সারাদেশ ডেস্ক :
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে।
এতে অন্তত ৬০ জন নিহত ও বহু আহত হয়েছেন। প্রথম হামলার পর দ্বিতীয় আরেকটি বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
আলজাজিরা ও বিবিসি সূত্রে এ সংবাদ জানা গেছে। নিহতদের মধ্যে মার্কিন সৈন্যও রয়েছেন।
কাবুল বিমানবন্দরের অ্যাবি গেট যেখানে মার্কিন এবং ব্রিটিশ সৈন্যরা অবস্থান নিয়ে হাজার হাজার মানুষকে আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল তার ঠিক বাইরে এই বিস্ফোরণ ঘটে।
পেন্টাগনের একজন মুখপাত্র স্বীকার করেছেন যে বেশ কয়েজজন এতে নিহত হয়েছে। তবে তালেবান দাবি করছে, বিস্ফোরণে অন্তত ৬০ ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছে। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে বলে তালেবানের একজন কর্মকর্তা বলছেন।
পেন্টাগনের মুখপাত্র বলছেন, নিহতদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকসহ বেশ কয়েকজন বেসামরিক মানুষ রয়েছেন।
একটি ‘জটিল হামলা’র জেরে এসব প্রাণহানি ঘটেছে বলে তিনি বলেছেন। এখন পর্যন্ত কেউ এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেনি।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী এক সাংবাদিককে জানিয়েছেন, যে বোমাটি ফেটেছে তা ছিল ‘খুবই শক্তিশালী।’
রয়টার্স বার্তা সংস্থা একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে তাতে এই লোকটি বলছে, বিস্ফোরণের সময় সেখানে অন্তত ৪০০ থেকে ৫০০ লোক উপস্থিত ছিল। নিহতদের মধ্যে ‘বিদেশি সৈন্য’ রয়েছে বলে তিনি জানান।
‘আমরা স্ট্রেচারে করে আহতদের সরিয়ে নেই -রক্তে আমার পোশাক ভিজে গিয়েছিল।’
কাবুল থেকে বিবিসি সংবাদদাতা সেকান্দার কিরমানি খবর দিচ্ছেন, বিস্ফোরণের পর যেসব ভিডিও এবং ছবি প্রকাশিত হয়েছে তাতে লাশের ওপর লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। বিবিসি সংবাদদাতা জনাথান বিইল জানাচ্ছেন, প্রথম হামলার পর দ্বিতীয় আরেকটি বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে এই বিস্ফোরণ সম্পর্কে জানানো হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স খবর দিচ্ছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট যখন আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে তার নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করছিলেন তখন তাকে কাবুল বিমানবন্দরের এই হামলা সম্পর্কে খবর দেয়া হয়।
এই ঘটনার পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন তার নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সাথে জরুরি বৈঠক করতে যাচ্ছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার কাবুল বিমানবন্দরে সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও আরো কয়েকটি দেশ সতর্কবার্তা জারি করে।
সতর্কবার্তায় উগ্রবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) স্থানীয় ইসলামিক স্টেট অব খোরাসান প্রভিয়েন্স (আইএসকেপি) বোমা হামলা চালাতে পারে বলে দেশগুলো নিজ নিজ নাগরিকসহ আফগানদের বিমানবন্দর থেকে দূরে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়।
গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ তালেবানের নেয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রসহ দেশটিতে অবস্থান করা বিভিন্ন দেশের নাগরিক ও বিপুল সংখ্যক আফগান নাগরিক দেশত্যাগের জন্য কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানব্ন্দরে ভিড় করে।
১৪ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো এক লাখের বেশি বিদেশী নাগরিক ও আফগানকে দেশটি থেকে বের করে নিয়ে গেছে।
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার জেরে আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালায় মার্কিন বাহিনী। অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রসজ্জ্বিত মার্কিন সৈন্যদের হামলায় আফগানিস্তানের তৎকালীন তালেবান সরকার পিছু হটে। তবে একটানা দুই দশক যুদ্ধ চলে দেশটিতে।
দীর্ঘ দুই দশক আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের দখলের পর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাতারের দোহায় এক শান্তিচুক্তির মাধ্যমে দেশটি থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহার করতে সম্মত হয় ওয়াশিংটন। এর বিপরীতে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অংশ নিতে তালেবান সম্মত হয়।
চুক্তি অনুসারে ক্ষমতাসীন থাকা মার্কিন সমর্থনপুষ্ট আফগান সরকারের সমঝোতার জন্য তালেবান চেষ্টা করলেও দুই পক্ষের মধ্যে কোনো সমঝোতা হয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছর মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের মধ্যে পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালাতে শুরু করে তালেবান। মে থেকে অভিযান শুরুর পর সাড়ে তিন মাসের মাথায় ১৫ আগস্ট রাজধানী কাবুলের অধিকার নেয় তালেবান যোদ্ধারা।
কাবুল তালেবানের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর আফগানিস্তান ছাড়ার জন্য দেশটির বিপুল সংখ্যক নাগরিক কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিড় করে। বিমানবন্দরের ভিড়ে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলায় প্রায় ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় সাংবাদিকদের সূত্রে জানা যায়।
কেকে/এসএম//
Leave a Reply