Dhaka ০৮:০৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৫, ১৫ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও এতিমদের নিয়ে ককক্সবাজার ভ্রমনে দূর্বার তারুণ্য ফাউন্ডেশন শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বিএফইউজে-ডিইউজে’র আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত ১৯ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে অবকাশ : জরুরি মামলা শুনানিতে অবকাশকালীন বেঞ্চ জান প্রাণ দিয়ে জনআস্থা ধরে রাখতে হবে : তারেক রহমান বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যান সমিতির নতুন কমিটির অভিষেক : সভাপতি রফিকুল মহাসচিব সাত্তার সাংগঠনিক তোফাজ্জল কোটায় চাকরি : কুমিল্লার এসপি হচ্ছেন জুলাই বিপ্লবে গুলি করা ছাত্রলীগ ক্যাডার নাজির সম্প্রচারিত সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, কাল্পনিক এবং ভিত্তিহীন : সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন মতিঝিল থানা ৮নং ওয়ার্ড যুবদলের কর্মীসভা অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগসহ ১১টি দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে রিট বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যান সমিতির সভাপতি রফিক, মহাসচিব সাত্তার সাংগঠনিক সম্পাদক তফাজ্জল

জীবন সুন্দর

  • Update Time : ০২:২৩:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অক্টোবর ২০২১
  • / ৫ Time View

মো:ফয়সাল উদ্দিন: জীবন বড় সুন্দর। জীবনের দুঃখ-বেদনা, পাওয়া-না-পাওয়া সব একদিকে ফেলে এই যে আমরা বেঁচে আছি, অঘ্রাণের মিষ্টি হাওয়া লাগছে গায়ে, পড়ন্ত বিকেলের মিষ্টি কুয়াশা– এই তো অনেক। ভাবুন তো কি দামী এই জীবন! কী ভীষণ সুন্দর এই বেঁচে থাকা! হয়তো জীবনে অনেক বেদনা আছে, কান্না আছে, অপ্রাপ্তি আছে, কিন্তু এই ছোট ছোট সুখ-দুঃখ নিয়ে যে আমরা বেঁচে আছি, এটাই কি কম কিছু!জীবনকে ভালোবাসতে হয়। সাজিয়ে নিতে হয় প্রথমত নিজের জন্য, পরে সবার জন্য।

