সারাদেশ ডেস্ক :
কোনো সরকারি কর্মচারীকে ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার করতে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নেওয়া সংক্রান্ত সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ এর ৪১(১) ধারা বাতিল করে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ।
বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
একইসঙ্গে শুনানি ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত মুলতবি করেছেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
এর আগে ২৫ আগস্ট সকালে বিচারপতি মো.মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দেন।
ফলে সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতারে এখন আর অনুমতি লাগবে না বলে জানিয়েছেন আইনজীবী।
রায়ের পর একইদিন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, অনেক সময় দেখা যায় সরকারি কর্মচারীদের অযথা হয়রানির জন্য মিথ্যা মামলা দেন। আর তাকে যদি মামলার পর গ্রেফতার করা হয়, পরে তিনি যদি এ মামলায় খালাস পান তাহলে এটা একটা ভোগান্তি। এ ভোগান্তি নিরসন এবং সরকারি কাজের সুবিধার জন্য আইনটা করা হয়েছিলো। আদালত আজকে যে রায় দিয়েছেন তার অনুলিপি পেলে আমরা আপিল করবো।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে।
আদালতে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে রিট আবেদনটি করেন আইনজীবী সরোয়ার আহাদ চৌধুরী, একলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া ও মাহবুবুল ইসলাম।
রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী রিপন বাড়ৈ ও সঞ্জয় মণ্ডল।
রায়ের বিষয়ে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, আদালত রায়ে সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ এর ৪১(১) ধারা বেআইনি, সংবিধান পরিপন্থী, মৌলিক অধিকার পরিপন্থী বলে ঘোষণা করেছেন। আদালত বলেছেন যে- সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে আছে আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা আছে। তারপরও ৪১(১) ধারা করে সেখানে সরকারি কর্মচারীদেরকে আলাদাভাবে একটি সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। তা কেনোভাবেই সংবিধান সম্মত নয়। এ আইনি একটি মেলাফাইড উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।
২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর রুল জারি করেন হাইকোর্ট। রুলে সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ এর ৪১(১) ধারা কেন বেআইনি ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না এবং সংবিধানের ২৬(১) (২), ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট।
ওই রুলে বৃহস্পতিবার রায় দেন হাইকোর্ট।
২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর সরকারি চাকরি আইনের গেজেট জারি হয়। এরপর ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এক গেজেটে বলা হয়-১ অক্টোবর থেকে এ আইন কার্যকর হবে।
আইনের ৪১ (১) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সহিত সম্পর্কিত অভিযোগে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত হবার আগে তাকে গ্রেফতার করিতে হলে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করিতে হইবে।
পরে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ জানিয়েছিলেন, ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইন ৪১(১) ধারায় বিশেষ সুবিধা দেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর জনস্বার্থে এ রিট দায়ের করা হয়।
তিনি বলেন, একই ধরণের সুযোগ দিয়ে ২০১৩ সালে দুদক আইনের ৩২(ক) ধারা প্রণয়ন করলে জনস্বার্থে রিট করলে আদালত আইনটিকে বৈষম্যমূলক বলে বাতিল ঘোষণা করেন। একই সুযোগ সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের দেওয়ার জন্য ২০১৮ সালে প্রণীত উক্ত আইনের ৪১(১) ধারা আদালতের রায়ের পরিপন্থী।
Leave a Reply