আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে হামলার শিকার বুকারজয়ী লেখক সালমান রুশদিকে ভেন্টিলেটর থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ছুরিকাঘাতের একদিন পর এই লেখককে ভেন্টিলেটর থেকে সরিয়ে নেওয়া হলো। এছাড়া হামলায় আহত হওয়ার পর তিনি আবারও কথা বলতে সক্ষম হয়েছেন।
আজ রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। ৭৫ বছর বয়সী রুশদি নিউইয়র্কে একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করার সময় আক্রমণের শিকার হন এবং এরপর থেকেই গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে রয়েছেন।
সালমান রুশদিকে ভেন্টিলেটর থেকে সরিয়ে নেওয়া এবং তার আবারও কথা বলতে সক্ষম হওয়ার খবরটি মার্কিন গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন তার এজেন্ট অ্যান্ড্রু ওয়াইলি। তবে এর আগে তিনি বলেছিলেন, হামলার কারণে রুশদি একটি চোখ হারাতে পারেন।
১৯৮৮ সালে প্রকাশিত দ্য স্যাটানিক ভার্সেসের জন্য বহু বছর ধরেই সালমান রুশদি কট্টর ইসলামপন্থিদের হুমকি পেয়ে আসছিলেন। শুক্রবার নিউইয়র্কে একটি অনুষ্ঠান চলাকালেই তার ওপর হামলা হয়। হামলার পর পুলিশ হাদি মাতার নামে ২৪ বছর বয়সী এক যুবককে আটক করে।
বিবিসি বলছে, রুশদি তার উপন্যাস দ্য স্যাটানিক ভার্সেসের জন্য বছরের পর বছর মৃত্যুর হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। তার ওই উপন্যাসকে কিছু মুসলমান নিন্দাজনক বা অপবিত্র বলে মনে করেন।
অবশ্য হামলার জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তি শনিবার হত্যার চেষ্টার জন্য দোষী নয় বলে দাবী করেছেন এবং তাকে জামিন অযোগ্য বিধিতে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত হাদি মাতার নিউ জার্সির ফেয়ারভিউয়ের বাসিন্দা এবং ঘটনার দিন একটি পাস কিনে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেছিল সে।
সংবাদমাধ্যম বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের এক অনুষ্ঠানের মঞ্চে ছুরি হামলার শিকার হন ভারতীয় বংশোদ্ভূত উপন্যাসিক সালমান রুশদি। স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে নিউ ইয়র্কের শাটাকোয়া ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়েছিলেন বুকারজয়ী এই লেখক। যখন তাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছিল, তখনই এক লোক দৌড়ে স্টেজে উঠে ছুরি নিয়ে তার ওপর হামলা চালায়।
হামলায় ৭৫ বছর বয়সী রুশদির ঘাড়ে ও শরীরে জখম হয়েছে বলে নিউ ইয়র্ক পুলিশ জানিয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে হেলিকপ্টারে করে পেনসেলভেইনিয়ার ইরি হাসপাতালে নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, আহমেদ সালমান রুশদির জন্ম ১৯৪৭ সালে মুম্বাইয়ে এক কাশ্মিরি মুসলিম পরিবারে, ভারত ভাগের ঠিক আগে আগে। ১৯৮১ সালে তার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ প্রকাশিত হলে লেখক হিসেবে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। শুধু যুক্তরাজ্যেই বইটির ১০ লাখ কপি বিক্রি হয়।
১৯৮৮ সালে প্রকাশিত রুশদির চতুর্থ উপন্যাস ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ বিশ্বজুড়ে বিতর্কের জন্ম দেয়। বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভ আর সহিংসতার মধ্যে বহু দেশে বইটি নিষিদ্ধ হয়, রুশদির জন্মস্থান ভারতের সরকারই প্রথম সেই সিদ্ধান্ত নেয়। এ বই প্রকাশের পর প্রায় ১০ বছর তাকে আত্মগোপনে থাকতে হয়।
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি সে সময় এই লেখকের মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া ঘোষণা করেন। রুশদির মাথার দাম ঘোষণা করা হয় ৩০ লাখ ডলার। ইরানের সেই ঘোষণা এখনও বহাল আছে।
পরবর্তীতে ইরান সরকার খোমেনির ওই ঘোষণার বিষয়ে আর আগে না বাড়লেও সরকার সমর্থিত একটি ধর্মীয় ফাউন্ডেশন ২০২১ সালে পুরস্কারের ওই অংকের সঙ্গে আরও ৫ লাখ ডলার যোগ করার ঘোষণা দেয়।
Leave a Reply