Dhaka ১১:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫, ১৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও এতিমদের নিয়ে ককক্সবাজার ভ্রমনে দূর্বার তারুণ্য ফাউন্ডেশন শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বিএফইউজে-ডিইউজে’র আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত ১৯ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে অবকাশ : জরুরি মামলা শুনানিতে অবকাশকালীন বেঞ্চ জান প্রাণ দিয়ে জনআস্থা ধরে রাখতে হবে : তারেক রহমান বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যান সমিতির নতুন কমিটির অভিষেক : সভাপতি রফিকুল মহাসচিব সাত্তার সাংগঠনিক তোফাজ্জল কোটায় চাকরি : কুমিল্লার এসপি হচ্ছেন জুলাই বিপ্লবে গুলি করা ছাত্রলীগ ক্যাডার নাজির সম্প্রচারিত সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, কাল্পনিক এবং ভিত্তিহীন : সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন মতিঝিল থানা ৮নং ওয়ার্ড যুবদলের কর্মীসভা অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগসহ ১১টি দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে রিট বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যান সমিতির সভাপতি রফিক, মহাসচিব সাত্তার সাংগঠনিক সম্পাদক তফাজ্জল

হেফাজতে নির্যাতনের আইনগত প্রতিকার

  • Update Time : ০৫:০২:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ অগাস্ট ২০২১
  • / ২ Time View

মোঃ জে,আর,খান (রবিন),এডভোকেট
বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট :

নির্যাতন ও সরকারি কর্মকর্তার হেফাজতে মৃত্যু ও আইনগত প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।

রাষ্ট্র ও নাগরিকের মধ্যে সম্পর্কটা খুবই নিবিড়। রাষ্ট্রহীন ব্যক্তি যেমন আত্মপরিচয়হীন তেমনি নাগরিক ছাড়া রাষ্ট্রও অকার্যকর।

রাষ্ট্র যেমন নাগরিক জীবনকে অর্থবহ সুন্দর ও গতিশীল করে তোলে, ঠিক তেমনিভাবে সুনাগরিকও রাষ্ট্রকে সফল করে তোলার ক্ষেত্রে অপরিহার্য।

রাষ্ট্রকে হতে হবে কল্যাণমুখী তেমনি ভাবে নাগরিকরাও হবেন রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যশীল।
রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে নাগরিকের জান ও মালের নিরাপত্তা প্রদানসহ সকল মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা।

রাষ্ট্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা ও সব অধিকার নিশ্চিত করে থাকে। কিন্তু বিভিন্ন সময় দেখা যায় যে, কোন কোন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য কাউকে গ্রেফতার করতে গিয়ে অথবা কাউকে তাদের হেফাজতে নিয়ে অন্যায় ভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছে। নির্যাতনে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ মৃত্যুর ঘটনা রয়েছে অনেক।

১৯৮৪ সালের ১০ ডিসেম্বর নিউইয়র্কে নির্যাতন এবং নিষ্ঠুর অমানবিক, লাঞ্ছনাকর ব্যবহার অথবা অন্যান্য নিষ্ঠুর দন্ড বিরোধী একটি সনদ স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৯৮ সালের ৫ অক্টোবর উক্ত সনদে স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশও উক্ত সনদের অংশীদার হয়।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদেও নির্যাতন এবং নিষ্ঠুর অমানবিক লাঞ্ছনাকর ব্যবহার ও দণ্ড মৌলিকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

জাতিসংঘের সনদের ২(১) ও ৪ নং অনুচ্ছেদে নির্যাতন, নিষ্ঠুর, অমানবিক ও লাঞ্ছনাকর ব্যবহার ও অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে নিজ নিজ দেশে আইন প্রণয়নের দাবির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশেও ২০১৩ সালে ‘নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন’ প্রনয়ণ করা হয়। এই আইনের অধীনেকৃত অপরাধ, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও আইনগত প্রতিকার নিয়ে সংশ্লিষ্ট ধারা সমূহসহ আলোচনা করার চেষ্টা করছি;

‘নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন’-২০১৩ এর;

২(৩) উপ-ধারা অনুয়ায়ী “সরকারি কর্মকর্তা” বলতে প্রজাতন্ত্রের বেতনভূক্ত কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে বুঝায়। ২(৪) উপ-ধারা অনুযায়ী “আইন প্রয়োগকারী সংস্থা” বলতে পুলিশ,র্য্যাব, বর্ডার গার্ড বাংলাদশ, কাস্টমস, ইমিগ্রেশন, অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা শাখা, আনসার ভিডিপি ও কোস্টগার্ডসহ দেশে আইন প্রয়োগকারী ও বলবৎকারী সরকারি কোন সংস্থাকে বুঝায়।

