বিশেষ প্রতিনিধি:
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে বলেছেন, শুধুমাত্র ভোট এবং নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন করা যেতে পারে।
রাজধানীরৈ ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রির উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই জনগণের ভোটাধিকার অব্যাহত থাকুক এবং ভোটের মাধ্যমেই সরকার পরিবর্তন হতে পারে।’
নির্বাচন বানচালের জন্য যারা অগ্নিসংযোগ করেছে তাদের প্রতিহত করতে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি।’
তিনি বলেন, ‘সুতরাং, যারা সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বানচালের চেষ্টা করছে তাদের সম্পর্কে জনগণকে সচেতন থাকতে হবে।’ পাশাপাশি যেসব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা বলেন, যেসব রাজনৈতিক দলের জনগণের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস নেই এবং রাজনৈতিক দল হিসেবে সুসংগঠিত নয়, তারা নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে।
তিনি উল্লেখ করেছেন, নির্বাচন বানচাল একটি দেশের জন্য চরম ক্ষতির কারণ হতে পারে। ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে অগ্নিসন্ত্রাসের কারণে জীবন ও সম্পদের ক্ষতির কথা উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে জীবন ও সম্পত্তি ধ্বংস করা কোন ধরনের রাজনীতি?’ অনুষ্ঠানের শুরুতে আওয়ামী লীগ সভাপতির পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়।
গোপালগঞ্জ-৩ আসনে শেখ হাসিনার মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ। এরআগে গণভবন থেকে প্রাইভেটকারে চড়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন শেখ হাসিনা। পরে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে সরকারি গাড়িতে করে বঙ্গভবনে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০০৯ সাল থেকে দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্রের এই ধারাবাহিকতার কারণে অভূতপূর্ব আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি এবং উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন সম্ভব হয়েছে। যারা অগ্নিসন্ত্রাস করে মানুষ হত্যার মাধ্যমে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে তাদের প্রতিহত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর প্রতি তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি দেশের জনগণকে তাদের প্রতিহত করার জন্য অনুরোধ করব।’ হরতাল-অবরোধের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পরিবেশ ও কর্মকান্ড ধ্বংস করা হচ্ছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান আরও বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জনগণের ওপর নির্যাতন চালিয়ে আমোদ-ফূর্তি করে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টার সঙ্গে জড়িতদের কোনো ভালো ফল বয়ে আনবে না। তিনি বলেন, ‘কেউ যদি নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করে এবং অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়ে যায়, তাহলে তা তাদের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘নির্বাচনে ভোট দেওয়া এবং পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নেওয়া জনগণের অধিকার।’ দেশের জনগণ তাদের শাস্তি দেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশাল সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত দেশের অব্যাহত গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করতে না দিতে আমি জনগণের প্রতি আহ্বান জানাব। শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন, যারা জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে এবং সেই উদ্দেশে অগ্নিসন্ত্রাস চালাবে তাদের জনগণ প্রতিহত করবে।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, যারা মনোনয়ন ফরম নিচ্ছেন, তারা সবাই যোগ্য, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি বলেন, ‘তবে আগামী নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত প্রার্থী বাছাই করা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের কাজ। প্রার্থী বাছাইয়ের আগে আমরা তৃণমূল পর্যায় থেকেও মতামত নেব।’ এরআগে তিনি আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম বিক্রির বুথ পরিদর্শন করেন।
আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়ন ফরম বিক্রির জন্য দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আটটি বিভাগের জন্য ১০টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। দলীয় প্রার্থীরা ১৮ নভেম্বর সকাল ১০টা থেকে ২১ নভেম্বর প্রতিদিন বিকেল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবেন। আগ্রহীরা দলীয় মনোনয়নের জন্য রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে স্থাপিত নির্দিষ্ট বুথ থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবেন। ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের প্রার্থীদের মনোনয়ন ফরম দলীয় কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলা থেকে বিতরণ করা হচ্ছে এবং রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের প্রার্থীদের অফিসের তৃতীয় তলা থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে হবে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় সব বিভাগের মনোনয়নপত্র গ্রহণ করা হবে।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দলীয় কার্যালয়ে অতিরিক্ত জনসমাগম ছাড়াই নিজেদের অথবা প্রার্থীর প্রতিনিধির মাধ্যমে তাদের আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবেন।
আবেদনপত্র সংগ্রহের সময় একজন প্রার্থীকে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সঙ্গে আনতে হবে। ফটোকপিতে মোবাইল নম্বর, প্রার্থীর আগের তিনটি পদ এবং বর্তমান সাংগঠনিক পরিচয় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
২১ নভেম্বর বিকেল ৪টার মধ্যে মনোনয়ন ফরম জমা দিতে হবে।
এসএম/কেকে//
Leave a Reply