নিজস্ব প্রতিবেদক :
সাবেক বিচারপতি, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য প্রবীণ আইনজীবী টি এইচ খানের জানাজা সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে আজ সোমবার বেলা পৌনে ১২টায় প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিগন, হাজারো আইনজীবী, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, স্বজন শুভাকাঙ্ক্ষীদের উপস্থিতিতে তার জানাজা হয়। এতে অংশ নেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, আপিল বিভাগের বিচারপতিগন, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিগন, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ, আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সদস্যসহ বিপুল সংখ্যক আইনজীবী, স্বজন ও গুণগ্রাহী।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে সোমবার বেলা পৌনে ১২টায় হাজারো মুসল্লির উপস্থিতিতে তার জানাজা হয়। এতে অংশ নেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, আপিল বিভাগের বিচারপতি, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সদস্যসহ বিপুল সংখ্যক আইনজীবী।
জানাজার পূর্বে টি এইচ খানের পুত্র সাবেক সংসদ সদস্য সুপ্রিমকোর্টের এডভোকেট আফজাল এএইচ খান পরিবারের পক্ষে তার পিতার জন্য সকলের দোয়া কামনা করেন।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস (কাজল) জানাজার পূর্বে টি এইচ খানের কর্মময় জীবনের নানা বিষয় তুলে ধরেন।
জানাজা শেষে টি এইচ খানের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধান বিচারপতি, এটর্নি জেনারেল কার্যালয়, আইনজীবী সমিতি, বিএনপি, বিভিন্ন আইনজীবী সংগঠন, ল’ রিপোর্টার্স ফোরামসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। কাল মঙ্গলবার তার গ্রামের বাড়িতে জানাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন ছেলে আফজাল এইচ খান।
বর্ষীয়ান এই আইনজীবীর মৃত্যুতে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
টি এইচ খান গতকাল রোববার বিকেল ৫টার দিকে রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ১০২ বছর।
তার মৃত্যুতে শোক জানান প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি, ল’ রিপোর্টার্স ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠন।
সর্বজনশ্রদ্ধেয় এই আইনবিদ ১৯২০ সালের ২১ অক্টোবর ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলাধীন ঔটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি আইন পেশায় যোগ দেন। তিনি দেশের প্রবীণতম আইনজীবী ছিলেন।
বিচারপতি টি এইচ খানের প্রকৃত নাম মো. তাফাজ্জাল হোসেন খান। তিনি টি এইচ খান নামেই পরিচিতি লাভ করেন।
তিনি ১৯৬৮ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তিনি হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।
১৯৭৩ সালের জুলাই থেকে আবার আইন ব্যবসায় ফিরে আসেন টি এইচ খান। ১৯৭৪ সালে তিনি প্রথমবারের মতো সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত হন।
১৯৮১ সালের ১৫ নভেম্বর আইন, শিক্ষা, ধর্ম, ভূমি ও রাজস্ব এবং ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এরপর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এরশাদের নেতৃত্বে নতুন সামরিক আইন জারি করা হয়। তখন তিনি আবার আইন পেশায় ফিরে যান। ১৯৮৬ সালে এরশাদের নির্বাচনে বিরোধিতা করার জন্য গ্রেফতার হন।
বিচারপতি টি এইচ খান ১৯৯২ সালে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম প্রতিষ্ঠা করেন। সে সময় ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন। এ পদে ২০১১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিএনপির প্রথম ভাইস চেয়ারম্যান।
১৯৯২ সালে টি এইচ খান সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস কমিশনের মেম্বার এবং একই বছর জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৪ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনে দ্বিতীয়বারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হন।
১৯৯৫ সালে বিচারপতি টি এইচ খান এশিয়া জোন থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৯ সালের ১৯ জুন পর্যন্ত জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল পদে বিচারকার্য পরিচালনা করেন।
১৯৪০ সালে বিচারপতি টি এইচ খান ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন এবং ১৯৪২ সালে তৎকালীন কলকাতা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএ অনার্সে ভর্তি হন।
১৯৪৫ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স এবং ১৯৪৬ সালে এমএ পাস করেন। ১৯৫১ সালের ১৪ মার্চ তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী হন।
আইন পেশা ছাড়াও বিচারপতি টি এইচ খান প্রথম জীবনে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ, ঢাকার জগন্নাথ কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন ও আইন বিষয়ে অধ্যাপনা করেন।
ডিএএম/কেকে//
Leave a Reply