২(৬) উপ-ধারা অনুযায়ী “নির্যাতন” বলতে কষ্ট হয় এমন ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সহ অন্যান্য নির্যাতনকে বুঝায়, ইহা ছাড়াও; ক) কোন ব্যক্তি বা অপর কোন ব্যক্তির নিকট হতে তথ্য বা স্বীকারোক্তি আদায়ে; খ) সন্দেহ বাজন অথবা অপরাধী কোন ব্যক্তিকে শাস্তি প্রদানে; গ) কোন ব্যক্তি অথবা তার মাধ্যমে অপর কোন ব্যক্তিকে ভয়ভীতি দেখানো; ঘ) বৈষম্যের ভিত্তিতে কারো প্ররোচনা বা উস্কানি, কারো সম্মতিক্রমে বা নিজ ক্ষমতা বলে কোন সরকারি কর্মকর্তা বা সরকারি ক্ষমতাবলে-
এরুপ কর্মসাধনও নির্যাতন হিসেবে গন্য হবে।

২(৭) উপ-ধারা অনুযায়ী “হেফাজতে মৃত্যু” বলতে সরকারি কোন কর্মকর্তার হেফাজতে কোন ব্যক্তির মৃত্যু ; ২(৮) উপ-ধারা অনুযায়ী “ক্ষতিগ্রস্ত অথবা সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি” বলতে এমন ব্যক্তি যাকে এ আইনের অধীনে তার উপর অথবা তার সংশ্লিষ্ট বা উদ্বিগ্ন এমন কারো উপর নির্যাতন করা হয়েছে।

আদালতে অভিযোগ দায়ের পদ্ধতি: ১৪ ধারা-অনুযায়ী যেহেতু এ আইনের অধীন কোন অপরাধের বিচার কেবলমাত্র দায়রা জজ আদালতে
অনুষ্ঠিত হয়, সেহেতু ক্ষতিগ্রস্ত বা নির্যাতিত ব্যক্তি উক্ত আইনের ৪(১) ধারা অনুযায়ী দায়রা জজ আদালতে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।

অভিযোগ প্রাপ্তির পর আদালতের কার্যক্রম: ৪(১) উপ-ধারা অনুযায়ী অভিযোগ প্রাপ্তির পর নিম্ন লিখিত কার্যক্রম গ্রহন করবেন; ক) তাৎক্ষণিকভাবে উক্ত ব্যক্তির বিবৃতি লিপিবদ্ধ করবেন; খ) একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসক দ্বারা তার (অভিযোগকারীর) দেহের পরীক্ষার আদেশ দিবন; গ) মহিলার ক্ষেত্রে মহিলা চিকিৎসক দ্বারা পরীক্ষার ব্যবস্তা করবেন; ৪(২) উপধারা অনুযায়ী চিকিৎসক অভিযোগকারীর দেহের জখম ও নির্যাতনের চিহ্ন এবং নির্যাতনের সম্ভাব্য সময় উল্লেখপূর্বক ২৪ ঘন্টার মধ্যে উহার একটি রিপোর্ট তৈরি করবেন; ৪(৩) উপধারা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক প্রস্তুতকৃত রিপোর্টের এক কপি অভিযোগকারী অথবা তার মনোনীত ব্যক্তিকে দিবেন এবং আদালতে দাখিল করবেন। ৪(৪) উপধারা অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষাকৃত ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তির জন্য আদালত নির্দেশ দিতে পারবেন।

আদালত কর্তৃক মামলা দায়েরের নির্দেশ প্রদান: ৫(১) উপ-ধারা অনুযায়ী ৪(১) ধারা মোতাবেক বিবৃতি লিপিবদ্ধ করার পর আদালত অনতিবিলম্বে বিবৃতির এক কপি সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপার বা ক্ষেত্রমতে তদূর্ধ্ব কোন পুলিশকর্মকর্তার কাছে প্রেরণ করে মামলা
দায়েরের নির্দেশ প্রদান করববেন। ৫(২) উপ-ধারা অনুযায়ী পুলিশ সুপার উক্ত আদেশ প্রাপ্তির পর পরই ঘটনার তদন্ত করে চার্জ অথবা চার্জ বিহীন রিপোর্ট পেশ করবেন: তবে শর্ত থাকে যে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি যদি মনে করেন পুলিশ দ্বারা সুষ্ঠুভাবে তদন্ত সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদন যথার্থ বিবেচনায় আদালত বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ প্রদান করবেন।

৫(৩) উপ-ধারা অনুযায়ী রিপোর্ট দাখিলের সময় তদন্ত কর্মকর্তা ক্ষেত্রমত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কর্মকর্তা ৪(১) উপ-ধারা অনুযায়ী বিবৃতি প্রদানকারী ব্যক্তিকে তারিখসহ রিপোর্ট দাখিল সম্পর্কে আদালতকে অবহিত করবেন।
৫(৩) উপ-ধারা অনুযায়ী উল্লিখিত উপধারা (৩) অনুযায়ি নোটিশ প্রাপ্ত কোন ব্যক্তি নোটিশ গ্রহণের ৩০ দিনের মধ্যে নিজে ব্যক্তিগত ভাবে অথবা আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে আপত্তি জানাতে পারবেন।

