সারাদেশ ডেস্ক :
কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস বিশ্বের মানুষের কাছে এক প্রাণঘাতী নাম।
যার সংক্রমণে ইতোমধ্যে বিশ্বে ৩০ লক্ষাধীক মানুষ ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন।
প্রতিনিয়ত এই ভাইরাস তার চরিত্র পরিবর্তন করে বর্তমানে আগ্রাসী রূপ ধারণ করেছে। শনাক্তের পর থেকে এখন পর্যন্ত ভাইরাসটি প্রায় ১২ হাজার ৭০০ বার তার রূপ বদল করেছে।
এদের বেশিরভাগ ধরন ততোটা গুরুতর না হলেও কয়েকটি ধরন খুবই মারাত্মক। তার মধ্যে ইউকে স্ট্রেইন (ধরন) মারাত্মক একটি ধরন।
যা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে শনাক্ত হয়েছে।
দেশে প্রতিদিন বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এবং মৃত্যু।
আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা আগের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে। করোনা ভাইরাসের ধরন পরিবর্তন হলেও ভাইরাসটির সংক্রমণের পদ্ধতি কিন্তু পরিবর্তন হয়নি, এমতাবস্থায় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধির কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বর্তমানে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ চলছে, যা প্রথম ঢেউ থেকে অনেক বেশি ভয়ংকর। আক্রান্ত রোগীর অবস্থা দ্রুত অবনতি হচ্ছে এবং মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে।
শনিবার ১০ এপ্রিল দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৭৭ জনের মৃত্যু হয়। এ পর্যন্ত মোট মৃত্যুর সংখ্যা নয় হাজার ৬৬১ জন।
গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৩৪৩ জন। সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৯৩৭ জনে। গত ৭ এপ্রিল দেশে একদিনে করোনায় সাত হাজার ৬২৬ জন শনাক্ত হয়। যা দেশে করোনায় একদিনে শনাক্তে সর্বোচ্চ রেকর্ড।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেকও আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের হার যেভাবে বাড়ছে, এভাবে চলতে থাকলে, সবাই সচেতন না হলে, পুরো ঢাকা শহরকে হাসপাতাল বানানো হলেও মানুষের চিকিৎসা ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে না।
করোনা ভাইরাসের কোন ভ্যারিয়েন্ট দেশে করোনার অতি সংক্রমণের জন্যে দায়ী এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক ও সংক্রামক রোগ বিভাগের পরিচালক, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, কতগুলো ল্যাব টেস্টের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে ইউকে ভ্যারিয়েন্ট এবং সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট আমাদের দেশে আছে। যেসব স্যাম্পল নিয়ে তারা আইডেন্টিফাই করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট এখন ইউকে ভ্যারিয়েন্ট থেকে বেশি সংক্রমণ ঘটাচ্ছে। কিন্তু যে বিষয়টা ল্যাব থেকে ডায়াগনোসিস করা হলো, সেটাকে ক্লিনিক্যালি এবং এপিডোমলজিক্যালিও দেখতে হবে। তিনি বলেন, ল্যাব টেস্টে দেখা গেছে এই ভ্যারিয়েন্টগুলো দেশে পাওয়া গেছে। কিন্তু এই ভ্যারিয়ান্টগুলোর এপিডোমলজিক্যাল লিঙ্ক আছে কিনা, ক্লিনিক্যাল সম্পর্ক আছে কিনা? সিভিয়ারিটির জন্য দায়ী কিনা, সেই বিষয়গুলো পরিষ্কার না। সুতরাং করোনা ভাইরাস বিষয়ে প্রোপার সার্ভিল্যান্স ছাড়া সন্তোষজনক মন্তব্য করা কঠিন।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি) বাংলাদেশ, এক গবেষণায় বলা হয়েছে, নতুন আক্রান্তদের ৮১ শতাংশই হলো দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট।
করোনা প্রতিরোধে করণীয় বিষয় জানতে চাইলে এ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বলেন, করোনা ভাইরাসের যে ভ্যারিয়েন্টই হোক না কেনো, তার শরীরে প্রবেশের পথ কিন্তু একই, সংক্রমণের পদ্ধতিতেও আর পরিবর্তন হয়নি, সুতরাং করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে স্টাডার্ড যে স্বাস্থ্যবিধি রয়েছে, সেগুলো মানলে সমস্যা হবে না এটাই হচ্ছে মূল বিষয়।
স্বাস্থ্যবিধি মানাই হচ্ছে আমাদের বাঁচার একমাত্র উপায়। সংক্রমণ না কমা পর্যন্ত আমাদের তেমন কিছু করার নেই।
হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে কত মৃত্যু কমানো সম্ভব? আমাদের সেই সক্ষমতাও বেশি নাই। সুতরাং আমাদের করণীয় হচ্ছে ভাইরাসটির সংক্রমণ কমাতে হবে। সংক্রমণ কমাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং ভ্যাক্সিনেসনের ওপর বেশি জোড় দিতে হবে।
ডিএএম//
Leave a Reply