মানবতাবিরোধী অপরাধে খুলনার ৬ জনের মৃত্যুদন্ড
- Update Time : ০৫:১৩:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই ২০২২
- / ১ Time View
নিজস্ব প্রতিবেদক:
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় খুলনার বটিয়াঘাটার ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়ে আজ রায় ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এটি মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ৪৮ তম রায়।
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল আজ এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর সদস্যরা হলেন-বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কেএম হফিজুল আলম। দণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামি হলেন- আমজাদ হোসেন হাওলাদার, সহর আলী সরদার, আতিয়ার রহমান, মোতাছিম বিল্লাহ, কামাল উদ্দিন গোলদার ও নজরুল ইসলাম। এর মধ্যে নজরুল ইসলাম পলাতক। কারাগারে থাকা ৫ আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
এর আগে গত ২২ মে খুলনার বটিয়াঘাটায় এ ছয়জনের বিরুদ্ধে রায় যে কোন দিন (সিএভি) ঘোষণার জন্য রেখে আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমানে সক্ষম হয়েছে প্রসিকিউশন। তিনি বলেন, এই মামলায় প্রাথমিকভাবে মোট আটজন আসামি থাকলেও একজন মারা গেছেন। ফলে তাকে বাদ দিয়ে বাকি সাতজনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। মমামলার আসামিরা হলেন- আমজাদ হোসেন হাওলাদার (৭৫), মো. মোজাহার আলী শেখ (৬৫), সহর আলী সরদার (৬৫), মো. আতিয়ার রহমান শেখ (৭০), মো. মোতাসিন বিল্লাহ (৮০), মো. কামাল উদ্দিন গোলদার (৬৬) ও মো. নজরুল ইসলাম (৬০)। আসামিদের মধ্যে নজরুল ইসলাম পলাতক। গ্রেফতারের পর আশরাফ শেখ (৮০) নামে একজন মারা গেছেন। এর মধ্যে মো. মোজাহার আলী শেখ (৬৫) মারা গেছেন। শেষ পর্যন্ত পলাতক একজনসহ আসামি এখন ৬ জন। যাদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডের রায় হলো।
ট্রাইব্যুনালের তদন্তকারী কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হেলালউদ্দিনসহ মোট ১৭ জন সাক্ষী তাদের জবানবন্দি পেশ করেন। তাদের মধ্যে ১৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করার পর মামলার আইও’র জেরার কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৫ সালের ১৫ নভেম্বর মামলার তদন্ত শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৮ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে সাত ভলিউমের ১ হাজার ২৭ পাতার প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়া হয়। এর মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখিত চারটি অপরাধেই অভিযোগ রয়েছে আসামি আমজাদ হোসেন হাওলাদারের বিরুদ্ধে। প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে কনভেনশন মুসলিম লীগ এবং পরে জামায়াতের সমর্থক ছিলেন। অন্য ছয় আসামিও মুক্তিযুদ্ধকালে কনভেনশন মুসলিম লীগ এবং জামায়াতের সমর্থক ছিলেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ১০ আগস্ট আমজাদ হোসেন হাওলাদারসহ চার-পাঁচজন রাজাকার বটিয়াঘাটার মাছালিয়া গ্রামের শান্তি লতা মণ্ডলের বাড়িতে হামলা চালিয়ে বিনোদ মণ্ডলকে অবৈধভাবে আটক-নির্যাতন, অপহরণ ও গুলি করে হত্যা করেন।
দ্বিতীয় অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ১৫ অক্টোবর বটিয়াঘাটার পূর্বহালিয়া গ্রামের চাপরাশী বাড়িতে হামলা চালিয়ে নিরস্ত্র হরিদাস মজুমদারকে আটক, নির্যাতন ও গুলি করে হত্যা করেন আসামিরা।
তৃতীয় অভিযোগ: মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ২১ অক্টোবর হিন্দু সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করতে বটিয়াঘাটার সুখদাড়া গ্রামে হামলা চালিয়ে নিরীহ নিরস্ত্র হিন্দু সম্প্রদায়ের চারজনকে হত্যা, চার-ছয়টি বাড়ির মালামাল লুট এবং অগ্নিসংযোগ করে।
চতুর্থ অভিযোগ: ’৭১ এর ২৯ নভেম্বরে এই আসামিরা বটিয়াঘাটার বারোআড়িয়া গ্রামে হামলা চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধা জ্যোতিষ মণ্ডল এবং আব্দুল আজিজকে গুলি করে হত্যা করে।
এমএইচবি/ডিএএম//