মু: কাইয়ুম, সুপ্রিমকোর্ট প্রতিনিধি:
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির (সুপ্রিমকোর্ট বার) নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি-সমমনা সমর্থিতসহ সাধারণ আইনজীবীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ডিম ছোড়াছুড়ি ও স্লোগান-পাল্টা স্লোগানে দিনভর উত্তাল ছিল সুপ্রিমকোর্ট বার ভবন।
রোববার ২ এপ্রিল দুপুর ১টা থেকে সুপ্রিমকোর্ট বার ভবনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের স্লোগান ও পাল্টা স্লোগানে হট্টগোল সৃষ্টি হয়। এ সময় ডিম ছোড়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবীরা জানান, বিপুল বাধা, প্রতিবাদের পরও জালিয়াতির মাধ্যমে নির্বাচিত দেখানো কমিটির সদস্যদের উদ্দেশ্য করে ডিম ছোড়ার ঘটনা ঘটে।
আওয়ামী সমর্থক আইনজীবীরা দুপুরে সুপ্রিমকোর্ট বার ভবনের সভাপতি-সম্পাদকের কক্ষের সামনে অবস্থান নেন। তারা সমিতি ভবনে এবং নিচতলায় অডিটোরিয়ামের সামনে বিক্ষোভ করেন।
অপর দিকে বিএনপি সমর্থক ও সাধারণ আইনজীবীরা বার ভবনের নিচতলায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। তারা ভোট চোর ভোট চোর স্লোগানে প্রকম্পিত করে ভার ভবন। আওয়ামী সমর্থকদের বার মর্যাদা বিনষ্টের জন্য দায়ী করে নানা স্লোগান দেন।
জাতীয়াতাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিমকোর্ট ইউনিটের সাধারন সম্পাদক এডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল এবং বিএনপি-সমমনা সমর্থিত নীল প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার মো: রুহুল কুদ্দুস কাজলের নেতৃত্বে আইনজীবীরা বিক্ষোভ করেন।
বিক্ষোভ-সমাবেশে ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, ভোট ডাকাতির বিরুদ্ধে সকল আইনজীবী অবস্থান নিয়েছে। তারা সুপ্রিমকোর্টে গোলযোগ সৃষ্ট করেছে। এই প্রতিষ্ঠানকে বিতর্কিত করেছে। এদের বিচার করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে ঘৃণা ছড়াতে হবে এবং প্রতিবাদ অব্যাহত রাখতে হবে। এই অবৈধ ভোট ডাকাতরা সুপ্রিম কোর্টের পবিত্র যায়গায় ডুকতে না পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা বার ভবনে অবস্থান করব। তাদেরকে সুপ্রিমকোর্ট কিছু করতে দেয়া হবে না। এডহক কমিটি হয়েছে, এই কমিটিই সমিতির বৈধ কমিটি। এই কমিটি কাজ করবে। আইনজীবী সবাইকে অনুরোধ করছি এডহক কমিটিকে সহযোগিতা করুন।
এদিকে রোববার ২ এপ্রিল বেলা সাড়ে ৩ টায় সুপ্রিমকোর্ট বার আওয়ামী সমর্থিত অংশ সমিতির নতুন কমিটির দায়িত্বগ্রহন অনুষ্টান হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের দুই ঘন্টা আগে সমিতি মিলনায়তনে তড়িঘড়ি করে দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্টান শেষ করা হয়।
এডহক কমিটির মতবিনিময়
আইনজীবীদের পাল্টাপাল্টি স্লোগানের মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামের সামনে নবগঠিত এডহক কমিটি মতবিনিময় করে। কমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র এডভোকেট মোহাম্মদ মহসিন রশিদ বলেন, দুপুর ২টায় আইনজীবীদের সঙ্গে অডিটোরিয়ামে আমাদের মতবিনিময় করার কথা ছিল। কিন্তু চর দখলের মতো তারা চারিদিকে তালা মেরে রেখেছে। তালা মারা থাকায় আমরা অডিটোরিয়ামের সামনেই মতবিনিময় করছি।
তিনি বলেন, আমরা বেলা ১১টায় বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধাণ প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার এম আমির-উল ইসলামের নেতৃত্বে প্রধান বিচারপতির সাথে দেখা করেছি। তাঁকে আমরা একটি স্মারকলিপি দিয়েছি। সেখানে আমরা বলেছি, এই অনির্বাচিত সভাপতি ও সম্পাদকের সাথে আপনি কোনো সম্পর্ক রাখবেন না। সভাপতি ও সম্পাদক হিসেবে কোনোভাবেই তাদের আপনি গ্রহণ করবেন না। আমরা সুপ্রিম কোর্ট বারের অফিসকেও জানিয়ে দিয়েছি। শুধু আমাদের আদেশই মানবেন। অন্য কোনো আদেশ চলবে না। আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি। আমার নেতৃত্বে গঠিত সমিতির এডহক কমিটিই সম্পূর্ণ বৈধ। তারা সমিতির ডিগনিটি নষ্ট করেছে।