৫(৫) উপ-ধারা অনুযায়ী আদালত সংঘটিত অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির পদমর্যাদার নিম্নে নহে এমন পদমর্যাদার কোন পুলিশ অফিসার কে মামলা তদন্ত অনুষ্ঠানে নির্দেশ প্রদান করবেন।

তৃতীয় পক্ষ কর্তৃক অভিযোগ : ৬(১) উপ-ধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তিেকে অন্য কোন ব্যক্তি নির্যাতন করেছে বা করছে এরুপ কোন তথ্য তৃতীয় কোন ব্যক্তি আদালতকে অবহিত করলে আদালত ৫ ধারা মোতাবেক অভিযোগকারীর বিবৃতির উপর নিজের মন্তব্য লিপিবদ্ধ করে উক্ত ব্যক্তির নিরাপত্তা বিধান করবেন। ৬(২) উপ-ধারা অনুযায়ী অভিযোগকারীর বক্তব্যে আদালত সন্তুষ্ট হলে প্রয়োজনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে পারবেন।

অভিযোগের অপরাপর ধরন : ৭(১) উপ-ধারা অনুযায়ী ৫ ও ৬ ধারায় বর্ণিত প্রক্রিয়া ছাড়াও কোন ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়া সত্ত্বেও তৃতীয়কোন ব্যক্তি দায়রা জজ আদালতে অথবা পুলিশ সুপারের নিচে নয় এমন কোন পুলিশ কর্মকর্তার নিকট নির্যাতনের অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন।

৭(২) অনুযায়ী ৭(১) উপ-ধারায় বর্ণিত এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ সুপার অথবা তার চেয়ে উর্ধ্বতন পদমর্যাদার কোন অফিসার তাৎক্ষণিক একটি মামলা দায়ের ও অভিযোগকারীর বক্তব্য রেকর্ড করবেন এবং মামলার নম্বরসহ এ অভিযোগের ব্যাপারে কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে উহা অভিযোগকারীকে অবহিত করবেন। ৭(৩) উপ-ধারা অনুযায়ী উপরে বর্ণিত ৭(২) উপ-ধারা মোতাবেক অভিযোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনকারি পুলিশ সুপার অথবা তাহার উর্দ্ধতন কর্মকর্তা অভিযোগ দায়েরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দায়রা জজ আদালতে একটি রিপোর্ট পেশ করবেন।

তদন্তের সময় সীমা:
৮(১) উপ-ধারা অনুযায়ী ৯০ দিন এবং পরবর্তীতে আবেদনের প্রেক্ষিতে আরো সময় বৃদ্ধি পেতে পারে।

নিরাপত্তার বিধান :
১১(১) উপ-ধারা অনুযায়ী অভিযোগকারী কোন ব্যক্তি এ আইনে অভিযুক্ত কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বিধান কল্পে দায়রা জজ আদালতে পিটিশন দায়ের করতে পারবে।
১১(২) উপ-ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্র এবং যার বিরুদ্ধে নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছে তাদেরকে উত্ত পিটিশনের পক্ষভুক্ত করা যাবে। ১১(৪) উপধারা অনুযায়ী উল্লখিত (১)উপ-ধারায় বর্ণিত এ ধরনের কোন মামলা নিষ্পত্তি কালে আদালত প্রয়োজন বোধে ঐ ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনূন্য সাত দিনের অন্তরীণ আদেশ দিতে পারবে এবং সময়ে সময়ে উহা বৃদ্ধি করতে পারবে।

১১(৫) উপ-ধারা অনুযায়ী আদালত এ আইনের অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধের তদন্ত কর্মকর্তাদের আদালতের আদেশ পালন নিশ্চিত করার নির্দেশ দিতে দিতে পারবে।
১১(৬)উপধারা অনুযায়ী আদালত নিরাপত্তা প্রার্থীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দিতে পারবে এবং প্রয়োজনবোধে আদালত স্থানান্তর এবং বিবাদীদের নির্দিষ্ট কোন এলাকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা সহ নিরাপত্তার বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।

অপরাধসমূহ
১৩(১) উপধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তিকে নির্যাতন করলে তা ওই ব্যক্তির কৃত একটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। ১৩(২) উপধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি উপধারা (১) বর্ণিত কোন অপরাধ-ক) সাধনে উদ্যোগী হন; খ) সংগঠনের সহায়তা ও প্ররোচিত করেন; অথবা গ) সংগঠনের ষড়যন্ত্র করেন তাহলে এ আইনের অধীনে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবে।১৩(৩) উপধারা অনুযায়ী এ আইনে কৃত অপরাধের দায়ভার অপরাধীকে ব্যক্তিগতভাবে বহন করতে হবে।

