বিএনপি মহাসচিবের সাথে কথা বলেছেন কুমিল্লা সিটির মেয়রপ্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু
- Update Time : ১০:১১:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ২ Time View
সারাদেশ রিপোর্ট :
আসছে ৯ মার্চ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের তৃতীয় নির্বাচনে মেয়র হন আরফানুল হক রিফাত। ২০২২ সালের ১৫ জুন কুমিল্লা সিটির তৃতীয় নির্বাচন হয়। গত ডিসেম্বর মাসে তিনি মৃত্যুবরণ করায় এখন মেয়র পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
সিটির টানা দুইবারের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু আসন্ন উপনির্বাচনে অন্যতম প্রার্থী। কুমিল্লা জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন মনিরুল হক সাক্কু। এর আগে তিনি জাতীয়তাবাদী যুবদল কুমিল্লা জেলা দক্ষিণের সভাপতি হিসেবে দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করেন। ২০২২ সালের ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের তৃতীয় নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচন করায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। দল তাকে বহিষ্কার করলেও দলের সমস্ত লড়াই সংগ্রাম আন্দোলন কর্মসূচিকে সফল করতে তার অনবদ্য ভূমিকা ছিল। ৯ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তিনি ইতোমধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর সঙ্গে দেখা করেছেন।
এ প্রসঙ্গে মনিরুল হক সাক্কু গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি অলরেডি মহাসচিবের সঙ্গে কথা বলেছি। উনি কিছু জিগাইছে না। আমি শুধু বলেছি, ভাই আমি অটল (নির্বাচনের বিষয়ে) আছি। উনি বলেছেন, অটলভাবে থাকো।’
মনিরুল হক সাক্কু কুমিল্লা পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। পুরাতন কুমিল্লা পৌরসভা ও সদর দক্ষিণের বৃহৎ একটি অংশ নিয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন গঠিত হয়। নবগঠিত কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনে মেয়র হন মনিরুল হক সাক্কু। দ্বিতীয় নির্বাচনেও মেয়র হন মনিরুল হক সাক্কু। ২০২২ সালের ১৫ জুন কুমিল্লা সিটির তৃতীয় নির্বাচনে তাকে ৩৪৩ ভোটে পরাজিত দেখানো হয়। যদিও ফলাফল ঘোষণার শেষ দিকে চারটি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। ওই নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে একটি একটি করে কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করলেও শেষ দিকে চারটি কেন্দ্রের ফলাফল একসাথে যোগ করে ঘোষণা করে তাকে পরাজিত দেখানো হয়। ফলাফল ঘোষণার ওইচিত্র গণমাধ্যমেও সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছিল। তবে মনিরুল হক সাক্কু ওই ফলাফল মেনে নিয়েছিলেন।
কুমিল্লা পৌরসভার চেয়ারম্যান ও পরবর্তীতে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের টানা দুইবার মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালনকালে সিটিকে নান্দনিক রূপে গড়ে তোলা, বিভিন্ন উন্নয়ন এবং নগরবাসীর নানা সমস্যায় তাদের সাথে সরাসরি সম্পৃক্তায় তিনি জনতার মেয়র হিসেবে নিজেকে পৌঁছাতে সক্ষম হন। তাই দলীয় রাজনৈতিক পরিচয় ছাপিয়ে তিনি দলবল নির্বিশেষে জনগণের একটি বড় অংশের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হন।
কুমিল্লা সিটির সাবেক মেয়র হেভিওয়েট প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ছাড়াও আরো তিনজন প্রতিদ্বন্দিতা করছেন উপনির্বাচনে।
আরো তিন প্রার্থী হলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক ভিপি মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য নূর-উর রহমান মাহমুদ তামিম, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক স্থানীয় এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের মেয়ে তাহসীন বাহার, কুমিল্লা জেলা দক্ষিন ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজামুদ্দিন কায়সার। কায়সার ২০২২ সালের ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের তৃতীয় নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচন করায় দল থেকে বহিষ্কৃত হন।
কুমিল্লা সিটিতে এবার মেয়র পদের উপনির্বাচনে চার প্রার্থীর মধ্যে তাহসীন বাহার ছাড়া তিনজনই পুরোনো মুখ। এর মধ্যে দুবারের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু ‘টেবিলঘড়ি’ প্রতীকে নির্বাচন করছেন। তাহসীন বাহার ‘বাস’ প্রতীক, নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম ‘হাতি’এবং নিজামউদ্দিন কায়সার ‘ঘোড়া’ প্রতীকে নির্বাচন করছেন।
নিজামউদ্দিন কায়সার মেয়র পদে ২০২২ সালের ১৫ জুনের নির্বাচনে ২৯ হাজার ৯৯ ভোট পেয়ে আলোচনায় আসেন। আর তানিম ২০১২ সালে মেয়র পদে প্রার্থী হয়ে ৮ হাজার ৫১৪ ভোট পেয়েছিলেন।
নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৯ মার্চ কুমিল্লা সিটি কর্পেরেশনের মেয়রের শূন্য পদে উপনির্বাচন হবে। ২০২২ সালের ১৫ জুন কুমিল্লা সিটির নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত ৫০ হাজার ৩১০ ভোটে মেয়র হন। মনিরুল হক সাক্কু পান ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট। মেয়রের দায়িত্ব পাওয়ার দেড় বছরের মাথায় গত ডিসেম্বরে মারা যান আরফানুল হক রিফাত।
কুমিল্লা সিটির উপনির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে শুক্রবার সকালে প্রতীক বরাদ্দ দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু করেন চার প্রার্থী। শহরের বিভিন্ন এলাকায় চার প্রার্থীর সমর্থনে পৃথকভাবে মিছিল করেছেন তাদের কর্মী-সমর্থকেরা। এ ছাড়া ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মাইকেও প্রচার শুরু হয়েছে।
মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু বলেন, অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নগরবাসী যেন তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।
মেয়র প্রার্থী নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম গণমাধ্যমকে বলেন, নির্বাচন কমিশন তাদের আইন বিধিবিধান প্রতি পালনের মধ্য দিয়ে কুমিল্লা সিটিতে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেবেন।
মেয়র প্রার্থী নিজামুদ্দিন কায়সার বলেন, কেউ যেন আচরণ বিধি লংঘন করে নির্বাচনী পরিবেশকে বিনষ্ট করতে না পারে সেজন্য নির্বাচন কমিশন যথাযথ ভূমিকা পালন করবে।
মেয়র প্রার্থী তাহসীন বাহার বলেন, নগরবাসী উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রাখতে উৎসবমুখর পরিবেশে আসন্ন নির্বাচনে ভোট উৎসবে অংশ নেবে।
এবারের নির্বাচন দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। দলীয় প্রতীকে না হলেও আওয়ামীলীগ ও বিএনপি ঘরানার চার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতায়। একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য ও উৎসবমূখর নির্বাচন উপহার দেবেন নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন এমনটিই প্রত্যাশা নগরবাসীর।
এসএম/কেকে//