নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশ কল্যান পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অবঃ) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিমের জন্মদিন ৪ অক্টোবর।
১৯৪৯ সালের এই দিনে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার হালদা নদীর তীরে অবস্থিত ‘উত্তর বুড়িশ্চর’ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জাতীর এ বীর সন্তানের জন্ম। তাঁর পিতা আলহাজ্ব এস এম হাফেজ আহমেদ এবং মাতা আলহাজ্ব সামসুন্নাহার। তাঁর শৈশব কাটে নিজ গ্রামে এবং চট্টগ্রাম বন্দর উত্তর আবাসিক এলাকায়।
শিক্ষা জীবন:
১৯৬২ সালে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ’এ ভর্তি হন। তিনি ১৯৬৮ সালে এই ক্যাডেট কলেজ থেকে কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বোর্ড-এর অধীনে মানবিক বিভাগে বোর্ড এর মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করে এইচএসসি পাশ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন কিন্তু অধ্যয়ন অসমাপ্ত রেখেই ‘পাকিস্তান মিলিটারী একাডেমি কাকুল’-এ যোগদান করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে বিএ পাশ করেন। দীর্ঘদিন পর অবসর জীবনে ২০০৪ সালে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণীতে মাস্টার ইন ডিফেন্স স্টাডিজ পাশ করেন। সামরিক পেশাগত লেখা-পড়ার অংশ হিসেবে তিনি ১৯৮২-৮৩ সালে ক্যাম্বারলি-তে অবস্থিত ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর বিশ্ব বিখ্যাত ‘দি রয়েল স্টাফ কলেজ’ এবং ১৯৮৯-৯০ সালে কারলাইল ব্যারাকস-এ অবস্থিত মার্কিন সেনাবাহিনীর বিখ্যাত ‘ইউএস আর্মি ওয়ার কলেজ’-এ অধ্যয়ন করেন।
সামরিক জীবন:
তরুণ ইবরাহিম সেপ্টেম্বর ১৯৭০-এ পাকিস্তান মিলিটারী একাডেমি কাকুল-এর ২৪তম ওয়ার কোর্স-এ সর্বোত্তম ক্যাডেট বিবেচিত হয়ে তথা মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করে কমিশন পান এবং ঐতিহ্যবাহী ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর ২য় ব্যাটালিয়ানে যোগদান করেন।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা: ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে এবং ৩ নম্বর সেক্টরের ভৌগলিক এলাকায় তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সাহসিকতাপূর্ণ যুদ্ধ ও নেতৃত্বের জন্য তিনি ‘বীর প্রতীক’ খেতাব প্রাপ্ত হন।
সামরিক দায়িত্ব :
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে তিনি কোম্পানী, ব্যাটালিয়ান, ব্রিগেড এবং পদাতিক ডিভিশন কমান্ড করেন। মিরপুর সেনানিবাসে অবস্থিত প্রতিরক্ষা বাহিনী কমান্ড এন্ড স্টাফ কলেজ এর প্রশিক্ষক, সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে ডাইরেক্টর অব মিলিটারী অপারেশনস, ভাটিয়ারীতে অবস্থিত বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমির কমান্ডান্টসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। চাকুরীর শেষ প্রান্তে তিনি যশোর সেনানিবাসে জিওসি ছিলেন। ১৯৮৭ থেকে ৮৯ সময়কালে সংঘাত-সংকুল পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসের এক ক্রান্তিলগ্নে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে ব্রিগেড কমান্ডারের দায়িত্ব পালনকালে সরকারি নীতিমালার আওতায়, তিনি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে শান্তি আলোচনায়ও নেতৃত্ব দেন এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে যুগান্তকারী রাজনৈতিক সংস্কার আনয়নে কার্যকর অনুঘটক ছিলেন। ১৯৯৬ সালের জুন মাসে অবসরে যাওয়ার অব্যাবহিত পূর্বে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য তিনি ঢাকা মহানগরে অবস্থিত ‘বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল এন্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ’এর ডিজির দায়িত্ব পালন করেন।