বিচার কাল
১৪ ধারা অনুযায়ী মামলা দায়েরের ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করতে হবে এবং কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া সম্পন্ন করা না গেলে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে বিচারকার্য সম্পূর্ণ করতে হবে।

শাস্তি
১৫(১)উপধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি এ আইনের ১৩(১) উপধারার অধীন দোষী সাব্যস্ত হলে তিনি অনূন্য ৫(পাঁচ) বছর সশ্রম কারাদন্ড অথবা অনূন্য ৫০,০০০(পঞ্চাশ হাজার) টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন এবং উহার অতিরিক্ত ২৫,০০০/-(পঁচিশ) হাজার টাকা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করবেন।

১৫(২)উপধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তিকে যদি নির্যাতন করেন এবং উক্ত নির্যাতনের ফলে উক্ত ব্যক্তি যদি মৃত্যুবরণ করেন তাহলে নির্যাতনকারী এ আইনের ধারা ১৩(১) অনুযায়ী অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবে এবং তজ্জন্য তিনি অনূন্য সশ্রম যাবজ্জীবন কারাদন্ড অথবা অনূন্য এক লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড দণ্ডিত হবেন এবং উহার অতিরিক্ত ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত বা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করবেন।

১৫(৩)উপধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি এই আইনের ১৩(২) উপধারার অধীনে দোষী সাব্যস্ত হলে তিনি অনূন্য ২(দুই) বছর সশ্রম কারাদন্ড অথবা অনূন্য ২০( বিশ) হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দণ্ডিত হবেন।

# বাস্তবে উক্ত আইনের সফল প্রয়োগ হচ্ছে কি ?

যদিও রাষ্ট্র ও নাগরিক একে অন্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু কালের বিবর্তনে নাগরিকরা রাষ্ট্রের আনুগত্য করবে, না সরকারের আনুগত্য করবে,নাকি তাদের আনুগত্য হবে উভয়বিধ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই।

দেশের সংবিধানে নাগরিকের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকারের পূর্ন নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে এবং রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকদের দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে নাগরিকের সব অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা।

অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্র সংবিধান প্রদত্ত নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না; বরং ক্ষেত্র বিশেষে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নাগরিক অধিকার ক্ষুন্ন করার ঘটনাও ঘটছে। অনেক ক্ষেত্রে নাগরিক আইনি আশ্রয় লাভেও বঞ্চিত হচ্ছেন।

বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জিম্মা থাকা অবস্থায় মৃত্যু ঠেকাতেই উল্লেখিত আইন প্রণয়ন করা হলেও দেশে এ আইনটি অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে।

গত ৬ জানুয়ারি ২০২১ পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যায় যে, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৪ (চার) বছরে ২৬০ জন হেফাজতে মারা যায় এবং গত সাত বছরে মারা গেছেন ৩০৬ জন। এর মধ্যে ২০১৮ সালে ১৭ জন, ২০১৯ সালে ১৮ জন, ২০২০ সালে ২৪ জন। এদের মধ্যে বরিশালে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া “রেজাউল করিম” সিলেটের বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে “রায়হান আহমদ” রমনা থানায় “জাকির হোসেন” টেকনাফ থানা এলাকায় মেজর সিনহা মোঃ রাশেদ খান, উত্তরা পশ্চিম থানায় আলমগীর, পল্লবী থানায় ইশতিয়াক হোসেন জনি, রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানায় লিটন উল্লেখযোগ্য। পুলিশের হিসেবে গত সাত বছরে হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ১৯ টি।

উল্লিখিত মামলার মধ্যে ৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে জনি হত্যার মামলায় রায় হয় এবং উক্ত রায়ে তিনজনের যাবজ্জীবন ও দুই জনের সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

এটা স্পষ্ট যে, সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ বাংলাদেশ বনাম ব্ল্যাষ্ট মামলায় প্রদত্ত নির্দেশনা অনেক ক্ষেত্রে উপেক্ষিত হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। এর কারন হিসেবে উল্লেখ করা যায় যে, অনেকেই এ আইন সম্পর্কে অবগত নয়, আবার অবগত থাকলেও নানা রকম হয়রানির ভয়ে কেউ মামলা করারও সাহস করেনা।

দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রয়েছে সুদীর্ঘ সম্মান ও সুনামের ইতিহাস। কিন্তু কিছু সদস্যদের কারনে এ বাহিনীর সুনাম ক্ষুন্ন হোক এটা কারো প্রত্যাশা নয়। তাছাড়া কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়। উদাহরণ হিসেবে আমেরিকার জর্জ ফ্লুয়েড হত্যা মামলায় পুলিশ অফিসারের সাজা, বাংলাদেশে ওসি মোয়াজ্জেমের, পল্লবী থানার উপ-পরিদর্শক জাহিদুর রহমান জাহিদ, এসআই কামরুজ্জামান মিন্টু, এসআই রাশিদুল ইসলামের সাজা উল্লেখ করা যায়।

কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়। তাই উক্ত আইনের অধীন অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করাই হবে সমীচীন।

ডিএএম/এমএইচ//

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

হেফাজতে নির্যাতনের আইনগত প্রতিকার

Update Time : ০৫:০২:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ অগাস্ট ২০২১

মোঃ জে,আর,খান (রবিন),এডভোকেট
বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট :

নির্যাতন ও সরকারি কর্মকর্তার হেফাজতে মৃত্যু ও আইনগত প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।

রাষ্ট্র ও নাগরিকের মধ্যে সম্পর্কটা খুবই নিবিড়। রাষ্ট্রহীন ব্যক্তি যেমন আত্মপরিচয়হীন তেমনি নাগরিক ছাড়া রাষ্ট্রও অকার্যকর।

রাষ্ট্র যেমন নাগরিক জীবনকে অর্থবহ সুন্দর ও গতিশীল করে তোলে, ঠিক তেমনিভাবে সুনাগরিকও রাষ্ট্রকে সফল করে তোলার ক্ষেত্রে অপরিহার্য।

রাষ্ট্রকে হতে হবে কল্যাণমুখী তেমনি ভাবে নাগরিকরাও হবেন রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যশীল।
রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে নাগরিকের জান ও মালের নিরাপত্তা প্রদানসহ সকল মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা।

রাষ্ট্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা ও সব অধিকার নিশ্চিত করে থাকে। কিন্তু বিভিন্ন সময় দেখা যায় যে, কোন কোন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য কাউকে গ্রেফতার করতে গিয়ে অথবা কাউকে তাদের হেফাজতে নিয়ে অন্যায় ভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছে। নির্যাতনে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ মৃত্যুর ঘটনা রয়েছে অনেক।

১৯৮৪ সালের ১০ ডিসেম্বর নিউইয়র্কে নির্যাতন এবং নিষ্ঠুর অমানবিক, লাঞ্ছনাকর ব্যবহার অথবা অন্যান্য নিষ্ঠুর দন্ড বিরোধী একটি সনদ স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৯৮ সালের ৫ অক্টোবর উক্ত সনদে স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশও উক্ত সনদের অংশীদার হয়।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদেও নির্যাতন এবং নিষ্ঠুর অমানবিক লাঞ্ছনাকর ব্যবহার ও দণ্ড মৌলিকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

জাতিসংঘের সনদের ২(১) ও ৪ নং অনুচ্ছেদে নির্যাতন, নিষ্ঠুর, অমানবিক ও লাঞ্ছনাকর ব্যবহার ও অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে নিজ নিজ দেশে আইন প্রণয়নের দাবির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশেও ২০১৩ সালে ‘নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন’ প্রনয়ণ করা হয়। এই আইনের অধীনেকৃত অপরাধ, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও আইনগত প্রতিকার নিয়ে সংশ্লিষ্ট ধারা সমূহসহ আলোচনা করার চেষ্টা করছি;

‘নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন’-২০১৩ এর;

২(৩) উপ-ধারা অনুয়ায়ী “সরকারি কর্মকর্তা” বলতে প্রজাতন্ত্রের বেতনভূক্ত কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে বুঝায়। ২(৪) উপ-ধারা অনুযায়ী “আইন প্রয়োগকারী সংস্থা” বলতে পুলিশ,র্য্যাব, বর্ডার গার্ড বাংলাদশ, কাস্টমস, ইমিগ্রেশন, অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা শাখা, আনসার ভিডিপি ও কোস্টগার্ডসহ দেশে আইন প্রয়োগকারী ও বলবৎকারী সরকারি কোন সংস্থাকে বুঝায়।

২(৬) উপ-ধারা অনুযায়ী “নির্যাতন” বলতে কষ্ট হয় এমন ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সহ অন্যান্য নির্যাতনকে বুঝায়, ইহা ছাড়াও; ক) কোন ব্যক্তি বা অপর কোন ব্যক্তির নিকট হতে তথ্য বা স্বীকারোক্তি আদায়ে; খ) সন্দেহ বাজন অথবা অপরাধী কোন ব্যক্তিকে শাস্তি প্রদানে; গ) কোন ব্যক্তি অথবা তার মাধ্যমে অপর কোন ব্যক্তিকে ভয়ভীতি দেখানো; ঘ) বৈষম্যের ভিত্তিতে কারো প্ররোচনা বা উস্কানি, কারো সম্মতিক্রমে বা নিজ ক্ষমতা বলে কোন সরকারি কর্মকর্তা বা সরকারি ক্ষমতাবলে-
এরুপ কর্মসাধনও নির্যাতন হিসেবে গন্য হবে।