এ সময় এডহক কমিটির সদস্য সচিব শাহ আহমেদ বাদল, কমিটির সিনিয়র সদস্য গিয়াস উদ্দিন আহমেদসহ কয়েকশ’ আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
সুপ্রিমকোর্টের বিপুল সংখ্যক আইনজীবী তলবি সভা ডেকে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন। বৃহস্পতিবার ৩০ মার্চ সুপ্রিমকোর্ট বার এর সদস্যদের ব্যানারে আয়োজিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন সমিতির সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট আইনজীবী ও দেশের সংবিধান প্রনয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম।
সভায় আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদকে আহ্বায়ক ও আইনজীবী শাহ্ আহমেদ বাদলকে সদস্য সচিব করে সুপ্রিমকোর্ট বারে ১৪ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটির সদস্য সচিব বাদল এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, বার সমিতির সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৭(৩)(এ) অনুযায়ী ব্যাপক উপস্থিতির মধ্য দিয়ে বার ভবনের এনেক্স হল রুম ১ ও ২ এ তলবি সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম। এতে সাবেক সভাপতি, সম্পাদক ও সিনিয়র আইনজীবী নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় নেয়া সিদ্ধান্তগুলো হলো- এক. ১৫-১৬ মার্চ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। দুই. মোহাম্মদ মহসিন রশিদকে আহ্বায়ক ও শাহ আহমেদ বাদলকে সদস্য সচিব করে ১৪ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন. এ কমিটি সমিতির সংবিধান অনুযায়ী অপশন ফরম বিতরণ করে ১৫ মের মধ্যে নতুন ভোটার তালিকা প্রণয়ন করবে এবং ১৪ ও ১৫ জুন সুপ্রিমকোর্ট বারের নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। চার. প্রধান বিচারপতির সঙ্গে যোগাযোগ করে বারের ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ বারের রুটিন কার্যক্রম পরিচালনা করবে অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি। পাঁচ. ১ এপ্রিল থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত বারের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী তথা বারের অফিস অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
তলবি সভায় গঠিত ১৪ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সদস্যরা হলেন-গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, এ কে এম জগলুল হায়দার আফ্রিক, মো. নজরুল ইসলাম, ড. রফিকুল ইসলাম মেহেদী, ড. এম খালেদ আহমেদ, তৈমূর আলম খন্দকার, এস এম খালেকুজ্জামান, মির্জা আল মাহমুদ, মো. সাইফুর রহমান, ব্যারিস্টার সরওয়ার হোসেন, ড. শামসুল আলম ও এস এম জুলফিকার ইসলাম জুনু।
এছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির উপদেষ্টা কমিটিতে রাখা হয়েছে-সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, হাসান আরিফ, জয়নুল আবেদীন, হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া, এ জে মোহাম্মদ আলী, এম কে রহমান ও আবু সাইদ সাগরকে।
এর আগে ১৫ ও ১৬ মর্চ হট্টগোল, হামলা, ভাঙচুর, মামলা, সাংবাদিক পেটানো, প্রধান বিচারপতির কাছে নালিশ ও ধাক্কাধাক্কির মধ্যে অনুষ্ঠিত সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির দুদিনব্যাপী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৪টি পদের সবকটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেলকে জয়ী ঘোষণা করা হয়।
এদিকে আওয়ামী সমর্থিত প্যানেল ছাড়া ১৫ ও ১৬ মার্চে কোন নির্বাচন হয়নি বলে দাবী নির্বাচনে অংশ নেয়া অন্য সব প্রার্থীদের। এ নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের মর্যাদাপূর্ণ আইনজীবী সমিতির ঐতিহ্য বিনষ্টের বিরুদ্ধে প্রতিদিনই প্রতিবাদ কর্মসূচি করছে আইনজীবীদের বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ আইনজীবীগন।
এমকে/এসএম//
Leave a Reply