1. newsroom@saradesh.net : News Room : News Room
  2. saradesh.net@gmail.com : saradesh :
বিচার বিভাগকে আরও গতিশীল করতে উদ্যোগ নেয়া হবে : নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান - সারাদেশ.নেট
শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
আওয়ামী লীগসহ ১১টি দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে রিট বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যান সমিতির সভাপতি রফিক, মহাসচিব সাত্তার সাংগঠনিক সম্পাদক তফাজ্জল বুড়িচং জগতপুরে অগ্নিকাণ্ডে নিঃস্ব হয়ে গেছে একটি পরিবার হাইকোর্টে ২৩ অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগ খালাস পেলেন যুবদল নেতা আইনজীবী নুরে আলম সিদ্দিকী সোহাগ আপিল বিভাগে তালিকাভুক্ত হলেন এডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা নিউইয়র্কে ইউনূস ও বাইডেনের বৈঠক মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর বিচারপ্রার্থীগণকে উন্নত সেবা প্রদানে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের প্রধান বিচারপতির নির্দেশনা প্রথমবারের মতো সেনাসদরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

বিচার বিভাগকে আরও গতিশীল করতে উদ্যোগ নেয়া হবে : নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান

  • Update Time : বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

বিশেষ প্রতিনিধি :
দেশের ২৪ প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, বিচার বিভাগকে আরও গতিশীল করতে চেষ্টা করবো উদ্যোগ নিবো।

সুপ্রিমকোর্টে নিজ।কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান আজ কথা বলেন। সামাজিক পরিবর্তন না আনলে শুধু বিচার করে, শুধু আইন-আদালত করে এই সমাজকে সঠিক পথে আনা যাবে না বলেও মনে করেন তিনি।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, মামলাজট কমানোটাই বড় চ্যালেঞ্জ। আরেকটি বিষয় আপনাদের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে, সারা বাংলাদেশে আছে-সেটি দুর্নীতি। দুর্নীতি একটি ক্যানসারের মতো কাজ করছে সর্বত্রই। আমার পূর্বসূরিরা যেভাবে চেষ্টা করেছেন, আমি চেষ্টা করব সহকর্মীদের নিয়ে একইভাবে এই দুর্নীতি যাতে কমানো যায়, সে উদ্যোগ নিতে।

বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন,
সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগ এবং অধস্তন আদালতে আমাদের যেসব সহকর্মী আছেন, সবার প্রতি আহ্বান থাকবে, তারা প্রত্যেকেই যেন এই বিচার বিভাগের কাজটি, বিচারের কাজটি নিজের কাজ মনে করেন। সেটি মনে করলেই শুধু সম্ভব হবে। যে পাঁচটি মামলা আমরা নিষ্পত্তি করতে পারি, এটি নিজের কাজ মনে করে করলে পাঁচ থেকে সাতটি হবে। নিষ্পত্তির সংখ্যাটা যদি আমরা বৃদ্ধি করতে পারি, তাহলে মামলাজট অনেকাংশেই কমে যাবে। আশা করি সেটি কিছুটা হলেও সম্ভব হবে।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, মামলাজট বা মামলার দীর্ঘসূত্রতা, এটি একটি পুরোনো ব্যাধি। এই ব্যাধি যাতে ক্রোনিক (দীর্ঘস্থায়ী) না হয়ে যায়, সেই চেষ্টা করব আমি।

শুধু বিচারকদের দিয়েই বিচার বিভাগ নয়, উল্লেখ করে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত আছেন আইনজীবীরা, তাদের সহকারীরা ও অধস্তন আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আরও অন্য স্টাফ যারা, সবাই। সবাই যদি আন্তরিক হন, তাহলে বিচারপ্রার্থী মানুষের কষ্ট লাঘব হবে।’