২(৭) উপ-ধারা অনুযায়ী “হেফাজতে মৃত্যু” বলতে সরকারি কোন কর্মকর্তার হেফাজতে কোন ব্যক্তির মৃত্যু ; ২(৮) উপ-ধারা অনুযায়ী “ক্ষতিগ্রস্ত অথবা সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি” বলতে এমন ব্যক্তি যাকে এ আইনের অধীনে তার উপর অথবা তার সংশ্লিষ্ট বা উদ্বিগ্ন এমন কারো উপর নির্যাতন করা হয়েছে।

আদালতে অভিযোগ দায়ের পদ্ধতি: ১৪ ধারা-অনুযায়ী যেহেতু এ আইনের অধীন কোন অপরাধের বিচার কেবলমাত্র দায়রা জজ আদালতে
অনুষ্ঠিত হয়, সেহেতু ক্ষতিগ্রস্ত বা নির্যাতিত ব্যক্তি উক্ত আইনের ৪(১) ধারা অনুযায়ী দায়রা জজ আদালতে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।

অভিযোগ প্রাপ্তির পর আদালতের কার্যক্রম: ৪(১) উপ-ধারা অনুযায়ী অভিযোগ প্রাপ্তির পর নিম্ন লিখিত কার্যক্রম গ্রহন করবেন; ক) তাৎক্ষণিকভাবে উক্ত ব্যক্তির বিবৃতি লিপিবদ্ধ করবেন; খ) একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসক দ্বারা তার (অভিযোগকারীর) দেহের পরীক্ষার আদেশ দিবন; গ) মহিলার ক্ষেত্রে মহিলা চিকিৎসক দ্বারা পরীক্ষার ব্যবস্তা করবেন; ৪(২) উপধারা অনুযায়ী চিকিৎসক অভিযোগকারীর দেহের জখম ও নির্যাতনের চিহ্ন এবং নির্যাতনের সম্ভাব্য সময় উল্লেখপূর্বক ২৪ ঘন্টার মধ্যে উহার একটি রিপোর্ট তৈরি করবেন; ৪(৩) উপধারা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক প্রস্তুতকৃত রিপোর্টের এক কপি অভিযোগকারী অথবা তার মনোনীত ব্যক্তিকে দিবেন এবং আদালতে দাখিল করবেন। ৪(৪) উপধারা অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষাকৃত ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তির জন্য আদালত নির্দেশ দিতে পারবেন।

আদালত কর্তৃক মামলা দায়েরের নির্দেশ প্রদান: ৫(১) উপ-ধারা অনুযায়ী ৪(১) ধারা মোতাবেক বিবৃতি লিপিবদ্ধ করার পর আদালত অনতিবিলম্বে বিবৃতির এক কপি সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপার বা ক্ষেত্রমতে তদূর্ধ্ব কোন পুলিশকর্মকর্তার কাছে প্রেরণ করে মামলা
দায়েরের নির্দেশ প্রদান করববেন। ৫(২) উপ-ধারা অনুযায়ী পুলিশ সুপার উক্ত আদেশ প্রাপ্তির পর পরই ঘটনার তদন্ত করে চার্জ অথবা চার্জ বিহীন রিপোর্ট পেশ করবেন: তবে শর্ত থাকে যে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি যদি মনে করেন পুলিশ দ্বারা সুষ্ঠুভাবে তদন্ত সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদন যথার্থ বিবেচনায় আদালত বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ প্রদান করবেন।

৫(৩) উপ-ধারা অনুযায়ী রিপোর্ট দাখিলের সময় তদন্ত কর্মকর্তা ক্ষেত্রমত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কর্মকর্তা ৪(১) উপ-ধারা অনুযায়ী বিবৃতি প্রদানকারী ব্যক্তিকে তারিখসহ রিপোর্ট দাখিল সম্পর্কে আদালতকে অবহিত করবেন।
৫(৩) উপ-ধারা অনুযায়ী উল্লিখিত উপধারা (৩) অনুযায়ি নোটিশ প্রাপ্ত কোন ব্যক্তি নোটিশ গ্রহণের ৩০ দিনের মধ্যে নিজে ব্যক্তিগত ভাবে অথবা আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে আপত্তি জানাতে পারবেন।

৫(৫) উপ-ধারা অনুযায়ী আদালত সংঘটিত অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির পদমর্যাদার নিম্নে নহে এমন পদমর্যাদার কোন পুলিশ অফিসার কে মামলা তদন্ত অনুষ্ঠানে নির্দেশ প্রদান করবেন।