খ্রিস্টজন্মের তিনশ বছর আগে গ্রিক কবি লুক্রেসিয়াস আত্মহত্যা করেছিলেন। লিখেছিলেন, প্রত্যেকেই নিজের কাছ থেকে পালাতে চায়, কিন্তু পারে না। বেশির ভাগ মানুষ অনিচ্ছায় বেঁচে থাকে। নিজের জন্ম নিয়ে অসন্তুষ্ট থাকে। তারা বেঁচে থাকে; কারণ, তাদের মরে যাওয়ার উপায় নেই। ১৯৬৩ সালে সিলভিয়া প্লাথ এক তীব্র শীতের সকালে আত্মহত্যা করেন। তখন তার বয়স একত্রিশ।
আত্মহত্যার পক্ষে তিনি বেশ কিছু কবিতাও লিখেছিলেন। এ রকম বহু উদাহরণ রয়েছে। বিশেষত, উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে বিশ শতকের ষাটের দশক পর্যন্ত বহু সৃষ্টিশীল ও জ্ঞানী ব্যক্তি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত বাস্তবতার চাপ সহ্য করতে না পেরে। আত্মপলায়নের উপায় হিসেবে একে বরণ করে নিয়েছেন।
দুই
বিখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী ও দার্শনিক এমিল দুর্খেইম ১৮৯৭ সালে ‘সুইসাইড’ নামের একটি বই লেখেন। সেটি প্রকাশের আগে পর্যন্ত আত্মহত্যাকে নিছক ব্যক্তিগত বিষয় বলে ভাবা হতো। দুর্খেইমের এই রচনার মধ্য দিয়ে বিষয়টি সমাজচিন্তার অংশ হয়ে ওঠে। এতে মনে করা হয়, আত্মহত্যার সঙ্গে সমাজকাঠামোর সম্পর্ক ওতপ্রোত। ফলে বইটি প্রকাশের কিছুকাল পর থেকে উন্নত দেশগুলোতে আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে আইনের বিভিন্ন ধারা প্রণীত হতে শুরু করে। সে প্রভাব বাংলাদেশেও কিছুটা পড়েছে, বলা যায়। দেখা গেছে, যে সমাজে ব্যক্তির মানসিক বিকাশের পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা ও পরিবেশ রয়েছে, সেখানে আত্মহত্যার হার লক্ষণীয়ভাবে কম। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক বিধিনিষেধের চাপ যেখানে যত বেশি, সেখানে আত্মহত্যার হার তত বেশি।
তিন
বলা হয়ে থাকে, আত্মহত্যাকারী একজন স্পয়েল স্পোর্ট। মজা মাটি করাই তার কাজ। অন্যদিকে এটাও ভাবা হয় যে সমাজের স্বাভাবিক গতিশীলতায় একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন সে রেখে যায় নিজেকে নিশ্চিহ্ন করার মধ্য দিয়ে। জীবনানন্দ দাশের ‘আট বছর আগের একদিন’ কবিতায় জীবনের স্বাভাবিক গতি ও নিশ্চয়তার মধ্যেও যেমন এক গৃহীর মনে প্রশ্ন জেগেছিল, ‘অশ্বত্থের কাছে এক গাছা দড়ি হাতে নিয়ে সে ছুটে গিয়েছিল।’ সেই সূত্রে কবি বলেছিলেন ‘বিপন্ন বিস্ময় আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে খেলা করে।’ কবির কথায়—আমরা চাই, আমাদের জীবন হোক স্বাধীন, ফড়িং আর দোয়েলের মতো উড়ে উড়ে ঘুরে বেড়াবার ‘গভীর আহ্লাদে ভরা’।
চার
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ২০২০ সালে পৃথিবীতে আত্মহত্যাকারীর সংখ্যা সাত লাখ। এটি আগে আরও বেশিই ছিল। কোনো কোনো বছর দশ লাখও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। গত বছরে নাটকীয়ভাবে আত্মহত্যার হার কমে যাওয়াটা বেশ আশাব্যঞ্জক বটে।
কিন্তু বাংলাদেশের অবস্থা এর বিপরীত। প্রতিবছর এখানে গড়ে ১০ হাজার লোক আত্মহত্যা করে। দেশে মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা যে ভালো নয়, এতেই বোঝা যায়। এর কারণগুলো খুঁজে বের করে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিও জরুরি। সে জন্য দায়িত্বশীলতার শিক্ষা ও সামাজিক পরিবেশের উন্নয়ন দরকার। সবচেয়ে বেশি যেটি প্রয়োজন, সেটি হলো জীবনকে ভালোবাসার উপযুক্ত ক্ষেত্র ও শর্ত সৃষ্টি করা।
পাঁচ
জীবন শেষ পর্যন্ত সুন্দর। সে জন্যই রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে।’ কিন্তু প্রকৃতির দেওয়া যে সৌন্দর্য আমরা জন্মসূত্রে দেখি ও উপভোগ করি সেটাই যথেষ্ট নয়। জীবনকে ভালোবাসতে হয়। সাজিয়ে নিতে হয় প্রথমত নিজের জন্য, পরে সবার জন্য। নিজেকে ভালোবাসতে পারলে বেঁচে থাকা সহজ হয়ে ওঠে। জীবন হয়ে ওঠে কাক্সিক্ষত ও মূল্যবান।
লেখক: মো:ফয়সাল উদ্দিন।
ইংরেজী বিভাগ, হাবীবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ
ইমেইল: mdfaisaluddin98@gmail.com

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জীবন সুন্দর

Update Time : ০২:২৩:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অক্টোবর ২০২১

মো:ফয়সাল উদ্দিন: জীবন বড় সুন্দর। জীবনের দুঃখ-বেদনা, পাওয়া-না-পাওয়া সব একদিকে ফেলে এই যে আমরা বেঁচে আছি, অঘ্রাণের মিষ্টি হাওয়া লাগছে গায়ে, পড়ন্ত বিকেলের মিষ্টি কুয়াশা– এই তো অনেক। ভাবুন তো কি দামী এই জীবন! কী ভীষণ সুন্দর এই বেঁচে থাকা! হয়তো জীবনে অনেক বেদনা আছে, কান্না আছে, অপ্রাপ্তি আছে, কিন্তু এই ছোট ছোট সুখ-দুঃখ নিয়ে যে আমরা বেঁচে আছি, এটাই কি কম কিছু!জীবনকে ভালোবাসতে হয়। সাজিয়ে নিতে হয় প্রথমত নিজের জন্য, পরে সবার জন্য।

