হোমল্যান্ড লাইফ ইন্সুরেন্সের কাছে গ্রাহকদের বীমা দাবী ৭৯ কোটি টাকা : দাবী পরিশোধে পরিচালনা পর্ষদের গড়িমসি
- Update Time : ০৬:১৮:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩১ জুলাই ২০২৩
- / ১ Time View
দিদারুল আলম :
হোমল্যান্ড লাইফ ইন্সুরেন্স লিমিটেডের কাছে গ্রাহকদের পাওনা বীমা দাবী প্রায় ৭৯ কোটি টাকা। গ্রাহকদের এ দাবী পরিশোধে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের গড়িমসি করছেন।
হোমল্যান্ড লাইফ ইন্সুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল গ্রাহকদের বীমা দাবী পরিশোধের নির্দেশনার প্রার্থনা জানিয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বরাবার গত ৯ জুলাই আবেদন করেন। সে আবেদনে বলা হয়, কোম্পানীর কাছে গ্রাহকের পাওনা বীমা দাবীর পরিমান ৭৯ কোটি টাকা। কোম্পানীর বকেয়া দাবী পরিশোধের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। গ্রাহকগণ প্রতিনিয়ত বিভিন্ন অফিসে হামলা করছে, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান-দপ্তরে বীমা দাবী না পাওয়ার অভিযোগ দাখিল করছেন। গ্রাহকরা দাবী আদায়ে মামলা করছেন। গ্রাহকরা পাওনা আদায়ে কোম্পানীর প্রধান কার্যালয় ও সার্ভিসিং সেন্টারে এসে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে নাজেহাল করছেন। মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার আবেদনে গ্রাহকদের ন্যায্য দাবী পরিশোধে জরুরী ভিত্তিতে আপাতত: নূন্যতম ১০ কোটি টাকা বিজিটিবি নগদায়ণের নির্দেশনার জন্য অনুরোধ করা হয়। পরিশোধিত বীমা দাবীর হিসাব বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বরাবর দাখিল করা হবে বলে আবদনে উল্রেখ করা হয়।
এর আগে গত ২৬ জুন হোমল্যান্ড লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল কোম্পানীর চেয়ারম্যান ও পরিচালনা পর্ষদ বরাবরও গ্রাহকদের পাওনা বীমা দাবীর বিস্তারিত ও বিদ্যমান বাস্তবতা উল্লেখ করে বকেয়া দাবী পরিশোধের উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ জানান। মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, পরিচালনা পর্ষদ গ্রাহকদের বকেয়া দাবী পরিশোধে এখনো কার্যকর ও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেননি। গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধে পর্যান্ত অর্থ কোম্পানীর রয়েছে বলে দাবী মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার। তিনি জানান, হোমল্যান্ড লাইফের মূল লক্ষ্যই হলো গ্রাহক যেখানেই থাকুক, আমরা সর্বদা আপনার-ই পাশে। তাই গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। সময়মতো বীমা দাবী পরিশোধ না করায় এবং গ্রাহক হয়রানির মুখে পড়ায় জীবনবীমাখাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলেও মনে করেন ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল।
২০২২ সালের ২ অক্টোবর বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অভিযোগ ও তদন্ত শাখার দেয়া এক নোটিশে কোম্পানীর কতগুলো বীমা দাবী অনিস্পন্ন রয়েছে তার বিস্তারিত কর্তৃপক্ষ বরাবর দাখিল করার পাশাপশি ৫,৯৫২টি বীমা দাবী ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বরের তারিখের মধ্যে পরিশোধ করে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন। বীমা দাবী পরিশোধ না করার গ্রাহকদের আনা মামলায় কোম্পানীর ৭ জন পরিচালককে গ্রেফতারের পর জেলহাজতে প্রেরণের কথা নোটিশটিতে উল্লেখ করা হয়। মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল জানান, ওই নোটিশের পর গ্রাহকদের দাবীর মধ্যে প্রায় ২৮ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়। এখনো প্রায় ৭৯ কোটি টাকা বকেয়া দাবী রয়েছে। দাবী আদায়ে গ্রাহকরা প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে আসছেন। এখন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগের অভাবে আমরা গ্রাহকদের বকেয়া পরিশোধ করতে পারছিনা। প্রতিনিয়ত নানা চাপ ও নাজেহালের মূখোমুখি হতে হচ্ছে কর্মকর্তাদের।
এদিকে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্সুরেন্সের গ্রাহকদের ১০৪ কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা তদন্তে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বীমা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (ইন্সুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলিটরি অথোরিটি) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। প্রতিষ্ঠানটির ১৪ গ্রাহকের পক্ষে রহিমা আক্তারের আনা রিটের শুনানি নিয়ে গত ২৭ মার্চ এ আদেশ দেন বিচারপতি মো: নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াত সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ। এ সংক্রান্ত রিটে অর্থ সচিব, ইন্সরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলিটরি অথোরিটির চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, হোমল্যান্ড ইন্সুরেন্সের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানসহ প্রতিষ্ঠানটির ১৪ পরিচালককে বিবাদী (রেসপনডেন্ট) করা হয়।
বিভিন্ন প্রতিবেদনে জানা গেছে, কোম্পানীটিতে লন্ডন প্রবাসী সিলেটের পরিচালকদের একটি গ্রুপে প্রতারণার খপ্পরে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্সুরেন্স। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে সিলেটেই করতে পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক। এই গ্রুপটি কোম্পানীর তহবিল থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ১০৪ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। জালিয়াতি করে জমি ক্রয়ে ভুয়া নথি তৈরি, কমিশন ও অন্যান্য খাতে খরচের ভাউচার তৈরি করে এসব টাকা আত্মসাত করা হয়। নথিপত্রে দেখা গেছে-এই প্রতিষ্ঠানের নামে অস্তিত্ববিহীন জমি কেনা হয়েছে। আবার সেই জমিতে মাটি ভরাট ও কাটা তারের বেড়া তৈরির নামে আরও অর্থ লোপাট করা হয়েছে। কোম্পানীর ১৩১ তম বোর্ড সভায়ও টাকা লোপাটের বিষয়টি উঠে আসে।
ভুক্তভোগী গ্রাহকদের অনেকে জানান, হোমল্যান্ড লাইফ ইন্সুরেন্সের হেড অফিসে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছি। টাকা দিচ্ছেনা ওরা। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ অফিসেও আমাদের বকেয়া পরিশোধের উদ্যোগ নিতে আবেদন করেছি। হাইকোর্টে রিট মামলায় আমাদের আবেদন নিস্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্টদের আদেশ দিলেও তারা এখনো ইতিবাচক পদক্ষেপ নেননি।
ডিএএম/কেকে//