মু: কাইয়ুম, সুপ্রিমকোর্ট প্রতিনিধি :
সুপ্রিমকোর্টে আওয়ামীপন্থী ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোল ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে।
এ সময় সুপ্রিমকোর্ট বার সম্পাদকের (আওয়ামীপন্থী) কক্ষ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে সভাপতি-সম্পাদকের কক্ষের সামনে এ হট্টগোল হয়।
দুপুর দেড়টায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও স্ত্রী ডাঃ জোবায়দা রহমানের কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।
সংবাদ সম্মেলন শেষে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন তারা।
অপরদিকে, ‘বিএনপির নৈরাজ্যের প্রতিবাদে’ আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরাও সুপ্রিমকোর্টে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় সভাপতি-সম্পাদকের কক্ষের সামনে আওয়ামীপন্থী ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মিছিল মুখোমুখি হয়। পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ চলাকালে দু’পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোল ও ধাক্কাধাক্কি হয়।
এক পর্যায়ে সুপ্রিমকোর্ট বারের আওয়ামীপন্থী কমিটির সম্পাদক আব্দুন নূর দুলালের কক্ষ ভাঙচুর করা হয় এবং তার নেমপ্লেট খুলে ফেলা হয়। এরপর সভাপতির কক্ষের নেমপ্লেটও খুলে ফেলা হয়।
বিএনপির ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ সংবাদ সম্মেলন করে বের হওয়ার সময় আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা আমাদের এক নারী আইনজীবীর ওপর হামলা করেন। তাকে উদ্ধার করতে গেলে তারা আরো মারমুখী আচরণ করেন। সম্পাদকের কক্ষ ভাঙচুরের অভিযোগ অস্বীকার করে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, তারা নিজেরা ভাঙচুর করে উল্টো আমাদের ওপর দোষ চাপাচ্ছে।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিমকোর্ট ইউনিট এর সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল বলেন, বিএনপি’ট ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান ও তার সহধর্মিণী ডা জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে ফরমায়েশী রায় বাংলার জনগণ মেনে নেয়নি। দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়াসহ বিএনপি নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। চলমান আন্দোলনে দেশবাসীর দাবীপূরণে সরকারকে পদত্যাগ করতেই হবে।
বার সম্পাদক আবদুন নুর দুলাল, ভাঙচুরের জন্য বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের দায়ী করেন। তিনি ঘরনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা ব্যক্ত করেন।
ভাঙচুরের ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করতে যায় বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের একটি প্রতিনিধি দল। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান। আইনজীবী প্রতিনিধিদের একজন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য ও সুপ্রিমকোর্ট বার এর সাবেক সহসম্পাদক মাহবুবুর রাহমান এ কথা জানান।
অফিসার ইনচার্জ শাহবাগ থানা বরাবরে এডভোকেট জেসমিন জাহান করিমের আনা এজাহারে বলা হয়, বিবাদী হিসেবে মমতাজ উদ্দিন ফকির, আবদুন নূর দুলাল, সাবিনা সুলতানা মলি, জেসমিন সুলতানা, জগলুল কবির,রশিদ বিশ্বাস, এ, কে, এম তৌহিদুর রহমান,মাসুদ রানা হাফিজসহ সুনির্দিষ্ট ২২ জনের নামোল্লেখ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবায়দা রহমান এর বিরুদ্ধে ঘোষিত রায়ের প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের উদ্যোগে ৩ আগস্ট দুপুর সোয়া ১ টায় সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির ১নং হলে পূর্ব নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলন চলাকালীন সময়ে আসামীগণ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির ১ নং হলে জোরপূর্বক প্রবেশ করে জয় বাংলা ধ্বনিতে স্লোগান দিয়ে সংবাদ সম্মেলন বানচালে চেষ্টা করেন।
ওই সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ও সাবেক স্পিকার জনাব জমিরুদ্দিন সরকার, সিনিয়র আইনজীবী ও সাবেক মন্ত্রী মীর মোঃ নাসির উদ্দিন, বাবু নিতাই রায় চৌধুরী, সিনিয়র এডভোকেট ও সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সম্পাদক জয়নুল আবেদীন এবং সিনিয়র আইনজীবী সাবেক এটর্নি জেনারেল, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী, সিনিয়র আইনজীবী, সাবেক সম্পাদক সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এর মেম্বার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও বার কাউন্সিলের মেম্বার ব্যারিস্টার মোঃ রুহুল কুদ্দুস (কাজল) ও বাংলাদেশ আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামালসহ উপস্থিত অন্যান্য সিনিয়র আইনজীবী, আইনজীবী এবং প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
তাৎক্ষনিকভাবে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাধারণ আইনজীবী আসামীদের কর্মকান্ডে প্রতিবাদ করলে তারা সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের কক্ষের সামনে অবস্থান গ্রহণ করে ও বিভিন্নরকম উস্কানীমূলক স্লোগান দিতে থাকে। আসামীরা মারামারি করেন এবং বারের অগ্নি নির্বাপনের কাজে রক্ষিত গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে সাধারণ আইনজীবীদের মধ্যে গ্যাস নিঃস্বরণ করে সমিতির ১নং হল এলাকায় ও বারান্দা ধোয়াচ্ছন্ন করে ফেলে। এ সময়ে পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে আসামীগণ বারের সভাপতি সম্পাদকের কক্ষ সহ অন্যান্য কক্ষের নেম-প্লেট অপসারণসহ সম্পাদকের কক্ষের দরজা জানালা ভাংচুর করে। তাৎক্ষনিকভাবে সাধারণ আইনজীবীরা আহত আইনজীবীদেরকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। আহতের চিকিৎসাপত্র পরে সরবরাহ করা হবে। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনে দাবী জানানো হয় এজাহারে।
এমকে/ডিএএম//
Leave a Reply