সারাদেশ ডেস্ক :
রমজান মাসের শেষ জুমা আজ।
পবিত্র জুমাতুল বিদা। দিনটিকে ইবাদতের বিশেষ দিন হিসেবে গুরুত্ব দেয়া হয়। জুমাতুল বিদা তথা রমজানের শেষ জুমাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে এলাকার সবচেয়ে বড় মসজিদে উপস্থিত হয় রোজাদার মুসলমান।
এমনিতেই জুমার দিনের বিশেষ মর্যাদা আছে কিন্তু রমজানের শেষ জুমা তথা জুমাতুল বিদার আলাদা মর্যাদা বা বৈশিষ্ট্য আছে কি? তা হলো….
ইসলামি শরিয়তে জুমাতুল বিদা বলে আলাদা কোনো ফজিলতপূর্ণ দিন নেই। তবে সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় জুমার দিনের গুরুত্ব, ফজিলত ও মর্যাদা অনেক বেশি। আর রমজানের কারণে কোরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক যে কোনো ইবাদত-বন্দেগির মর্যাদা বেড়ে যায়।
তবে রমজান মাসের শেষ জুমা হিসেবে এদিন ‘আল-কুদস দিবস’ পালিত হওয়ায় এর গুরুত্ব, তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য অপরিসীম। মানুষ দলে দলে জুমা আদায় করতে মসজিদের দিকে ধাবিত হবে। মহামারি করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে মুসলিম উম্মাহ আজ জুমার নামাজ শেষে মহান আল্লাহ’র কাছে বিশেষ দোয়া করবেন।
১৪৪৩ হিজরির রমজান মাসে মুসলিম উম্মাহ ইতিমধ্যে তিনটি জুমা অতিবাহিত করেছেন। আজ রমজানের বিদায়ী জুমা। তাই কোরআন নাজিলের মাসের মর্যাদা ও বরকতের সঙ্গে জুমার মর্যাদা ও ফজিলতে মুমিন রোজাদারের আমল ও হৃদয় হোক আলোকিত।
জুমাতুল বিদার বিশেষ ফজিলতের কথা না ভেবে যেহেতু আজই রমজানের শেষ জুমা তাই জুমাতুল বিদা আদায়ে কোরআন-সুন্নাহ ঘোষিত ফজিলত অর্জনের চেষ্টা করা প্রত্যেক ঈমানদার মুসলমানের জন্য জরুরি।
জুমার নামাজের মর্যাদা সম্পর্কে হাদিসে এসেছে-
হজরত সামুরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা জুমার নামাজে উপস্থিত হও এবং ইমামের কাছাকাছি হয়ে দাঁড়াও। কেননা যে ব্যক্তি জুমার নামাজে সবার পেছনে উপস্থিত হবে, জান্নাতে প্রবেশ ক্ষেত্রেও সে সবার পিছনেই পড়ে থাকবে।’ (মুসনাদে আহমদ)
সুতরাং জুমাতুল বিদা উপলক্ষ্যে অন্তত রমজানের শেষ জুমায় আগেভাগে মসজিদে উপস্থিত হয়ে এ হাদিসের ওপর আমল করে সবার আগে জান্নাতে প্রবেশের সৌভাগ্য অর্জনের প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হওয়ার চেষ্টা করাও জরুরি।
তাছাড়া মুসলিম উম্মাহর জন্য জুমার দিনটি সপ্তাহিক ইবাদতের বিশেষ দিন। অনেকে এ দিনটিকে গরিবের ঈদ হিসেবে গণ্য করে। এ দিনের ফজিলত এমনিতেই বেশি। তবে রমজানের শেষ দশকে হওয়ার কারণে এ জুমার সঙ্গে শেষ দশকের ফজিলতও যোগ হয়েছে।
জুমার ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে আরও এসেছে-
‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সূর্যোদয় হওয়ার সবগুলো দিনের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম ও শ্রেষ্ঠ হলো জুমার দিন। এই জুমার দিনেই হজরত আদম আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন এবং জুমার দিনই তাকে জান্নাত দান করেন এবং জুমার দিনেই তাকে জান্নাত থেকে এই দুনিয়ায় প্রেরণ করেন এবং কেয়ামতও এই জুমার দিনেই অনুষ্ঠিত হবে।’ (মুসলিম)
পাঁচ শ্রেণির লোক ছাড়া জুমার নামাজ ত্যাগ করা কবিরা গুনাহ। তারা হলো-
১. ক্রীতদাস;
২. স্ত্রীলোক;
৩. অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক;
৪. মুসাফির এবং
৫. রোগাক্রান্ত ব্যক্তি। (আবু দাউদ)
জুমা নামাজ না পড়ার পরিণাম
১. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পরপর তিনটি জুমা বিনা ওজরে ও ইচ্ছা করে ছেড়ে দেবে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার অন্তরে মোহর মেরে দেবেন।’ (তিরমিজি,আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)
২. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জুমা ত্যাগকারী লোকেরা হয় নিজেদের এই খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকুক, নতুবা আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত তাদের এই গুনাহের শাস্তিতে তাদের অন্তরের ওপর মোহর করে দেবেন। পরে তারা আত্মভোলা হয়ে যাবে। এরপর সংশোধন লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে যাবে।’ (মুসলিম)
৩. হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনা এই রকম- ‘যে ব্যক্তি পর পর তিনটি জুমা পরিত্যাগ করবে, সে ইসলামকে পিছনের দিকে নিক্ষেপ করল।’ (মুসলিম)।
সুতরাং জুমার নামাজ পরিত্যাগ না করে সবার আগে আগে রমজানের শেষ জুমার নামাজ তথা জুমাআতুল বিদা আদায় করতে আগে আগে মসজিদ উপস্থিত হওয়া উত্তম। বিগত জীবনের ভুল-ভ্রান্তি ও গুনাহ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করা জরুরি।
সতর্কতা
ইসলামের প্রাথমিক যুগেও জুমার প্রচলন ছিল। সে সময় জুমার দিনকে ইয়াওমে আরুবা বলা হতো। যা ইয়াহুদি, খ্রিস্টান তথা জাহেলি সম্প্রদায়ের লোকেরা পালন করতো। তারা জুমার দিনে গল্প-গুজব, হাসি-ঠাট্টা, আনন্দ-ফুর্তির আসর বসাতো। এই ছিল সে সময়ে তাদের জুমার সংস্কৃতি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুমিন মুসলমানকে এ ধরনের উৎসব থেকে হেফাজত করুন।
ডিএএম/কেকে//
Leave a Reply