তৃতীয় পক্ষ কর্তৃক অভিযোগ : ৬(১) উপ-ধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তিেকে অন্য কোন ব্যক্তি নির্যাতন করেছে বা করছে এরুপ কোন তথ্য তৃতীয় কোন ব্যক্তি আদালতকে অবহিত করলে আদালত ৫ ধারা মোতাবেক অভিযোগকারীর বিবৃতির উপর নিজের মন্তব্য লিপিবদ্ধ করে উক্ত ব্যক্তির নিরাপত্তা বিধান করবেন। ৬(২) উপ-ধারা অনুযায়ী অভিযোগকারীর বক্তব্যে আদালত সন্তুষ্ট হলে প্রয়োজনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে পারবেন।

অভিযোগের অপরাপর ধরন : ৭(১) উপ-ধারা অনুযায়ী ৫ ও ৬ ধারায় বর্ণিত প্রক্রিয়া ছাড়াও কোন ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়া সত্ত্বেও তৃতীয়কোন ব্যক্তি দায়রা জজ আদালতে অথবা পুলিশ সুপারের নিচে নয় এমন কোন পুলিশ কর্মকর্তার নিকট নির্যাতনের অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন।

৭(২) অনুযায়ী ৭(১) উপ-ধারায় বর্ণিত এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ সুপার অথবা তার চেয়ে উর্ধ্বতন পদমর্যাদার কোন অফিসার তাৎক্ষণিক একটি মামলা দায়ের ও অভিযোগকারীর বক্তব্য রেকর্ড করবেন এবং মামলার নম্বরসহ এ অভিযোগের ব্যাপারে কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে উহা অভিযোগকারীকে অবহিত করবেন। ৭(৩) উপ-ধারা অনুযায়ী উপরে বর্ণিত ৭(২) উপ-ধারা মোতাবেক অভিযোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনকারি পুলিশ সুপার অথবা তাহার উর্দ্ধতন কর্মকর্তা অভিযোগ দায়েরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দায়রা জজ আদালতে একটি রিপোর্ট পেশ করবেন।

তদন্তের সময় সীমা:
৮(১) উপ-ধারা অনুযায়ী ৯০ দিন এবং পরবর্তীতে আবেদনের প্রেক্ষিতে আরো সময় বৃদ্ধি পেতে পারে।

নিরাপত্তার বিধান :
১১(১) উপ-ধারা অনুযায়ী অভিযোগকারী কোন ব্যক্তি এ আইনে অভিযুক্ত কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বিধান কল্পে দায়রা জজ আদালতে পিটিশন দায়ের করতে পারবে।
১১(২) উপ-ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্র এবং যার বিরুদ্ধে নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছে তাদেরকে উত্ত পিটিশনের পক্ষভুক্ত করা যাবে। ১১(৪) উপধারা অনুযায়ী উল্লখিত (১)উপ-ধারায় বর্ণিত এ ধরনের কোন মামলা নিষ্পত্তি কালে আদালত প্রয়োজন বোধে ঐ ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনূন্য সাত দিনের অন্তরীণ আদেশ দিতে পারবে এবং সময়ে সময়ে উহা বৃদ্ধি করতে পারবে।

১১(৫) উপ-ধারা অনুযায়ী আদালত এ আইনের অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধের তদন্ত কর্মকর্তাদের আদালতের আদেশ পালন নিশ্চিত করার নির্দেশ দিতে দিতে পারবে।
১১(৬)উপধারা অনুযায়ী আদালত নিরাপত্তা প্রার্থীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দিতে পারবে এবং প্রয়োজনবোধে আদালত স্থানান্তর এবং বিবাদীদের নির্দিষ্ট কোন এলাকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা সহ নিরাপত্তার বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।

অপরাধসমূহ
১৩(১) উপধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তিকে নির্যাতন করলে তা ওই ব্যক্তির কৃত একটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। ১৩(২) উপধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি উপধারা (১) বর্ণিত কোন অপরাধ-ক) সাধনে উদ্যোগী হন; খ) সংগঠনের সহায়তা ও প্ররোচিত করেন; অথবা গ) সংগঠনের ষড়যন্ত্র করেন তাহলে এ আইনের অধীনে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবে।১৩(৩) উপধারা অনুযায়ী এ আইনে কৃত অপরাধের দায়ভার অপরাধীকে ব্যক্তিগতভাবে বহন করতে হবে।

বিচার কাল
১৪ ধারা অনুযায়ী মামলা দায়েরের ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করতে হবে এবং কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া সম্পন্ন করা না গেলে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে বিচারকার্য সম্পূর্ণ করতে হবে।

