স্বাস্থ্য ডেস্ক :
করোনা সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠার পরও অনেকের শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হতে পারে।
তাই এসময় ব্রিদিং এক্সারসাইজ অর্থাৎ শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করলে স্বাভাবিকতা ফিরে আসতে পারে। শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম হিসেবে সেলফ অ্যাওয়েক প্রোনিং এবং অল্টারনেট নস্ট্রিল ব্রিদিং করতে পারেন। এ দুটি খুবই কার্যকরী ব্যায়াম, যা করোনার সংক্রমণ থেকে নিরাময়ের পরও শ্বাসক্রিয়ায় সমস্যা হলে তা দূর করতে পারবে।
এছাড়া শ্বাস-প্রশ্বাসে সহজতা আনার জন্য চেস্ট এক্সারসাইজও করতে পারেন। কিছু পজিশনও শ্বাসক্রিয়াকে সহজ করতে পারে।
সেলফ অ্যাওয়েক প্রোনিংয়ের নিয়ম হলো-
* ৩০ মিনিট পেটের ওপর ভর দিয়ে শুয়ে থাকুন
* ৩০ মিনিট ডান কাতে শুয়ে থাকুন
* ৩০ মিনিট পেছনে হেলান দিয়ে বসে থাকুন
* ৩০ মিনিট বাম কাতে শুয়ে থাকুন।
অল্টারনেট নস্ট্রিল ব্রিদিংয়ের নিয়ম হলো–
* ডান হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে নাকের ডান ফুটো চেপে বন্ধ করে বাম ফুটো দিয়ে ৪ গোনা পর্যন্ত শ্বাস নিন
* এবার ডান হাতের অনামিকা দিয়ে নাকের বাম ফুটোও বন্ধ করে ১৬ গোনা পর্যন্ত শ্বাস ধরে রাখুন
* এরপর নাকের ডান ফুটো খুলে দিয়ে ৮ গোনা পর্যন্ত শ্বাস ছাড়ুন
* তারপর নাকের বাম ফুটো বন্ধ রেখে ৪ গোনা পর্যন্ত শ্বাস নিন
* এরপর নাকের উভয় ফুটোকে বন্ধ রেখে ১৬ গোনা পর্যন্ত শ্বাস ধরে রাখুন
* তারপর নাকের বাম ফুটো খুলে দিয়ে ৮ গোনা পর্যন্ত শ্বাস ছাড়ুন।
সহজে শ্বাস-প্রশ্বাসের পজিশন
কেবল শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম নয়, পজিশনের ওপরও শ্বাস-প্রশ্বাসের সহজতা বা কঠিনতা নির্ভর করে। শোয়া, বসা বা দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে কিছু পজিশনকে গুরুত্ব দিলে শ্বাস-প্রশ্বাস সহজ হতে পারে।এখানে শ্বাস-প্রশ্বাসে সহায়ক এমনকিছু পজিশন দেয়া হলো।
* উঁচু কাতে ঘুমানো: দুই-তিনটি বালিশের ওপর মাথা ও ঘাড় রেখে কাত হয়ে ঘুমান এবং হাঁটুদ্বয়কে একটু বাঁকিয়ে নিন।
* টেবিলের সামনে ঝুঁকে বসা: একটি বালিশসহ টেবিলকে সামনে রেখে চেয়ারে বসুন। এবার কোমর থেকে শরীরের উপরাংশকে ঝুঁকিয়ে মাথা ও ঘাড় বালিশের ওপর রাখুন। বাহুদ্বয়কে টেবিলের ওপর রাখুন। বালিশ ছাড়াও চেষ্টা করতে পারেন।
* টেবিল ছাড়াই ঝুঁকে বসা: একটি চেয়ারে বসে বাহুদ্বয়কে কোল বা চেয়ারের আর্মরেস্টের ওপর রেখে কোমর থেকে শরীরের উপরাংশকে সামনের দিকে ঝুঁকান।
* সামনে ঝুঁকে দাঁড়ানো: উইন্ডোসিল বা অন্যান্য স্থির সারফেসের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে মাথাকে সামনের দিকে ঝুঁকে দাঁড়ান।
* পিঠকে সাপোর্টে রেখে দাঁড়ানো: পিঠকে দেয়ালের মতো কোনো সাপোর্টের সঙ্গে লাগিয়ে দাঁড়ান এবং হাত দুটিকে যার যার পাশে রাখুন। এসময় পা দুটিকে দেয়াল থেকে এক ফুট দূরে রাখুন।
চেষ্ট এক্সারসাইজ করবেন যেভাবে
চেস্ট এক্সারসাইজ করলে ফুসফুসের কার্যক্রম পুনরুদ্ধার হতে পারে। সংক্রমণ বা অস্ত্রোপচারে ফুসফুস দুর্বল হয়ে যেতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, ফুসফুসের দুর্বলতা কাটাতে বা কার্যক্ষমতা বাড়াতে চেস্ট এক্সারসাইজ সহায়ক হতে পারে।
দুটি কার্যকরী চেস্ট এক্সারসাইজ হলো- ইনসেনটিভ স্পাইরোমেট্রি ও বেলুন এক্সারসাইজ। এখানে ইনসেনটিভ স্পাইরোমেট্রি ও বেলুন এক্সারসাইজ কীভাবে করবেন তা সম্পর্কে বলা হলো।
ইনসেনটিভ স্পাইরোমেট্রি
* মুখে মাউথপিস লাগিয়ে ঠোঁট দুটিকে এটার চারপাশে টাইট করে বন্ধ করুন। জিহ্বা দিয়ে মাউথপিসকে ব্লক করবেন না।
* ইনডিকেটর বাড়াতে মাউথপিসের মাধ্যমে ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নিন। কাঙ্ক্ষিত লেভেলে না পৌঁছা পর্যন্ত ইনডিকেটর বাড়ানোর চেষ্টা করুন।
* আর শ্বাস নিতে না পারলে মাউথপিস খুলে ফেলুন এবং শ্বাসকে ৩ সেকেন্ড ধরে রাখুন।
* এরপর স্বাভাবিকভাবে শ্বাস ছাড়ুন।
* চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে এটা রিপিট করুন।
* প্রত্যেকবার কত লেভেল পর্যন্ত পৌঁছতে সক্ষম হচ্ছেন তার হিসাব রাখুন। এর ফলে চিকিৎসক ফুসফুসের কার্যক্রম বেড়েছে কিনা বুঝতে পারবেন।
বেলুন এক্সারসাইজ
এটা খুবই সহজ এক্সারসাইজ। এটার জন্য শৈশবে ফিরে যেতে হবে, অর্থাৎ বেলুন ফুলাতে হবে। প্রতিদিন কিছুসংখ্যক বেলুন ফুলানোর চেষ্টা করুন। বেলুন ফুলালে ইন্টারকোস্টাল মাসলসের ব্যায়াম হয়। এর ফলে ফুসফুস শ্বাসগ্রহণের সময় অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে এবং শ্বাসত্যাগের সময় কার্বন ডাইঅক্সাইড ছাড়তে পারে। শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন পেলে শ্বাসকষ্ট ও ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে।
এসএস//
Leave a Reply