বদলে গেছে উচ্চ আদালতে শুনানির চিত্র
- Update Time : ০১:০৩:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুন ২০২১
- / ২ Time View
দিদারুল আলম :
করোনা সংক্রমণ জনিত উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে বদলে গেছে দেশের উচ্চ আদালতে মামলা শুনানির চিত্র।
২০২০ সালের শুরুতে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের থাবায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। করোনা সংক্রমণ এড়াতে বন্ধ রয়েছে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে বন্ধের ক্ষতি পোষাতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল বা অনলাইনে ক্লাস পরীক্ষা চালু রয়েছে।
মানুষের ন্যায়বিচার রক্ষায় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে চালু হয় আদালত পরিচালনা।
আইনজীবীরা বাসায় বা চেম্বারে অবস্থান করে তার মামলায় অনলাইনে ভার্চুয়ালি শুনানিতে অংশ নিচ্ছেন। প্রথম প্রথম এতে আইনজীবীরা অভ্যস্ত হতে কিছুটা সমস্যার মুখোমুখি হলেও এখন নির্বিঘ্নে ভার্চুয়ালি শুনানি করছেন।
তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে শারীরিক উপস্থিতি ব্যতিরেকে ভার্চুয়ালি দেশের উচ্চ আদালতে বিচার কার্যক্রম চলছে।
সুপ্রিমকোর্টের মুখপাত্র ও বিশেষ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান সারাদেশকে জানান, মহামারি করোনাভাইরাস জনিত সংক্রমণ এড়াতে শারীরিক উপস্থিতি ব্যাতিরেকে ভার্চুয়াল উপস্থিস্তিতে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে ১৭ জুন ২০২১ পর্যন্ত ১০ হাজার ৭৬২ টি মামলা নিস্পত্তি হয়েছে। তিনি জানান, এর মধ্যে ২০২০ সালের ১৩ জুলাই থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিস্পত্তি হয় ৭ হাজার ১২৫ টি মামলা এবং চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত নিস্পত্তি হয় ৩ হাজার ৬৩৭ টি মামলা।
গত বছরের ৮ মার্চ মাসে দেশে করোনা সংক্রমণের শুরু। পরে পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার সাধারণ ছুটি, চলাচলে বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি ঘোষণা দিয়েছিল। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিতে সরকার ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ-২০২০’জারি করে। গতবছর ৭ মে মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমোদনের পর ৯ মে ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০’জারি করে সরকার। এই অধ্যাদেশ জারির পরই ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অধঃস্তন আদালতে জামিন সংক্রান্ত আবেদনের নিষ্পত্তির নির্দেশনা দেয়া হয়। জারি করা হয় সুপ্রিমকোর্ট থেকে প্র্যাকটিস ডাইরেকশন। পাশাপাশি ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে চালু করা হয় সুপ্রিমকোর্টের বিচার কার্যক্রমও। পরে গত বছর ৯ জুলাই অধ্যাদেশটি “আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার আইন, ২০২০” হিসেবে জাতীয় সংসদে পাস হয়। মামলার বিচার , বিচারিক অনুসন্ধান, দরখাস্ত, আপিল শুনানি, সাক্ষ্য গ্রহণ, যুক্তিতর্ক গ্রহণ, আদেশ ও রায় প্রদানকালে পক্ষগণের ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে আদালতকে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষমতা প্রদানে প্রণীত হয় এই আইন। বিদ্যমান বাস্তবতা ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে আইনটি প্রনণয় করে সরকার।
গত ১৭ জুন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন হাইকোর্ট বিভাগে সুনির্দিষ্ট বিচারিক এখতিয়ার দিয়ে ৫৩ টি বেঞ্চ গঠন করে দিয়েছেন। মহামারি করোনাভাইরাস জনিত সংক্রমণ এড়াতে ভার্চুয়াল উপস্থিস্তিতেই ২০ জুন থেকে হাইকোর্টে এই ৫৩ টি বেঞ্চে বিচারকার্য চলছে।
করোনাভাইরাস মহামারি জনিত পরিস্থিতিতে যখন বিভিন্ন সেকটরে কাজের ক্ষেত্রে স্থবিরতা সৃষ্টি হয় তখন তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে বিচার বিভাগে কার্যক্রম শুরু হয়। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে বিচার কাজ প্রথমে সীমিত পরিসরে শুরু হলেও এখন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগ, অধঃস্তন আদালতে বৃহত্তর পরিসরে ভার্চুয়ালি বিচারিক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। গতকাল ২০ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শারিরীক উপস্থিতিতেও অধঃস্তন আদালতে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা শুরু হয়েছে।
করোনার কারণে জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছুই চলছে বিধিনিষেধ মেনে। কিন্তু বন্ধ হয়নি দেশের সর্বোচ্চ ও নিম্ন আদালতে বিচার কার্য। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে চলছে উচ্চ আদালতের কোর্টসমূহ। এতে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বিচারক ও আইনজীবীরা মামলা পরিচালনায় অংশ নিচ্ছেন। ফলে বজায় থাকছে সামজিক ও শারীরিক দূরত্ব। থাকছে না করোনায় আক্রান্তের ঝুঁকি।
ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করায় আপিল বিভাগে একটি সিভিল মামলায় সিঙ্গাপুর থেকে শুনানিতে অংশ নেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি। এসময় তার বিপক্ষের কৌসুলি সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার ফিদা এম কামাল শুনানি করেন বাংলাদেশ থেকেই। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে এটা সম্ভব হয়েছে । শুধু সিঙ্গাপুর নয় দেশের বাইরে থেকে, বাসা ও চেম্বার থেকে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে আইনজীবীরা আদালতে তার মক্কেলের পক্ষে মামলা পরিচালনায় অংশ নিচ্ছেন।
ডিএএম/