নিজস্ব প্রতিবেদক:
কুমিল্লার কোতয়ালী মডেল থানার আমড়াতলী ইউনিয়নের ছত্রখিল গ্রামে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে গণপিটুনিতে নিহত মানিকের ঘটনায় আনা মামলায় গ্রেফতার আসামিদের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন কুমিল্লার একটি আদালত।
মামলাটির তদন্তাকারী কর্মকর্তা (আইও) এসআই এ.বি.এম গোলাম কিবরিয়া ২৩ অক্টোবর গনমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
উল্লেখ্য-কুমিল্লার কোতয়ালী মডেল থানার আমড়াতলী ইউনিয়রে ছত্রখিল গ্রামে চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পরে এলাকাবাসীর গণপিটুনির শিকার হন স্থানীয় মানিক ওরফে মানিক চোরা। আহতাবস্থায় তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
ঘটনাটি ঘটেছে গত ৫ অক্টোবর। এলাকাবাসী জানায়, স্থানীয় আবদুল লতিফ মাষ্টারের বাড়ীতে চুরি করতে গেলে বাড়ীর লোকজন টের পেয়ে চোর চোর চিৎকার করে। মানিক পালাতে গেলে স্থানীয়রা তাকে ধরে গণপিটুনি দেন। এতে মারাত্মক আহতাবস্থায় মানিককে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এ.বি.এম গোলাম কিবরিয়া এবং আবদুল লতিফ মাষ্টারের পুত্র মালয়েশিয়া প্রবাসী মো: সাইফুল ইসলাম ও আনোয়ার হোসেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মানিক।
ঘটনার পরদিন ৬ অক্টোবর নিহতের কন্যা জ্যোতি আক্তার কোতয়ালী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় আবদুল লতিফ মাষ্টারের তিন পূত্র আনোয়ার হোসেন, সাইফুল ইসলাম ও আলমগীর হোসেনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৪/৫ জনকে আসামী করা হয়। মানিকের মারা যাওয়ার পর তার লাশ দাফনে সহায়তার জন্য আবদুল লতিফ মাষ্টার, তার পূত্রগণ, স্থানীয় ইউপি সদস্য স্বপ্না রাণী সাহাসহ এলাকার গন্যমান্যদের স্থানীয় ছত্রখিল পুলিশ ফাঁড়িতে ডাকা হয়। সেখান থেকে লতিফ মাষ্টারের দুই পুত্রকে গ্রেফতার করা হয়। সে থেকে লতিফ মাষ্টারের বাড়ীর অন্য লোকজনও ভয়ে এলাকা ছাড়া। এখন সে বাড়ীতে তালা ঝুলছে।
সরেজমিন এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবদুল লতিফ মাষ্টার একজন স্বজ্জন এবং গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। তিনি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। তার দুই পুত্র আনোয়ার ও আলমগীর ব্যবসায় জড়িত এবং সাইফুল মালয়েশিয়া প্রবাসী। দেশে ছুটিতে এসে করোনা মহামারি জনিত কারণে ফের ফিরতে পারেননি। লতিফ মাষ্টারের বাড়ীতে দুই মাসে দুইবার চুরির ঘটনা ঘটেছে। নিহত মানিকও চিন্থিত চোর ও নেশাগ্রস্ত বলে স্থানীয়রা দাবী করেন। মানিক চুরির দায়ে জেলও খেঠেছেন বলে স্থানীয়রা জানান। স্থানীয় মনোয়ারা বেগম জানান, লতিফ মাষ্টারের বাড়ীতে চুরি করতে গিয়ে ধড়া পড়েন মানিক চোরা। গণপিটুনিতে মারাত্মক আহত হলে হাসপাতালে নেয়ার পর মানিক মারা গেছে বলে শুনেছি। তিনি বলেন, লতিফ মাষ্টারের পরিবার এলাকায় স্বজ্জন ও ভালো হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় রনি দাস বলেন, চিন্থিত মানিক চোরা লতিফ মাষ্টারের বাড়ীতে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লে ঘটনার দিন রাতেই গণপিটুনির শিকার হন। এই ঘটনায় তার মৃত্যু হয়। তিনি বলেন, যে বাড়ীতে চুরির ঘটনা ঘটেছে সেই লতিফ মাষ্টারের পরিবার এলাকায় ভালো ও সজ্জন হিসেবে পরিচিত।
ঘটনায় আনা মামলাটি এখন তদন্তাধীন। মামলার বাদী জ্যোতি আক্তার আসামীদের বিরুদ্ধে তার বাবা মানিককে চোর সন্দেহ করিয়া পরস্পর যোগসাজশে পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে শক্ত কিছু দিয়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করিয়া হত্যার অভিযোগ আনেন।
মামলাটির তদন্তাকারী কর্মকর্তা এসআই এ.বি.এম গোলাম কিবরিয়া বলেন, মামলায় গ্রেফতার দুই আসামীকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন কুমিল্লার একটি আদালত। তদন্তের স্বার্থে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তিনি বলেন, চোর ধরার বিষয়টি ফাঁড়িকে জানালে আমি তাদের আইন নিজের হাতে তুলে না নিতে অনুরোধ করি। তিনি বলেন, ঘটনাটি পরিকল্পিত নয়। তবে চুরিকে কেন্দ্র করে মানিক মারাত্মক গণপিটুনির শিকার হন।
ডিএএম/এমএইচবি//
Leave a Reply