Dhaka ০৭:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বিএফইউজে-ডিইউজে’র আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত ১৯ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে অবকাশ : জরুরি মামলা শুনানিতে অবকাশকালীন বেঞ্চ জান প্রাণ দিয়ে জনআস্থা ধরে রাখতে হবে : তারেক রহমান বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যান সমিতির নতুন কমিটির অভিষেক : সভাপতি রফিকুল মহাসচিব সাত্তার সাংগঠনিক তোফাজ্জল কোটায় চাকরি : কুমিল্লার এসপি হচ্ছেন জুলাই বিপ্লবে গুলি করা ছাত্রলীগ ক্যাডার নাজির সম্প্রচারিত সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, কাল্পনিক এবং ভিত্তিহীন : সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন মতিঝিল থানা ৮নং ওয়ার্ড যুবদলের কর্মীসভা অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগসহ ১১টি দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে রিট বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যান সমিতির সভাপতি রফিক, মহাসচিব সাত্তার সাংগঠনিক সম্পাদক তফাজ্জল বুড়িচং জগতপুরে অগ্নিকাণ্ডে নিঃস্ব হয়ে গেছে একটি পরিবার

১৯৭৫ এর ৭ নভেম্বর বিটিভির চার কর্মকর্তাকে হত্যা মামলার বিচারে আইনি বাধা নেই

  • Update Time : ০৪:২১:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ অগাস্ট ২০২২
  • / ১ Time View

সুপ্রিমকোর্ট প্রতিবদেক:
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর বিটিভির চার কর্মকর্তাকে হত্যা মামলা স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেছেন হাইকোর্ট।

ফলে ৪৭ বছর আগে সংগঠিত হত্যার ঘটনায় আনা মামলা বিচার এখন আর কোনো আইনগত বা্ধা রইল না।

বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদার সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ আজ এ আদেশ দেয়।

রাষ্ট্রপক্ষে সহকারি এটর্নি জেনারেল
শামীম খান আদালতের আদেশের বিষয়টি বাসস’কে জানান।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল সামিরা তারান্নুম রাবেয়া (মিতু), সহকারি এটর্নি জেনারেল শামীম খান ও কাজী সামসুন নাহার।

এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর বিটিভির চারজন কর্মকর্তা যখন তারা অফিসে গেলেন তখন সেখানে সেনাবাহিনীর যে কর্মকর্তারা ছিলেন এবং বিটিভির কিছু কর্মকর্তা এই চারজনকে একটা রুমে নিয়ে আটকে রাখেন। এভাবে যখন তাদেরকে আটকে রাখেন তখন তাদের পরিবারের লোকেরা গেলে ছেড়ে দেয়া হবে বলে তারা জানায়। কিন্তু তারা তাদেরকে ছাড়েনি। পরে ওই দিনই তাদেরকে গাড়িতে করে অন্যত্র নিয়ে যায়। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে জিডি করা হয়। এরপর আর তাদের কোনো খোজ পাওয়া যায়নি। এরপর ১৯৭৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে টেলিভিশনের পাশের খালে তাদের লাশ ভেসে উঠে। পরে তাদের পরনের কাপড় চোপড় দেখে তিনজনকে সনাক্ত করা হয়। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় ১৯৭৮ সালের জানুয়ারি মাসে কিছুই পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে চুড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া হয়। ওই রিপোর্ট আদালত গ্রহণ করেন। এরপর মামলাটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে তখন নিখোজের একজনের পরিবারের সদস্য ১৯৯৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। তখন প্রধানমন্ত্রী এটা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে পাঠান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের আবার সিআইডির কাছে পাঠায়। সিআইডি তখন আদালতে আবেদন করে পুন:তদন্তে আবেদন জানান। তখন আদালতের অনুমতি নিয়ে পুন:তদন্ত করে চার্জশীট দেয়। চার্জশীটে চারজনকে আসামি করা হয়। সেই সময়ে কর্মরত সামরিক ও বেসামরিক যারা ছিলেন তাদের সাক্ষ্য নেয়া হয়।

কিন্তু এরমধ্যে মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হলে আদালত মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে। সেই থেকে মামলাটি স্থগিত ছিল। আজকে সেই স্থগিতাদেশসহ জারি করা রুল খারিজ (ডিসচার্জ) করে দিয়েছে হাইকোর্ট। ফলে এখন মামলাটি চলবে।

