সুপ্রিমকোর্ট প্রতিবেদক:
পাচার করা অর্থ উদ্ধারে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি (জিটুজি) বিষয়ে পরবর্তী প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) সময় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিএফআইইউর প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াত সমন্বয়ে গঠিত একটি ডিভিশন বেঞ্চ আজ এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি এটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। দুদকের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র এডভোকেট খুরশীদ আলম খান।
ডেপুটি এটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন মানিক জানান, আদালত সরকার টু সরকার (জি টু জি) চুক্তির বিষয়ে বলেছেন। এটি বিএফআইইউর প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিল না। এ কারণে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রতিবেদন দিতে তিনমাসের সময় চেয়েছিলাম। আদালত সময় দিয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
বিএফআইইউয়ের দাখিল করা প্রতিবেদনে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য, সাক্ষ্যপ্রমাণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য অন্তত ১০টি দেশের সঙ্গে পারস্পরিক আইনগত সহায়তা চুক্তি (এমএলএ) সইয়ের যৌক্তিকতা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে। দেশগুলো- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, হংকং-চীনা।
গত ১০ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি শুয়ার্ড বলেন, সুইস ব্যাংকে জমা রাখা অর্থের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির জন্য তথ্য চায়নি। সুইস ব্যাংকের ত্রুটি সংশোধনে সুইজারল্যান্ড কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তবে আমি আপনাদের জানাতে চাই, সুইজারল্যান্ড কালো টাকা রাখার কোনো নিরাপদ ক্ষেত্র নয়।
গত ১১ আগস্ট বিষয়টি নজরে নিয়ে সুইস ব্যাংকে অর্থ জমাকারীদের তথ্য কেন জানতে চাওয়া হয়নি, তা রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) জানাতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বলেছেন হাইকোর্ট। এরপর আদালতে দুদক এবং বিএফআইউর পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ হলফনামা আকারে তথ্য দাখিল করে। ওই হলফনামায় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় বিএফআইইউ প্রধানকে তলব করা হয়। সেই তলবে ৩১ আগস্ট হাজির হয়ে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুরসণ না করায় বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস ক্ষমা চান। পরে আদালত তাকে সতর্ক করে দেন।
ওই দিন অর্থপাচার প্রতিরোধ সংক্রান্ত ভারতের ‘রামজিৎ মালানি বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া’ মামলার রায় পড়ার পরামর্শ দিয়ে বিএফআইইউ প্রধানের উদ্দেশ্যে আদালত বলেন, কেবল চিঠি চালাচালিই (বিভিন্ন দেশের এফআইইউকে) যথেষ্ট নয়। আইনের মধ্যে যথাযথ প্রক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ না করলে ৫০ বছরেও পারবেন (অর্থপাচার ও পাচারকারীদের তথ্য) না।
মাসুদ বিশ্বাস বিএফআইইউর কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন, ২০১৭ থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত দুদক, এনবিআর এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে এ পর্যন্ত ৯৮৩টি ইন্টিলিজেন্স প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। তিনি বলেন, বিদেশে ৬৪৪টি অনুরোধ পেয়েছি। ১২৮টি রিসিভ করেছি। ৭৯ বার এফআইইউ টু এফআইইউ যোগাযোগ হয়েছে।
তখন আদালত এফআইইউ টু এফআইইউ চুক্তি হওয়া উচিত বলে অভিমত দিয়ে বলেন, ভারত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করে ৭৮৪ জনের টাকা ফেরত এনেছে। ভারত পারলে আমরা কেন পারবো না? কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন আমাদের জানান। গবেষণা সেল তৈরি করেন। সেল তৈরি করে আমাদের জানান। দেশের স্বার্থে আপনাকে ডেকেছি। আমরা যা করি দেশ-জনগণের কল্যাণে করছি।
একইসঙ্গে বিএফআইইউ কোন কোন দেশের কাছে অর্থপাচার ও পাচারকারীদের তথ্য চেয়েছে, কী তথ্য পেয়েছে, তথ্য পেয়ে থাকলে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে এবং পাচার করা অর্থ উদ্ধারে কী পদক্ষেপ নিয়েছে, এসব বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে বলে আজ ২৬ অক্টোবর পরবর্তী আদেশের জন্য রেখেছিলেন। সে অনুয়ায়ি বিষয়টি নিয়ে আজ ফের আদেশ দিলেন আদালত।
ডিএএম/কেকে//
Leave a Reply