করে। এর আগে ভোর রাতে তার ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পায় স্বামী ও বাসার লোকজন। তবে হত্যা না আত্মহত্যা বিষয়টি নিশ্চিত হতে ভবনের অন্য বাসিন্দারা স্বামী মামুনকে আটক করে রাখে। পরে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি হত্যা না-কি আত্মহত্যা।
মামুন-খায়রুন নাহার দম্পতি নাটোর শহরের বলারীপাড়ার হাজী নান্নু মোল্লা ম্যানশনের চারতলায় ভাড়া থাকতেন। নিহত খায়রুন নাহার গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজীপুর মোজাম্মেল হক ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। তিনি উপজেলার চাঁচকৈড় পৌর এলাকার মো. খয়ের উদ্দিনের মেয়ে। মামুন হোসেন একই উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের পাটপাড়া গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে ও নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারি কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
নাটোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাছিম আহমেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে স্থানীয়দের বরাত দিয়ে সারাদেশকে বলেন, রোববার ভোরে স্বামী মামুন ভবনের অন্য বাসিন্দাদের জানান, তার স্ত্রী খায়রুন নাহার শেষ রাতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। পরে লোকজন তার বাসায় গিয়ে খায়রুন নাহারের মরদেহ মেঝেতে শোয়া অবস্থায় দেখতে পেলে তাদের সন্দেহ হয়।
এ অবস্থায় তারা মামুনকে বাসার মধ্যে আটকে পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে ওই শিক্ষিকার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নাটোর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। আর স্বামী মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ওসি বলেন, বিষয়টি নিয়ে তারা তদন্ত শুরু করেছেন। সংশ্লিষ্ট অন্য বাহিনীর সদস্যরাও তদন্ত করবেন। তদন্ত ও মরদেহের ময়নাতদন্ত হলে এটা হত্যা নাকি আত্মহত্যা তা নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে হত্যা বা আত্মহত্যা যাই হোক না কেন এমনটা ঘটলো তা পুলিশ খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছে। তবে প্রাথমিকভাবে তার গলায় ফাঁসের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
এদিকে খবর পেয়ে পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহাসহ পিবিআই, সিআইডি ও ডিবি পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। একই সঙ্গে তারাও বিষয়টির আসল রহস্য উদঘাটন করার চেষ্টা করছে।
স্থানীয়রা এ ঘটনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন। বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, এটি অসম সম্পর্কের পরিনতি। এরূপ সম্পর্কগুলোতে নানা বিষয়ে বনিবনা না হওয়ায় সংসারে কলহ সৃষ্টি হয়। কলহে অশান্তি বেড়ে আত্মহত্যার মতো পরিস্থিতিতে চলে যায়।
ডিএএম/কেকে//
Leave a Reply