মামলার নথিপত্র থেকে জানা যায়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রেডিও ও টিভি স্টেশনে সেনা মোতায়েন করা হয়। ওই সময় দাবি-দাওয়া নিয়ে বিটিভির তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী কল্যাণ সমিতির আন্দোলন চলছিল। রামপুরা টিভি ভবনে নিয়োজিত অনারারি লেফটেন্যান্ট (অব.) আলতাফ হোসেনের সঙ্গে কর্মচারী নেতাদের সমঝোতা হয়। ৬ নভেম্বর রাতে আলতাফসহ আসামিদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আটক করে দাবি আদায় করা হবে। পরদিন সকালে মনিরুল, আকমল ও সিদ্দিক ফটকে এলে তাদের বিটিভির ১০১ নম্বর কক্ষে আটকে রাখা হয়। পরে ক্যামেরাম্যান ফিরোজকেও আটক করে তারা। পরদিন রাতে তিনজনকে রামপুরা টিভি ভবনের পেছনে নিয়ে হত্যা করে হাতিরঝিলে লাশ ফেলে দেয়া হয়। চার কর্মকর্তার খোঁজ না পেয়ে ১৯ নভেম্বর তাদের স্ত্রীরা গুলশান থানায় চারটি অপহরণ মামলা করেন।

হাতিরঝিলের পানি শুকিয়ে গেলে ১৯৭৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তিনটি কংকাল পাওয়া যায়। ফরেনসিক পরীক্ষায় সেগুলো কাইয়ুম, সিদ্দিক ও আকমলের বলে চিহ্নিত হয়। কিন্তু মনিরুলের খোঁজ মেলেনি। ১৯৭৮ সালে গোয়েন্দা পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলে আটকে যায় হত্যাকান্ডের বিচার। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে আকমলের স্ত্রী মনোয়ারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার আবেদন করেন।

১৯৯৭ সালের ২৫ মার্চ মামলার কার্যক্রম আবার শুরু হয়। মামলার প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা ফজলুল করিম খান ১৯৯৯ সালে অভিযোগপত্র দেন। অভিযুক্তরা গ্রেয়ফার হয়ে জামিনে মুক্ত হন।

২০০২ সালে মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে আসে। পরের বছর ৯ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। আসামিরা হলেন- একেএম জাকারিয়া হায়দার, আবুল কাশেম, সৈয়দ আইনুল কবীর, আয়নুজ্জামান এবং সাহজাহান মিয়াজী, আবুল কাশেম বাগোজা, লুৎফর রহমান তালুকদার, আলতাফ হোসেন ও আবদুল আউয়াল সরকার। আসামি আলতাফ ২০০৪ সালে হাইকোর্টে মামলা বাতিল চেয়ে আবেদন করেন। এরপর থেকে আটকে আছে বিচার।

আসামিদের মধ্যে আয়নুজ্জামান ২০০৪ সালে মারা যান। তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে আরও ৩ জন মারা গেছেন। দুই আসামি পলাতক রয়েছে।

ডিএএম/কেকে//

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

১৯৭৫ এর ৭ নভেম্বর বিটিভির চার কর্মকর্তাকে হত্যা মামলার বিচারে আইনি বাধা নেই

Update Time : ০৪:২১:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ অগাস্ট ২০২২

সুপ্রিমকোর্ট প্রতিবদেক:
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর বিটিভির চার কর্মকর্তাকে হত্যা মামলা স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেছেন হাইকোর্ট।

ফলে ৪৭ বছর আগে সংগঠিত হত্যার ঘটনায় আনা মামলা বিচার এখন আর কোনো আইনগত বা্ধা রইল না।

বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদার সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ আজ এ আদেশ দেয়।

রাষ্ট্রপক্ষে সহকারি এটর্নি জেনারেল
শামীম খান আদালতের আদেশের বিষয়টি বাসস’কে জানান।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল সামিরা তারান্নুম রাবেয়া (মিতু), সহকারি এটর্নি জেনারেল শামীম খান ও কাজী সামসুন নাহার।

এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর বিটিভির চারজন কর্মকর্তা যখন তারা অফিসে গেলেন তখন সেখানে সেনাবাহিনীর যে কর্মকর্তারা ছিলেন এবং বিটিভির কিছু কর্মকর্তা এই চারজনকে একটা রুমে নিয়ে আটকে রাখেন। এভাবে যখন তাদেরকে আটকে রাখেন তখন তাদের পরিবারের লোকেরা গেলে ছেড়ে দেয়া হবে বলে তারা জানায়। কিন্তু তারা তাদেরকে ছাড়েনি। পরে ওই দিনই তাদেরকে গাড়িতে করে অন্যত্র নিয়ে যায়। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে জিডি করা হয়। এরপর আর তাদের কোনো খোজ পাওয়া যায়নি। এরপর ১৯৭৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে টেলিভিশনের পাশের খালে তাদের লাশ ভেসে উঠে। পরে তাদের পরনের কাপড় চোপড় দেখে তিনজনকে সনাক্ত করা হয়। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় ১৯৭৮ সালের জানুয়ারি মাসে কিছুই পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে চুড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া হয়। ওই রিপোর্ট আদালত গ্রহণ করেন। এরপর মামলাটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে তখন নিখোজের একজনের পরিবারের সদস্য ১৯৯৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। তখন প্রধানমন্ত্রী এটা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে পাঠান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের আবার সিআইডির কাছে পাঠায়। সিআইডি তখন আদালতে আবেদন করে পুন:তদন্তে আবেদন জানান। তখন আদালতের অনুমতি নিয়ে পুন:তদন্ত করে চার্জশীট দেয়। চার্জশীটে চারজনকে আসামি করা হয়। সেই সময়ে কর্মরত সামরিক ও বেসামরিক যারা ছিলেন তাদের সাক্ষ্য নেয়া হয়।

কিন্তু এরমধ্যে মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হলে আদালত মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে। সেই থেকে মামলাটি স্থগিত ছিল। আজকে সেই স্থগিতাদেশসহ জারি করা রুল খারিজ (ডিসচার্জ) করে দিয়েছে হাইকোর্ট। ফলে এখন মামলাটি চলবে।

মামলার নথিপত্র থেকে জানা যায়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রেডিও ও টিভি স্টেশনে সেনা মোতায়েন করা হয়। ওই সময় দাবি-দাওয়া নিয়ে বিটিভির তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী কল্যাণ সমিতির আন্দোলন চলছিল। রামপুরা টিভি ভবনে নিয়োজিত অনারারি লেফটেন্যান্ট (অব.) আলতাফ হোসেনের সঙ্গে কর্মচারী নেতাদের সমঝোতা হয়। ৬ নভেম্বর রাতে আলতাফসহ আসামিদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আটক করে দাবি আদায় করা হবে। পরদিন সকালে মনিরুল, আকমল ও সিদ্দিক ফটকে এলে তাদের বিটিভির ১০১ নম্বর কক্ষে আটকে রাখা হয়। পরে ক্যামেরাম্যান ফিরোজকেও আটক করে তারা। পরদিন রাতে তিনজনকে রামপুরা টিভি ভবনের পেছনে নিয়ে হত্যা করে হাতিরঝিলে লাশ ফেলে দেয়া হয়। চার কর্মকর্তার খোঁজ না পেয়ে ১৯ নভেম্বর তাদের স্ত্রীরা গুলশান থানায় চারটি অপহরণ মামলা করেন।

হাতিরঝিলের পানি শুকিয়ে গেলে ১৯৭৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তিনটি কংকাল পাওয়া যায়। ফরেনসিক পরীক্ষায় সেগুলো কাইয়ুম, সিদ্দিক ও আকমলের বলে চিহ্নিত হয়। কিন্তু মনিরুলের খোঁজ মেলেনি। ১৯৭৮ সালে গোয়েন্দা পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলে আটকে যায় হত্যাকান্ডের বিচার। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে আকমলের স্ত্রী মনোয়ারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার আবেদন করেন।

১৯৯৭ সালের ২৫ মার্চ মামলার কার্যক্রম আবার শুরু হয়। মামলার প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা ফজলুল করিম খান ১৯৯৯ সালে অভিযোগপত্র দেন। অভিযুক্তরা গ্রেয়ফার হয়ে জামিনে মুক্ত হন।

২০০২ সালে মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে আসে। পরের বছর ৯ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। আসামিরা হলেন- একেএম জাকারিয়া হায়দার, আবুল কাশেম, সৈয়দ আইনুল কবীর, আয়নুজ্জামান এবং সাহজাহান মিয়াজী, আবুল কাশেম বাগোজা, লুৎফর রহমান তালুকদার, আলতাফ হোসেন ও আবদুল আউয়াল সরকার। আসামি আলতাফ ২০০৪ সালে হাইকোর্টে মামলা বাতিল চেয়ে আবেদন করেন। এরপর থেকে আটকে আছে বিচার।

আসামিদের মধ্যে আয়নুজ্জামান ২০০৪ সালে মারা যান। তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে আরও ৩ জন মারা গেছেন। দুই আসামি পলাতক রয়েছে।

ডিএএম/কেকে//