নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি লাগামহীন
- Update Time : ০২:৩৬:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ অগাস্ট ২০২২
- / ১ Time View
নিজস্ব প্রতিবেদক :
শহর থেকে গ্রাম, পাহাড় থেকে সমতল দেশের সর্বত্রই নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি লাগামহীন।
সাধারণ মানুষ বলছে, জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ এবং সূযোগে মূল্যবৃদ্ধির এ হার বৃদ্ধি করছে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়িরা। নিম্ন আয়ের মানুষ এখন দিশেহারা। মধ্যবিত্তদেরও মাথায় হাত।
রাজধানীর রামপুরায় থাকেন কবির হোসেন। রামপুরা বাজারে ডিম কিনতে গিয়ে তিনি আকাশ থেকে পড়েন। এক সপ্তাহ আগেও যেখানে এক ডজন ডিম কিনেছিলেন ১২০ থেকে ১২৫ টাকা দিয়ে, শুক্রবার সেই ডিমের জন্য তাকে দিতে হলো ১৫০ টাকা। তিনশ’ টাকা নিয়ে বাজারে আসা কবির ভয়ে কুঁকড়ে যান। বাকি ১৫০ টাকা দিয়ে তাকে চাল, ডাল সহ অন্য পণ্য কিনতে হবে। কবির বললেন, এভাবে কি চলা যায়? এমন কোনো জিনিস নেই যেটার দাম বাড়েনি। শুধুমাত্র যে জিনিসটা বাড়েনি সেটা হলো বেতন। এখন বাজারের নাম শুনলেই ভয় হয়। বাজারে ঢুকলেই পকেট ফাঁকা হয়ে যায়।
বিভিন্ন বাজারে ক্রেতারা বলেন, স্বল্প আয়ের মানুষদের আমিষের প্রধান উৎস ডিম ও ব্রয়লার মুরগি। এই দুইটি জিনিসের দামই অনেক বেড়েছে। ডিমের দাম ডজনে ৩০ টাকা আর মুরগির দাম কেজিতে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। শুধুমাত্র ডিম আর মুরগিই না। বাজারে সব ধরনের জিনিসের দাম ১০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সাধ্যের মধ্যে কিছুই নেই।
সরজমিন বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে সাধারণ মানুষের আমিষের প্রধান উৎস ডিম। শহর গ্রাম পাহার সর্বত্রই একই অবস্থা। মুরগির লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা ডজনে। এক সপ্তাহ আগেও লাল ডিমের ডজন ছিল ১২৫ টাকা। মুরগির সাদা ডিমের দামও বেড়েছে। ২০ টাকা বেড়ে সাদা ডিমের ডজন ১৪০ টাকা।
বিক্রেতারা বলছেন, পরিবহন খরচসহ অন্যান্য খরচ বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে ডিমের সরবরাহও কমেছে। তাই ডিমের দাম বাড়তি। সামনে আরও খারাপ দিন আসছে। ডিমের দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকা ও পাকিস্তানি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৯০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল প্রতি কেজি ১৬০ টাকা ও পাকিস্তানি মুরগির দাম ছিল ২৮০ টাকা। এছাড়া বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ৭০০ টাকা, খাসির মাংস ১ হাজার টাকা।
মুরগি ব্যবসায়ীরা বলেন, ব্রয়লার মুরগির সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। মুরগির খাদ্যের দাম বেশি বলে অনেকেই মুরগি পালনে অনাগ্রহী। যে কারণে চাহিদা অনুযায়ী মুরগি পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া জ্বালানি তেলের প্রভাবও পড়েছে।
অন্যদিকে বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম। মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকা, আটাশ ৫৪ টাকা, নাজিরশাইল ৭০ টাকা থেকে বেড়ে ৮২ টাকা ও চিনিগুঁড়া ১১০ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকায়। এছাড়া কাটারি চাল ৬৮ টাকা থেকে বেড়ে ৭২ টাকা হয়েছে।
চালের দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন, আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ট্রাক আনতে ২৪ হাজার টাকা খরচ পড়তো। এখন তেলের দাম বাড়ায় ২৯ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। ফলে এই বাড়তি টাকা চালের দামে প্রভাব পড়েছে। তাই পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায় খুচরা বাজারে বেড়েছে।
বাজারে আবারো বেড়েছে খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ থেকে ১৯২ টাকা কেজি। তিনদিন আগেও খোলা সয়াবিন তেলের কেজি ছিল ১৬২ থেকে ১৬৬ টাকা। পাম তেলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজি। আগে যা ছিল ১৪০ টাকা কেজি।
তেলের দাম বাড়ার ব্যবসায়ীরা বলেন, খোলা সয়াবিন তেল ডিলারদের কাছ থেকে কিনতে হচ্ছে ১৯০ টাকা করে। বাজারে শুক্রবার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয় ১৯২ টাকায়। কিন্তু বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম আগের দামেই আছে।
বেড়েছে সব ধরনের সবজির দামও। কেজিপ্রতি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। এক সপ্তাহে আগে ছিল ৮০ টাকা। কাঁচামরিচ ২৪০ থেকে ২৭০ টাকা, এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ২০০ টাকা। পিয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা, আগে ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। বরবটি কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা, শসা ১০ টাকা বেড়ে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আলু ৩০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, পটল ঢেঁড়স ও চিচিঙ্গা ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সবজি বিক্রেতা শেখর দেবনাথ বলেন, দু’-একটি ছাড়া প্রতিটি সবজির দাম কেজিতে প্রায় ১০ টাকা বেড়েছে। জ্বালানি তেলের দামের কারণে এমনটা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বাজারে আদার দাম কেজি প্রতি বেড়েছে ৫০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে ৭০ টাকায় বিক্রি হওয়া আদার দাম এখন ১২০ টাকা। বড় দানা মসুর ডাল ১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আগে ছিল ১০০ টাকা। দেশি মসুর ডালের কেজি ১৩০ টাকা, যা আগে ছিল ১২৫ টাকা। খেসারির ডাল ৫ টাকা বেড়ে ৮০ টাকা হয়েছে। চিনির দাম কেজিপ্রতি ৭ টাকা বেড়ে ৮৭ টাকা হয়েছে।
মাছের বাজারও গরম। বাজারে বড় আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগেও ১ হাজর ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাঝারি ও ছোট আকারের ইলিশ যথাক্রমে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তেলাপিয়া ও পাঙাস মাছ প্রতি কেজি ১৮০ টাকা ও রুই মাছ আকার অনুযায়ী ২৮০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছে, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে বাজারে সব ধরনের মাছের দাম কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এছাড়া ইলিশ মাছের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তারা সরবরাহ সংকটের কথা বলছে।
এসএম/এসএ//