অবসরে সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবন:
অবসর জীবনে মেধা ও কর্ম জীবনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতাকে দেশবাসীর কল্যাণে নিয়োজিত করার লক্ষ্যে মেজর জেনারেল ইবরাহিম ‘সেন্টার ফর স্ট্রাটেজিক এন্ড পীস স্টাডিজ’ নামক একটি গবেষণা কেন্দ্র বা থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রথমে নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি ‘ইসলামিক ইন্সটিটিউট ফর রিসার্চ এন্ড প্রোপাগেশন অফ দি টিচিংস অফ মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) জীবনের শিক্ষা, গবেষণা ও প্রচার ইন্সটিটিউটের প্রথম সভাপতি’র দায়িত্বও পালন করেন।
এছাড়াও তিনি মওলানা ভাসানী ফাউন্ডেশন নামক একটি অরাজনৈতিক সামাজিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
চাকরি জীবনে পেশাগত কারণে এবং অবসর জীবনে বুদ্ধিবৃত্তিক ও জ্ঞানভিত্তিক কর্মকান্ডের জন্য তিনি ইরাক, জার্মানী,ফ্রান্স, মালয়েশিয়া, কাতার, অষ্ট্রেলিয়া,ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা, নেপাল, ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ সফর করেন।
জেনারেল ইব্রাহিম জাতি গঠন, জাতীয় নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, মুক্তিযুদ্ধ, ধর্মীয় মূল্যবোধসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত কলাম লিখেন। তাঁর লেখা কলামগুলির ৬টি সংকলন ইতিমধ্যে বের হয়েছে। এছাড়াও তিনি ৬টি মৌলিক বইও রচনা করেছেন।
পাশাপাশি টেলিভিশনে বিভিন্ন ইস্যু ও সমসাময়িক বিষয়ে স্পষ্টবাদীতা ও যুক্তিনির্ভর আলোচনায় অংশ নিয়ে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
বৈবাহিক জীবন:
১৯৭৫ সালের ৫ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়া গ্রাম নিবাসী মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব সিরাজউদ্দিন ভূঁইয়ার দ্বিতীয়া কন্যার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
তাঁর স্ত্রী মিসেস ফোরকান ইব্রাহিম একজন গৃহিণী এবং জেনারেল ইব্রাহিমের জনসেবা ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডের একনিষ্ঠ প্রেরণাদাতা। ফোরকান ইব্রাহিম বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং ইন্টারন্যাশনাল ইনার হুইল ক্লাব অব ঢাকা ওয়েস্ট এর সদস্য ও সাবেক সেক্রটারী।
জেনারেল ইব্রাহিমের একমাত্র পুত্র সৈয়দ ফজলুল করিম মুজাহিদ পেশায় একজন ব্যাংকার ও পুত্রবধু তানজিনা মেহের মুমু একজন গৃহিনীর পাশাপাশি লেখিকাও। একমাত্র কন্যা শারমিন ফাতেমা ইনা একজন সমাজসেবক কর্মী,তার জামাতা মাহবুবুর রহমান মিডিয়া সংশ্লিষ্ট মানব উন্নয়ন কর্মকর্তা।
রাজনৈতিক দল গঠন:
২০০৭ সালের ৪ ডিসেম্বর একটি বৃহৎ জাতীয় কনভেনশনের মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি’ প্রতিষ্ঠিত হওয়া পর থেকে তিনি দলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দলটি ইতোমধ্যে ১৪ বছর অতিক্রম করছে।
বাংলাদেশে বর্তমানে বিরাজমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে ও জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে কল্যান পার্টি সময়োপযোগী ভুমিকা রেখে চলেছে।
জাতির বীর সন্তান মেজর জেনারেল (অবঃ) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীর প্রতীকের জন্মদিনে সারাদেশ ডট নেট (saradesh.net) শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। তার উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছে সারাদেশ পরিবার।
ডিএএম/কেকে//
Leave a Reply