বিচারপতি ওবায়দুল হাসান
বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) এবং মেডিয়েশনের (মধ্যস্থতা) মাধ্যমে অনেক মামলা কমতে পারে বলে মনে করেন । তিনি বলেন, বিচারপ্রার্থী ঘরে বসে বিচারালয়ে না গিয়ে একই রকম ফল অন্যভাবে পেতে পারেন এডিআর, মধ্যস্থতা ও সালিসের মাধ্যমে। এগুলো বাংলাদেশে ডেভেলপ করছে ধীরে ধীরে। চেষ্টা করবেন, সবাই মিলে এটি আরও গতিশীল করতে, যাতে মানুষকে আদালতমুখী খুব একটা না হতে হয়।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, আস্থার ঘাটতি সর্বত্রই আছে। বিচার বিভাগের ওপর আস্থার ঘাটতি নেই, এ কথা আমি বলব না। মামলা নিষ্পত্তির হার দিনের পর দিন বাড়ছে। মানুষের যদি আস্থাই না থাকবে, মানুষ কোর্টে আসবেন কেন? আস্থা আছে বলেই মানুষ কোর্টে আসেন। আস্থা শতভাগ আছে, এ কথা আমি বলতে পারব না। আস্থা নেই, এ কথা বলতে আমি রাজি নই, আস্থা আছে। আস্থার হয়তো কিছু কমতি আছে। ধীরে ধীরে আমাদের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সহযোগিতা নিয়ে এই আস্থা বাড়াতে চেষ্টা করব।

বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো: গোলাম সারওয়ার স্বাক্ষরিত এ বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার ১২ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করিয়াছেন।এই নিয়োগ শপথ গ্রহণের তারিখ হইতে কার্যকর হইবে।’

তিনি হবেন দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি। বর্তমান প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী’র প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্বপালনের সময়সীমা ২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর দেশের ২৩ তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন তিনি।

বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ১৯৫৯ সালের ১১ জানুয়ারি নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ থানাধীন ছয়াশী (হাটনাইয়া) গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আখলাকুল হোসাইন আহমেদ মায়ের নাম বেগম হোসনে আরা হোসাইন। তার পিতা আখলাকুল হোসাইন আহমেদ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। তিনি গণপরিষদ সদস্য হিসেবে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সংবিধান রচনায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং গণপরিষদ কর্তৃক গৃহীত সংবিধানে স্বাক্ষর করেন।

তার অনুজ সাজ্জাদুল হাসান বর্তমানে নেত্রকোনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য।সাজ্জাদুল হাসান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ও বিমান পরিবহন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।

বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের স্ত্রী নাফিসা বানু বর্তমানে বাংলাদেশ রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ পরিচালনা পরিষদের একজন সদস্য (ফিন্যান্স) হিসেবে কর্মরত আছেন। তাদের সন্তান ব্যারিস্টার আহমেদ শাফকাত হাসান। তিনি ইউনিভার্সিটি অব ডারহাম থেকে আন্তর্জাতিক আইনে এলএল.এম. ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসএস (অনার্স), এমএসএস (অর্থনীতি) ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৮৬ সালে আইনজীবী হিসেবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের বারের সনদ পেয়ে জেলা বার-কমিটি যোগদান করেন। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে এবং ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তিনি সহকারী এটর্নি জেনারেল এবং ডেপুটি এটর্নি জেনারেল হিসেবে ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে ৫ বছর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে ২০০৯ সালের ৩০ জুন যোগদান করেন এবং ২০১১ সালের ৬ জুন একই বিভাগে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর একজন সদস্য হিসেবে ২০১২ সালের ২৫ মার্চ যোগদান করেন এবং ১৩ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে এই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হয়ে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ কর্মরত থাকাকালীন তার সময়ে ১১টি মামলার রায় প্রদান করা হয়েছে। তিনি ২০২০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।

বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ১৯৯১ সালে হংকং এ অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে সিঙ্গাপুরে একটি আইন সম্মেলনে যোগদান করেন এবং বুয়েন্স আয়ার্স, আর্জেন্টিনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ বিষয়ক একটি কনফারেন্সে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।

এছাড়াও ২০১৫ সালের আগস্ট মাসের শেষ দিকে নেদারল্যান্ডস এর হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, তৎকালীন যুগোস্লোভিয়া এর বিচারকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় যোগদান করেন। তিনি ‘অবর্ণনীয় নির্মমতার চিত্রঃ একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য’এবং ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশঃ একজন যুদ্ধশিশুর গল্প ও অন্যান্য’ নামক দু’টি গ্রন্থ রচনা করেছেন।

এছাড়াও সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ১১ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্তমান প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর অনুপস্থিতিতে বা তার পুনরায় দায়িত্বভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনের দায়িত্ব প্রদান করেছেন।

ডিএএম/কেকে/

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *