সারাদেশ ডেস্ক :
‘সালাম’ এর গুরুত্ব অপরিসীম।
‘সালাম’ পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সম্ভাষণ, সর্বোত্তম অভ্যর্থনা, যথাযথ সম্মান প্রদর্শন এবং একটি গণদোয়া। ‘সালাম’ ইসলামী সংস্কৃতির প্রথম অংশ এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত।
সালামের ব্যাপক প্রচলন এবং এটাকে ইবাদত হিসেবে নেয়ার জন্য কুরআন ও হাদিসে অধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে।
কুরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যখন তোমাদেরকে কেউ অভিবাদন (সালাম) জানায় তখন তাকে তার চেয়েও উত্তম পদ্ধতিতে জবাব দাও অথবা তার মতো করে। আল্লাহ সব বিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী’ (সূরা নিসা : ৮৬)।
প্রথম মানুষ আদম (আ:) থেকেই সালামের প্রচলন শুরু হয়। আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল (সা:) বলেন, আদম (আ:) কে সৃষ্টির পর আল্লাহ তায়ালা বলেন, যাও এবং ফেরেশতাদের দলটিকে সালাম করো। তারা সালামের যে উত্তর দিবে তাই হবে তোমার ও তোমার সন্তানদের সালাম আদান-প্রদান পদ্ধতি (সংক্ষেপিত), (বুখারি ও মুসলিম)।
সালাম ইমানের সাথে সংশ্লিষ্ট একটি ইবাদত। আম্মার (রা:) বলেন, যে ব্যক্তি তিনটি সৎ গুণ অর্জন করে, সে পূর্ণ ইমান লাভ করে। যেমন, নিজের ব্যাপারে ইনসাফ করা, সালাম প্রদান করা এবং অভাবগ্রস্ত অবস্থায়ও দান করা (বুখারি : ২৬)।
জগতের প্রত্যেক সভ্য জাতির মধ্যে ভালোবাসা ও সম্প্রীতি প্রকাশার্থে কোনো না কোনো বাক্য আদান-প্রদান করা হয়। কিন্তু তুলনা করলে দেখা যাবে ইসলাম প্রবর্তিত ‘সালাম’ পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি সুন্দর, যথাযথ, যথার্থ ও ব্যাপকার্থবোধক। এর মধ্যে রয়েছে ভালোবাসা, সম্মান প্রদর্শন, শুভকামনা ও নিরাপত্তার আশ্বাস প্রদানের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় বিষয়।
ইবাদত হিসেবে সালামের মধ্যে আছে আল্লাহর জিকর, অন্যকে আল্লাহর কথা মনে করিয়ে দেয়া, মুসলিম ভাইয়ের প্রতি সম্প্রীতি প্রদর্শন, তার জন্য হিতাকাক্সক্ষা এবং তার সাথে এই চুক্তি করা যে, আমার হাত ও মুখ থেকে তুমি নিরাপদ।
সালাম জান্নাতের অভিবাদন, মৃত্যুর ফেরেশতার সম্ভাষণ এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে ভালোবাসা প্রদর্শনের ভাষা। একজন জান্নাতি যখন জান্নাতে প্রবেশ করবেন, তখন ফেরেশতামণ্ডলী তাকে সালামের মাধ্যমে অভ্যর্থনা ও অভিবাদন জানাবে।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রা:) থেকে বর্ণিত আছে যে, মালাকুল মউত যখন কোনো মুমিনের প্রাণ-বিয়োগ ঘটান, তখন তার প্রতি এই সুসংবাদ পৌঁছানো হয় যে, আপনার পালনকর্তা আপনার প্রতি সালাম প্রদান করেছেন। (রুহুল মাআনী) কুরআন মাজিদের বহু জায়গায় আল্লাহ তায়ালা নবী-রাসূলগণের প্রতি সালাম প্রদান করেছেন (সূরা সাফফাত: ৭৯, ১০৯, ১২০, ১৩০, ১৮১)।
মানুষের মধ্যে কে কাকে সালাম প্রদান করবে?
>কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ী যারা হিদায়াতের অনুসারী তাদের হিদায়াতপ্রাপ্তরা সালাম প্রদান করবে। যারা অমুসলিম তাদেরকে কোনো মুসলিম সালাম প্রদান করবে না। যদি মুসলিম অমুসলিম একসাথে থাকে তাহলে সালাম প্রদানের ভাষাটা হবে ‘আস সালামু আলাইকুম ইয়া মান ইত্তাবাআল হুদা’ (সূরা ত্ব-হা: ৪৭)।
সালামকে দোয়া ও ভালোবাসা প্রদর্শন এবং একটি ইবাদত হিসেবে দেখলে ছোট বড় নির্বিশেষে সবাই সবাইকে সালাম দিবে বা দিতে পারবে।
আর যদি সম্মান, সম্ভাষণ ও অভিবাদনের দিক থেকে দেখা হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে একটি নিয়ম অনুসরণ করার আছে। যেমন জান্নাতবাসীরা যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন তাদের ফেরেশতারা সালাম প্রদান করবে।
এখান থেকে দুটি বিষয় প্রতীয়মান হয়-এক, যিনি সম্মানী ব্যক্তি তাকে সম্মান প্রদর্শনকারী সালাম দিবে। দুই-আগন্তুককে অভ্যর্থনা প্রদানকারী সালাম দিবে।
আবার বার্তা প্রদানকারী যাকে বার্তা দিবেন তাকে সালাম দিবেন। যেমন মৃত্যুর ফেরেশতা মুমিন ব্যক্তির জান কবজ করার আগে তাকে সালাম দিবেন। তেমনিভাবে বক্তা তার বক্তৃতা প্রদান করার আগে শ্রোতাকে সালাম দিবেন। এছাড়া পরিবেশ পরিস্থিতি, অবস্থা ও অবস্থান বিবেচনায় সালাম প্রদানের ক্ষেত্রে আরো কিছুু নিয়মকানুন আছে।
যেমন- কারো বাড়িতে প্রবেশের আগে বাড়ির মালিকের অনুমতি নেয়া ও বাড়ির সদস্যদের সালাম প্রদান করা।
আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! যখন তোমরা অন্য কারো বাড়িতে প্রবেশ করতে চাও, তখন অনুমতি নাও এবং বাড়ির লোকদের সালাম প্রদান করো’ (সূরা নূর:২৭)।
রাস্তাঘাটে চলাচলের সময় আরোহী ব্যক্তি হেঁটে চলা ব্যক্তিকে, পদব্রজে চলাচলকারী ব্যক্তি বসা ব্যক্তিকে এবং কমসংখ্যক লোক বেশি সংখ্যক লোককে, ছোট বা কম বয়সী বয়োজ্যেষ্ঠকে সালাম প্রদান করবে (বুখারি ও মুসলিম)।
তবে এর বিপরীত হওয়াটাও দোষণীয় নয়। আবু উমামা থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা:) বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালার কাছে অগ্রগণ্য সে ব্যক্তি যে আগে সালাম দেয়’ (তিরমিজি ও আবু দাউদ)। জারির হতে বর্ণিত, নবী (সা:) এক দিন একদল মহিলার কাছ দিয়ে গেলেন এবং তাদেরকে সালাম দিলেন (আহমান)। একদল লোকের পক্ষ থেকে একজন সালাম দেয়াই যথেষ্ট, অনুরূপ দলের পক্ষ থেকে একজন জবাব দেয়াও যথেষ্ট (বায়হাকি, শুআবুল ইমান)।
ডিএএম/কেকে//
Leave a Reply