দিদারুল আলম :
সাংবাদিকতা পেশা হিসেবে যাত্রা শুরুর প্রাক্কালে পেশাগত সুরক্ষা ও মর্যাদা রক্ষায় সংগঠন প্রতিষ্ঠার বাস্তবতা তৈরি হয়।
ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ জনপদে সাংবাদিকদের ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার প্রায় ৭১ বছরের তথ্য রয়েছে। কিন্তু তা জাতীয় ভিত্তিক ছিল না, তা ছিল আঞ্চলিক বা প্রাদেশিক। দীর্ঘ সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী হয়ে স্বাধীন সার্বভৌম প্রিয় স্বদেশ বাংলাদেশ অর্জনের পর ১৯৭২ সালে রাজধানী ঢাকা কেন্দ্রীক প্রথম কোন সাংবাদিক সংগঠন ট্রেড ইউনিয়ন হিসেবে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
পেশা হিসেবে সংবাদিকার মর্যাদাবৃদ্ধি সাংবাদিকদের পেশাগত সুরক্ষা এবং দেশে গনতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে ডিইউজে’র রয়েছে সমৃদ্ধ ঐতিহ্য। ঐতিহ্য সৃষ্টি ও লড়াইয়ে রয়েছে অনেক কিংবদন্তি সাংবাদিক-নেতার অসীম অবদান।
ঐতিহ্যেবাহী ডিইউজে’র প্রতিষ্ঠবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে প্রথম কোন আয়োজন ৪ আগষ্ট বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে হয়ে গেলো।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ডিইউজে বিদ্যমান বাস্তবতার আলোকে একটি বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সভার আয়োজন করে। ডিইউজে’র সভাপতি কাদের গনি চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসালমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, বিএফইউজে ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, বিএফইউজের সভাপতি এম আবদুল্লাহ ও মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, ডিইউজে’র সাবেক সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ডিইউজে’র সাবেক সভাপতি বাকের হোসেইন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আহমেদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।
ওই অনুষ্ঠানে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের বিপুল সংখ্যক সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানটি ঘিরে ঐতিহ্যবাহী ডিইউজে’র প্রতিষ্ঠা কবে এটি নিয়ে সদস্যদের মাঝে জানার আগ্রহ তৈরি হয়। এ নিয়ে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের মেসেঞ্জার গ্রুপে বিষয়টি নিয়ে তথ্য সমৃদ্ধ একটি লেখা প্রকাশ করেছেন বিএফইউজে সভাপতি এম আবদুল্লাহ। যা হুবহু তুলে ধরা হয়েছে..
ডিইউজে’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কততম ?
‘১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হওয়ার পর পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়ন নামে সাংবাদিকদের ট্রেড ইউনিয়ন গঠিত হয় ১৯৫১ সালে। সে ইউনিয়ন ছিল গোটা পূর্বপাকিস্তানের প্রতিনিধিদের নিয়ে। শুধু ঢাকার নয়। পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়ন (ইপিইউজে)’র নেতৃত্ব দিয়েছেন এবিএম মূসা, আতাউস সামাদের মতো তখনকার বাঘা-বাঘা সাংবাদিকেরা।
পাকিস্তান আমলে সাংবাদিক ফেডারেশনের নাম ছিল পাকিস্তান ফেডারেল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্টস বা পিএফইউজে। অঙ্গ ইউনিয়ন ছিল ইপিইউজেসহ বিভিন্ন প্রাদেশিক সাংবাদিক ইউনিয়ন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের জুলাই মাসে গঠিত হয় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। এর পর একে একে বিভাগীয় শহরে ইউনিয়ন গঠন করে ১৯৭৩ সালের জুন মাসে বিএফইউজে গঠিত হয়। দিন তারিখসহ এসব প্রমান পত্রিকার পাতায় এবং এবিএম মূসা, কামাল লোহানী, আতাউস সামাদের লেখায় রয়েছে।
প্রামাণ্য ইতিহাস অনুযায়ী ডিইউজে ১৯৭২ সালের জুলাইতে জন্ম এবং ১৯৯৫ সালে রেজিষ্ট্রেশন হয়। ইপিইউজের জন্ম সাল ১৯৫১ কে ডিইউজের হিসেবে নেওয়া যায় না। কারণ সেটি ছিল গোটা পূর্বপাকিস্তান ভিত্তিক আর ডিইউজে হচ্ছে ঢাকা ভিত্তিক। আবার ১৯৫১ সালের ইপিইউজের জন্ম বছর ধরে হিসাব করলেও ৭১ বছর হয় ৭৫ নয়। আর সঠিক জন্ম বছর ধরে করলে ১৯৭২ থেকে গত জুলাইতে ৫১ বছরে পা দিয়েছে। আর বিএফইউজে এই জুনে ৫০ বছরে বা সুবর্ণ জয়ন্তীতে পা ফেলেছে।
হঠাৎ ৭৫ বছর প্রচার ও পালনের ঘোষণা কিসের ভিত্তিতে তা অজানা। অবশ্য গতকালের অনুষ্ঠানের ব্যানারে শেষ মূহুর্তে ৭৫ উল্লেখ না করা ইতিবাচক। প্রথম বারের মত প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের উদ্যোগও প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু ইতিহাস বিকৃতি বা ভুল ও ভিত্তিহীন কোন কিছু করা ঠিক হবে না। আশা করি এ ব্যাপারে সবাই সত্যনিষ্ঠ হবেন। ৫১ বছরও কম একটি সংগঠনের জন্যে কম গৌরবের নয়। সেটিই উদযাপন করতে সমস্যা কোথায়?
ডিএএম/কেকে//
Leave a Reply