স্পোর্টস ডেস্ক :
ওমান ক্রিকেট বিশ্বে আহামরি প্রতিপক্ষ নয়। তারপরও জটিল সমীকরণের কারণে ছিল নানা শঙ্কা ও ভয়। মাঠের খেলাতেও তা ফুটে উঠলো। বল ও ব্যাট হাতে দারুণ লড়াই করলো ওমান।
শেষ অবধি শেষ হাসি হাসলো বাংলাদেশই। স্বস্তির জয়ে বিশ্বকাপে টিকে থাকলে মাহমুদউল্লাহ বিগ্রেড। মঙ্গলবার টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাছাই পর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ওমানকে ২৬ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। স্কটল্যান্ডের সঙ্গে হারে যে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল, এই জয়ে তা আপাতত দূর হয়ে গেল।
আগামী ২১ অক্টোবর অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল পাপুয়া নিউ গিনিকে একটু বড় ব্যবধানে হারাতে পারলেই সুপার টুয়েলভে জায়গা করে নেবে বাংলাদেশ।
আল আমেরাত স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ করে ১০ উইকেটে ১৫৩ রান। জবাবে ওমান করতে পারে ৯ উইকেটে ১২৭ রান।
জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুতে উইকেট হারায় ওমান। দলীয় ১৩ রানে মুস্তাফিজের এলবির শিকার ওপেনার আকিব ইলিয়াস (৬)। কঠিন ক্যাচ ছাড়লেন মুস্তাফিজ
মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের করা তৃতীয় ওভারে হাতছাড়া হয় দুটি সুযোগ। রান আউট থেকে বেঁচে যান যতিন্দার সিং। পরে থার্ড ম্যানে মুস্তাফিজুর রহমানকে কঠিন ক্যাচ দিয়ে টিকে যান কাশ্যপ প্রজাপতি। ঝাঁপিয়ে দুই হাতে বল ধরলেও মুঠোয় রাখতে পারেননি মুস্তাফিজ।
৮ রানে জীবন পাওয়া প্রজাপতি আউট হন ব্যক্তিগত ২১ রানে। মুস্তাফিজের বলে উইকেটের পেছন ক্যাচ জমান সোহান। তারপরও পাওয়ার প্লেতে ৪৭ রান তুলে বাংলাদেশকে তখন রীতিমতো চোখ রাঙায় ওমান।
এরপর যতীন্দ্র সিং ও অধিনায়ক জিশানা মাকসুদ রানের গতি আরও বাড়াতে থাকেন। যদিও ষষ্ঠ ওভারে জীবন পান যতিন্দ্র। ক্যাচ জমাতে পারেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
বেশ সাবলিল গতিতে আগানো ওমানকে ৮১ রানের মাথায় চেপে ধরেন মেহেদী হাসান। তার বলে দারুণ ক্যাচ লুফে নিয়ে জিশান মাকসুদকে ফেরান মুস্তাফিজুর রহমান। ওভার তখন চলে ১১.২।
এরপরও হুমকি হয়ে ছিলেন যতীন্দ্র সিং। বল হাতে তাকে ফেরান সাকিব আল হাসান। ওমানের দলীয় স্কোর তখন ৯০। বাউন্ডারি লাইন থেকে দুরুহ ক্যাচ নেন লিটন দাস। ৩৩ বলে ৪০ রান করে আফসোস নিয়ে মাঠ ছাড়েন যতীন্দ্র। তার ইনিংসে ছিল চারটি চার ও একটি ছক্কার মার।
ওমান শতরান ছাড়িয়ে যাওয়ার পর আবার শঙ্কা জাগে বাংলাদেশ শিবিরে। তবে এরপর দ্রুতই সাইফউদ্দিন ও সাকিবের আঘাতে ম্যাচে ফেরে টাইগাররা। সন্দ্বীপকে (৪) মুশফিকুর রহীমের ক্যাচ বানান সাইফউদ্দিন।
১৭তম ওভারে সাকিবের জোড়া আঘাত। তৃতীয় বলে ফেরান ৯ রান করা আয়ান খানকে। পরের বলেই নাসিম খুশির ক্যাচ লুফে নেন মাহমুদুউল্লাহ। ১০০ রানে ৪ উইকেট হারানো ওমান পরের পাচ রানের মধ্যে হারায় তিন উইকেট। স্বস্তি জাগে বাংলাদেশ শিবিরে। বাকি সময়টা শুধুই বাংলাদেশের। মুস্তাফিজ ঝলকে ওমানের টেল এন্ডাররা পারেনি বাড়তি কোন চমক দেখাতে।
বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন মুস্তাফিজুর রহমান। সাকিব আল হাসান তিনটি, সাইফউদ্দিন ও মেহেদী হাসান একটি করে উইকেট লাভ করেন।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। সৌম্য সরকারের পরিবর্তে দলে ফেরেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। তারপরও ওপেনিং জুটিতে সেরকম আলো ছড়ায়নি।
দলীয় ১১ রানে বাংলাদেশ হারায় প্রথম উইকেট। আগের বলে ক্যাচ দিয়েও জীবন পান লিটন দাস। কিন্তু পরের বলে আর রক্ষা পাননি তিনি। হয়ে যান এলবিডব্লিউ।
ওমানের বাঁহাতি পেসার বিলাল খানের ফুল লেংথ বল ব্যাটে খেলতে পারেননি লিটন। এলবিডব্লিউর আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিউ নেয় ওমান। বল ট্র্যাকিংয়ে দেখা যায় বল লাগতো লেগ-মিডল স্টাম্পে।
৭ বলে ৬ রান করে বিদায় নেন বাংলাদেশ ওপেনার। ইনিংসের শুরুতে ক্যাচ আউটের আবেদনে লিটনকে আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। সে যাত্রায় রিভিউ নিয়ে বাঁচেন তিনি। কিন্তু দুইবার জীবন পাওয়া লিটন পারেননি নিজের ইনিংসটা বড় করতে।
লিটনের বিদায়ের পর ক্রিজে নামার কথা ছিল সাকিব আল হাসানের। কিন্তু নামেন মেহেদী হাসান। বাংলাদেশের দলের এমন ফাটকা কাজে দেয়নি। শূন্য রানে বিদায় নেন মেহেদী। দলীয় ২১ রানের মাথায় নিজের বলে নিজেই ক্যাচ নেন ওমানের ফায়াজ বাট। ৪ বল খেললেও রানের খাতা খুলতে পারেননি মেহেদী।
পাওয়ার প্লেতে ৬ ওভারে বাংলাদেশের রান ২৯, উইকেট পতন হয় দুটি। আক্ষেপের বিষয়, পাওয়ার প্লের ৩৬ বলের মধ্যে ২২টিই ডট।
তৃতীয় উইকটে জুটিতেই বাংলাদেশ পায় সম্মানজনক স্কোরের ভিত্তি। সাকিব আল হাসান ও নাঈম বাড়ান রানের চাকা। এই জুটিতে আসে ৮০ রান, ৫৩ বলে। ২৯ বলে ৪২ রান করে রান আউট হন সাকিব। তার ইনিংসে ছিল ছয়টি চারের মার।
এরপরও নাঈম ছিলেন নিজ ছন্দে। কিন্তু অপর প্রান্তে ঝলসে উঠতে পারেনি কেউ। সবাই ছিলেন যাওয়া আসার মিছিলে। নুরুল হাসান সোহান তিন রানে বিদায়। উঠেনি আফিফ ঝড়। ৫ বলে তার সম্বল ১ রান।
দলীয় ১২২ রানে ফেরেন ইনিংসে একমাত্র ফিফটি করা নাঈম। ৫০ বলে তিন চার ও চার ছক্কায় ৬৪ রান করেন তিনি। টি টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে নাঈমের এটি তৃতীয় ফিফটি।
অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ পারেননি প্রত্যাশা পূরুণ করতে। ১০ বলে এক চার ও ছক্কায় ১৭ রান করে বিলালের বলে বোল্ড। একটু নিচে নামা মুশফিক খোচা মেরে আউট। ৪ বলে করেন ৬ রান। ইনিংসের শেষ বলে অল আউট বাংলাদেশ। ২০ ওভারে আসে ১৫৩ রান।
ওমানের হয়ে বল হাতে তিনটি করে উইকেট নেন বিলাল খান ও ফায়াজ বাট। দুটি উইকেট পান কলিমুল্লাহ।
বাংলাদেশ স্কোয়াড: মোহাম্মদ নাঈম শেখ, লিটন দাস, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, নুরুল হাসান সোহান, আফিফ হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, তাসকিন আহমেদ।
এখন পাপুয়ানিউগিনির সাথে ম্যাচের অপেক্ষায়। পাশাপাশি ওমান স্কটল্যান্ডের ম্যাচের চিত্রের পর নিশ্চিত হবে এই গ্রুপ থেকে কোন দুই দল যাবে পরের রাউন্ডে। স্কটল্যান্ডের সাথে হারের কারণে এখন কঠিন সমীকরণের মুখোমুখি টিম বাংলাদেশ।
ডিএএম/কেকে//
Leave a Reply