নিজস্ব প্রতিবেদক :
শতবর্ষে গৌরব ঐতিহ্য সংগ্রাম অর্জনের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
অঙ্কের হিসাবে শতক পার। দীর্ঘ এ সময়ে এসে প্রত্যাশা আর প্রাপ্তিতে ঢের ফারাক থাকলেও নিজস্ব আলোয় আলোকিত এ বিদ্যাপীঠ। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বময় উদ্ভাসিত। নিজস্ব গৌরব ও ঐতিহ্যে এখনো গৌরবান্বিত। অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করা প্রতিষ্ঠান হিসেবে খ্যাতি রয়েছে বিশ্ব দরবারে। দীর্ঘ পথচলায় অর্জন রয়েছে অনেক।
একটি জাতির ভাষার অধিকার থেকে শুরু করে স্বাধীনতা এনে দেয়া পর্যন্ত সব জায়গায় ছিল নেতৃত্বের অগ্রভাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শুধু তাই নয়, স্বাধীনতার পরেও যখনই হুমকিতে পড়েছে লাল সবুজের পতাকা তখনই ত্রাতার ভূমিকায় আবির্ভূত হয়েছে এই বিদ্যাপীঠের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
প্রাচ্যের বাতিঘর হিসেবে খ্যাত দেশের ষোলো কোটি মানুষের স্বপ্নের জায়গা হিসেবে চিহ্নিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস এখন। আজ ১লা জুলাই। শততম প্রতিষ্ঠাার্ষিকী দেশসেরা বিদ্যাপীঠটির।
বঙ্গভঙ্গ রদের পর পূর্ব বাংলার পিছিয়ে পড়া মানুষদের উন্নয়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন ঢাকার নবাব পরিবার। বৃটিশ ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন তৎকালীন পূর্ব বাংলার জমিদার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী ও শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক। তাদের প্রস্তাবের ভিত্তিতে বৃটিশ ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের নির্দেশে ১৯১২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ব্যারিস্টার রবার্ট নাথানের নেতৃত্বে নাথান কমিটি গঠন করা হয়। সুদীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ১৯২১ সালের ১লা জুলাই ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে ৬০০ একর জমি নিয়ে মনোরম পরিবেশে বিশাল তরুছায়া সুনিবিড় পরিবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। যদিও এখন কমতে কমতে এর আয়তন দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৬০ একরে।
বৃটিশরা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে এর পঠন-পাঠন ও শিক্ষাদান কার্যক্রম পদ্ধতি তৈরি করেছিলেন বলেই এটিকে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হতো। এরপর থেকেই জ্ঞান-বিজ্ঞান ও বিদ্যাচর্চার খ্যাতিতে এই উপমহাদেশের একটি শ্রেষ্ঠ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপ নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
শিক্ষাদান, বিদ্যাচর্চা, শিক্ষকদের গবেষণা ও পাণ্ডিত্যের খ্যাতি শুধু এ উপমহাদেশে নয়, অর্জনের প্রভাব পড়ে পূর্ব বাংলা পেরিয়ে ইউরোপ, আমেরিকাসহ নানা দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও। অন্যদিকে এর আবাসিক ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছিল উপমহাদেশের প্রাচীনতম এবং তৎকালীন শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান ভারতের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে। উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থীরা আবাসিক হলে থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবেন, পাঠ নেবেন ও জ্ঞানার্জনের নানা প্রয়োজনে লাইব্রেরিসহ শিক্ষকের সাহচর্য লাভ করবেন।
জাতীয় জীবনে এ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীদের অর্জন অনেক হলেও বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে পড়ায় এর একাডেমিক ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বেশ কয়েক বছর ধরে।
বর্ণিলভাবে শতবর্ষ উদ্যাপনের লক্ষ্য থাকলেও বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরিস্থিতির কারণে তা এখনই হচ্ছে না। শিক্ষার্থী ছাড়া এক মলিন শতবর্ষ উদ্যাপন করতে হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে। বন্ধ ক্যাম্পাসে আলোকসজ্জা করা হলেও যেন কাঁদছে আবাসিক হল ও একাডেমিক ভবনগুলো।
সরজমিন ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, সব ভবন বর্ণিলভাবে সাজানো হয়েছে। তবুও শিক্ষার্থী ছাড়া প্রাণহীন এক ক্যাম্পাস, যেন মহামারির দ্রুত বিদায়ে হাত তুলেছে স্রষ্টার কাছে। দিবসটি উপলক্ষে ক্যাম্পাসে সশরীরে কোনো অনুষ্ঠান না হলেও অনলাইনে প্রতীকী কর্মসূচি পালিত হবে।
ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে আজ বিকাল ৪টায় ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে মূল বক্তা হিসেবে সংযুক্ত থাকবেন ভাষাসৈনিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। তিনি ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ: ফিরে দেখা’ শীর্ষক মূল বক্তব্য প্রদান করবেন।
শতবর্ষপূর্তির মূল অনুষ্ঠান বর্ণাঢ্য ও জাঁকজমকপূর্ণভাবে আগামী ১লা নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ।
ডিএএম/এসএম//
Leave a Reply