শাস্তি
১৫(১)উপধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি এ আইনের ১৩(১) উপধারার অধীন দোষী সাব্যস্ত হলে তিনি অনূন্য ৫(পাঁচ) বছর সশ্রম কারাদন্ড অথবা অনূন্য ৫০,০০০(পঞ্চাশ হাজার) টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন এবং উহার অতিরিক্ত ২৫,০০০/-(পঁচিশ) হাজার টাকা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করবেন।

১৫(২)উপধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তিকে যদি নির্যাতন করেন এবং উক্ত নির্যাতনের ফলে উক্ত ব্যক্তি যদি মৃত্যুবরণ করেন তাহলে নির্যাতনকারী এ আইনের ধারা ১৩(১) অনুযায়ী অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবে এবং তজ্জন্য তিনি অনূন্য সশ্রম যাবজ্জীবন কারাদন্ড অথবা অনূন্য এক লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড দণ্ডিত হবেন এবং উহার অতিরিক্ত ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত বা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করবেন।

১৫(৩)উপধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি এই আইনের ১৩(২) উপধারার অধীনে দোষী সাব্যস্ত হলে তিনি অনূন্য ২(দুই) বছর সশ্রম কারাদন্ড অথবা অনূন্য ২০( বিশ) হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দণ্ডিত হবেন।

# বাস্তবে উক্ত আইনের সফল প্রয়োগ হচ্ছে কি ?

যদিও রাষ্ট্র ও নাগরিক একে অন্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু কালের বিবর্তনে নাগরিকরা রাষ্ট্রের আনুগত্য করবে, না সরকারের আনুগত্য করবে,নাকি তাদের আনুগত্য হবে উভয়বিধ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই।

দেশের সংবিধানে নাগরিকের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকারের পূর্ন নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে এবং রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকদের দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে নাগরিকের সব অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা।

অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্র সংবিধান প্রদত্ত নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না; বরং ক্ষেত্র বিশেষে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নাগরিক অধিকার ক্ষুন্ন করার ঘটনাও ঘটছে। অনেক ক্ষেত্রে নাগরিক আইনি আশ্রয় লাভেও বঞ্চিত হচ্ছেন।

বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জিম্মা থাকা অবস্থায় মৃত্যু ঠেকাতেই উল্লেখিত আইন প্রণয়ন করা হলেও দেশে এ আইনটি অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে।

গত ৬ জানুয়ারি ২০২১ পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যায় যে, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৪ (চার) বছরে ২৬০ জন হেফাজতে মারা যায় এবং গত সাত বছরে মারা গেছেন ৩০৬ জন। এর মধ্যে ২০১৮ সালে ১৭ জন, ২০১৯ সালে ১৮ জন, ২০২০ সালে ২৪ জন। এদের মধ্যে বরিশালে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া “রেজাউল করিম” সিলেটের বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে “রায়হান আহমদ” রমনা থানায় “জাকির হোসেন” টেকনাফ থানা এলাকায় মেজর সিনহা মোঃ রাশেদ খান, উত্তরা পশ্চিম থানায় আলমগীর, পল্লবী থানায় ইশতিয়াক হোসেন জনি, রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানায় লিটন উল্লেখযোগ্য। পুলিশের হিসেবে গত সাত বছরে হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ১৯ টি।

উল্লিখিত মামলার মধ্যে ৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে জনি হত্যার মামলায় রায় হয় এবং উক্ত রায়ে তিনজনের যাবজ্জীবন ও দুই জনের সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

এটা স্পষ্ট যে, সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ বাংলাদেশ বনাম ব্ল্যাষ্ট মামলায় প্রদত্ত নির্দেশনা অনেক ক্ষেত্রে উপেক্ষিত হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। এর কারন হিসেবে উল্লেখ করা যায় যে, অনেকেই এ আইন সম্পর্কে অবগত নয়, আবার অবগত থাকলেও নানা রকম হয়রানির ভয়ে কেউ মামলা করারও সাহস করেনা।

দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রয়েছে সুদীর্ঘ সম্মান ও সুনামের ইতিহাস। কিন্তু কিছু সদস্যদের কারনে এ বাহিনীর সুনাম ক্ষুন্ন হোক এটা কারো প্রত্যাশা নয়। তাছাড়া কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়। উদাহরণ হিসেবে আমেরিকার জর্জ ফ্লুয়েড হত্যা মামলায় পুলিশ অফিসারের সাজা, বাংলাদেশে ওসি মোয়াজ্জেমের, পল্লবী থানার উপ-পরিদর্শক জাহিদুর রহমান জাহিদ, এসআই কামরুজ্জামান মিন্টু, এসআই রাশিদুল ইসলামের সাজা উল্লেখ করা যায়।

কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়। তাই উক্ত আইনের অধীন অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করাই হবে সমীচীন।

ডিএএম/এমএইচ//