খ্রিস্টজন্মের তিনশ বছর আগে গ্রিক কবি লুক্রেসিয়াস আত্মহত্যা করেছিলেন। লিখেছিলেন, প্রত্যেকেই নিজের কাছ থেকে পালাতে চায়, কিন্তু পারে না। বেশির ভাগ মানুষ অনিচ্ছায় বেঁচে থাকে। নিজের জন্ম নিয়ে অসন্তুষ্ট থাকে। তারা বেঁচে থাকে; কারণ, তাদের মরে যাওয়ার উপায় নেই। ১৯৬৩ সালে সিলভিয়া প্লাথ এক তীব্র শীতের সকালে আত্মহত্যা করেন। তখন তার বয়স একত্রিশ।
আত্মহত্যার পক্ষে তিনি বেশ কিছু কবিতাও লিখেছিলেন। এ রকম বহু উদাহরণ রয়েছে। বিশেষত, উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে বিশ শতকের ষাটের দশক পর্যন্ত বহু সৃষ্টিশীল ও জ্ঞানী ব্যক্তি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত বাস্তবতার চাপ সহ্য করতে না পেরে। আত্মপলায়নের উপায় হিসেবে একে বরণ করে নিয়েছেন।
দুই
বিখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী ও দার্শনিক এমিল দুর্খেইম ১৮৯৭ সালে ‘সুইসাইড’ নামের একটি বই লেখেন। সেটি প্রকাশের আগে পর্যন্ত আত্মহত্যাকে নিছক ব্যক্তিগত বিষয় বলে ভাবা হতো। দুর্খেইমের এই রচনার মধ্য দিয়ে বিষয়টি সমাজচিন্তার অংশ হয়ে ওঠে। এতে মনে করা হয়, আত্মহত্যার সঙ্গে সমাজকাঠামোর সম্পর্ক ওতপ্রোত। ফলে বইটি প্রকাশের কিছুকাল পর থেকে উন্নত দেশগুলোতে আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে আইনের বিভিন্ন ধারা প্রণীত হতে শুরু করে। সে প্রভাব বাংলাদেশেও কিছুটা পড়েছে, বলা যায়। দেখা গেছে, যে সমাজে ব্যক্তির মানসিক বিকাশের পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা ও পরিবেশ রয়েছে, সেখানে আত্মহত্যার হার লক্ষণীয়ভাবে কম। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক বিধিনিষেধের চাপ যেখানে যত বেশি, সেখানে আত্মহত্যার হার তত বেশি।
তিন
বলা হয়ে থাকে, আত্মহত্যাকারী একজন স্পয়েল স্পোর্ট। মজা মাটি করাই তার কাজ। অন্যদিকে এটাও ভাবা হয় যে সমাজের স্বাভাবিক গতিশীলতায় একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন সে রেখে যায় নিজেকে নিশ্চিহ্ন করার মধ্য দিয়ে। জীবনানন্দ দাশের ‘আট বছর আগের একদিন’ কবিতায় জীবনের স্বাভাবিক গতি ও নিশ্চয়তার মধ্যেও যেমন এক গৃহীর মনে প্রশ্ন জেগেছিল, ‘অশ্বত্থের কাছে এক গাছা দড়ি হাতে নিয়ে সে ছুটে গিয়েছিল।’ সেই সূত্রে কবি বলেছিলেন ‘বিপন্ন বিস্ময় আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে খেলা করে।’ কবির কথায়—আমরা চাই, আমাদের জীবন হোক স্বাধীন, ফড়িং আর দোয়েলের মতো উড়ে উড়ে ঘুরে বেড়াবার ‘গভীর আহ্লাদে ভরা’।
চার
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ২০২০ সালে পৃথিবীতে আত্মহত্যাকারীর সংখ্যা সাত লাখ। এটি আগে আরও বেশিই ছিল। কোনো কোনো বছর দশ লাখও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। গত বছরে নাটকীয়ভাবে আত্মহত্যার হার কমে যাওয়াটা বেশ আশাব্যঞ্জক বটে।
কিন্তু বাংলাদেশের অবস্থা এর বিপরীত। প্রতিবছর এখানে গড়ে ১০ হাজার লোক আত্মহত্যা করে। দেশে মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা যে ভালো নয়, এতেই বোঝা যায়। এর কারণগুলো খুঁজে বের করে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিও জরুরি। সে জন্য দায়িত্বশীলতার শিক্ষা ও সামাজিক পরিবেশের উন্নয়ন দরকার। সবচেয়ে বেশি যেটি প্রয়োজন, সেটি হলো জীবনকে ভালোবাসার উপযুক্ত ক্ষেত্র ও শর্ত সৃষ্টি করা।
পাঁচ
জীবন শেষ পর্যন্ত সুন্দর। সে জন্যই রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে।’ কিন্তু প্রকৃতির দেওয়া যে সৌন্দর্য আমরা জন্মসূত্রে দেখি ও উপভোগ করি সেটাই যথেষ্ট নয়। জীবনকে ভালোবাসতে হয়। সাজিয়ে নিতে হয় প্রথমত নিজের জন্য, পরে সবার জন্য। নিজেকে ভালোবাসতে পারলে বেঁচে থাকা সহজ হয়ে ওঠে। জীবন হয়ে ওঠে কাক্সিক্ষত ও মূল্যবান।
লেখক: মো:ফয়সাল উদ্দিন।
ইংরেজী বিভাগ, হাবীবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ
ইমেইল: mdfaisaluddin98@gmail.com