মানবিক কারণে খালেদা জিয়া শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পেয়েছেন: আইনমন্ত্রী
- Update Time : ০৩:২২:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২১
- / ২ Time View
নিজস্ব প্রতিবেদক :
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এমপি বলেছেন, মানবিক কারণে সরকার বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, সংবিধান অনুযায়ী দেশের প্রধান বিচারপতি নিয়োগের এখতিয়ার মহামান্য রাস্ট্রপতির। এখানে আইন ও জেষ্ঠ্যতার কোন বিষয় নেই।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম কনফারেন্স হলে আয়োজিত ‘মিট দ্যা ওকাব’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আজ এ কথা বলেন। ওভারসিজ করেসপন্ডেন্ট এসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ওকাব) এই অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। ওকাব সংগঠক বিবিসি সংবাদদাতা সাংবাদিক কাদের কল্লোলের তত্ত্বাবধানে সংগঠনের সদস্য সচিব ডিআরইউ সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে সিনিয়র সাংবাদিক ফরিদ হোসেন, ওকাব সদস্য ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিক আনিসুর রহমানসহ সংগঠনের সদস্যগন উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচন কমিশন ও বিচারপতি নিয়োগ বিষয়ে আইন প্রণয়ন করা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, আমরা স্বচ্ছ গভর্নেন্সে বিশ্বাস করি। আইন করা উচিৎ। তবে এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তড়িঘড়ি করে আইন প্রণয়ন সমিচিন হবে না।
বর্তমান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন অবসরে যাচ্ছেন তাই নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ বিষয় নিয়ে প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, সংবিধানে দেশের প্রধান বিচারপতি নিয়োগের এখতিয়ার মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে দেয়া আছে। সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্য থেকে রাস্ট্রপতি একজনকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে থাকেন। এখানে আইন ও জেষ্ঠ্যতার কোন বিষয় নেই।
আইনমন্ত্রী বলেন, আমার জানামতে এখনও কাউকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়নি। যদিও গনমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে খবর বেড়িয়েছে। তবে কাল ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ হতে পারে বলে তিনি জানান।
নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা আছে যে, নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। গত দুইবার নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটা সিদ্ধান্তে এসেছিলেন যে, সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। দলগুলো নামগুলো দিতে পারবেন।
তিনি বলেন, ১০টি নাম সার্চ কমিটি সুপারিশ করতে পারবে, সেই দশটি নাম থেকে পাঁচজনকে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নিয়োগ দেবেন। এভাবে গঠিত কমিশনের অধিনে দুটি নির্বাচন হয়েছে। তবে আমিও মনে করি আইন হওয়া উচিত। সেটি তড়িঘড়ি করে করা সমিচিন হবে না। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ জনিত উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে সীমিত পরিসরে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে সংসদ বসলেও পরিস্থিতির কারণে সব সংসদ সদস্যকে সংসদে পাচ্ছিলাম না। নির্বাচন কমিশন নিয়ে আইন সংসদকে পাশ কাটিয়ে করা ঠিক হবে না বলে মনে করেন আইনমন্ত্রী।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা বিষয়ে সূযোগ প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, যে মামলায় খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন সেটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মামলা হয়েছে। ২০১২ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন সেই মামলার প্রতিবেদন দেয়। মামলাটির বিচার কার্যক্রম চলাকালীন তারা অন্তত দশবার হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে আবেদন করেছে মামলা স্থগিত করার জন্য। অনেক বিচারকের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেছেন। সব কিছুর পর রায় হয়েছে। একটি মামলায় বিচারিক আদালতে সাজা পাঁচ বছর, হাইকোর্টে সেটি বেড়ে ১০ বছর হয়েছে। আরেকটা মামলায় পরে খালেদা জিয়ার সাত বছর সাজা হয়েছে।
আইনমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া যখন সাজা ভোগ করছিলেন তখন প্রধানমন্ত্রী মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে শর্তসাপেক্ষে সাজা স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেন। এখন তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণে বিদমান আইনে সূযোগ বিষয়ে আমার মতামত আমি দিয়েছি।খালেদা জিয়াকে মুক্তি বিষয়ে তার স্বজনরা আবদেন করেছিল। তারা প্রধানমন্ত্রী, স্বরাস্ট্রমন্ত্রীর সাথে দেখা করেছিল। তাদের আবেদনে আইনের উল্লেখ ছিল না। সরকার ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় শর্তসাপেক্ষে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়। দণ্ডাদেশ স্থগিত করে খালেদা জিয়ার মুক্তি সরকার মানবিক দিক বিবেচনা করেই দিয়েছেন। সরকার কোন কাজই আইনের বাহিরে করতে পারেনা।
আনিসুল হক বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হবার আগে এখন ইনকোয়ারির জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সেলে যাচ্ছে। যদি অভিযোগ মামলা করার মতো হয় তাহলে মামলা আদালতে যাবে। আইনমন্ত্রী বলেন, এখন কিন্তু কোনো সাংবাদিককে মামলা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। আগে যাচাই করা হয়। এই আইন সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করার জন্য করা হয়নি। তিনি বলেন, এই আইনের অপব্যবহার যাতে বন্ধ হয় সেজন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
আইনমন্ত্রী এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, দেশে আমার জানা মতে এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং হয়নি। গনমাধ্যমে এরুপ ২৪১ টা ঘটনার বিষয়ে প্রতিবেদন আসে। আমরা খতিয়ে দেখে এরমধ্যে দেখা যায় ২৩৯ টা মিথ্যা। বাকী ২ টার সত্যতা পাই। এ বিষয়ে নেয়া হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের বিষয়ে নয়, দুইজন ব্যাক্তি বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন বলে জেনেছি। তারা র্যাবের কার্যক্রম নিয়ে প্রশংসা করেছেন।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ হয়। তখন পর্যাপ্ত অবকাঠামো ছিল না। শেখ হাসিনার সরকার পর্যাপ্ত অবকাঠামো নির্মাণ করেছেন। অবকাঠামোসহ অন্যান্য লজিস্টিক সাপোর্ট বৃদ্ধিতে নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, লাখ লাখ মামলার জট ছিল। অবকাঠামো ও লজিস্টিক সাপোর্ট বৃদ্ধিতে তা এখন কমে আসছে।
আইনমন্ত্রী বলেন, দেশ ডিজিটাল যুগে পদার্পণ করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতে ই-জুডিশিয়ারী প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলছে।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস জনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গোটা দুনিয়ায় আমার জানা মতে তিনটি দেশে বিচার বিভাগ সচল ছিল। আমাদেরও করোনার কারণে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ থেকে লং ভেকেশনে যেতে হয়েছে। তখন মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ভার্চুয়াল ব্যবস্থা চালু করে বিচার ব্যবস্থা সচল রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, এজন্য প্রথমে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ জারি এবং পরে এটিকে আইনে পরিনত করা হয়।
আইনমন্ত্রী বলেন, বিদ্যামন সাক্ষ্য আইনকে আরো যুগোপযোগী করে এর সংশোধনী আনা হচ্ছে। ধর্ষণের শিকার নারীকে জেরায় অবমাননাকর বিদ্যমান উপধারাটি বাতিল (রিমোভ) করা হচ্ছে। আগামী সংসদ অধিবেশনে আইনটি সংসদে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আইনমন্ত্রী।
ডিএএম/কেকে//