বিশেষ প্রতিনিধি :
সাম্যের কবি, বিরহ-বেদনার কবি, বিদ্রোহের কবি, বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২২তম জন্মবার্ষিকী আজ ২৫ মে।
জাতীয় কবির জন্মদিন উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি বলেছেন, বাংলা সাহিত্য-সংগীতে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান অনস্বীকার্য। ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে উঠে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। নজরুলের লেখনী থেকেই আমরা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং বাঙালির মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণা পেয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বাণীতে বলেছেন, জাতীয় জাগরণের অন্যতম পথিকৃত্ কবি নজরুল ছিলেন বাঙালি জাতির রাজনৈতিক মুক্তি-সংগ্রামের অকুতোভয় সৈনিক। অসামান্য ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী কবি নজরুলের আজীবন সাধনা ছিল সমাজের শোষিত ও নিপীড়িত মানুষের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি এবং মানুষের সামাজিক মর্যাদার স্বীকৃতি অর্জন। তার সাহিত্যকর্মে উচ্চারিত হয়েছে পরাধীনতা, সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামের বাণী।
নজরুল তার কবিতা, গান, উপন্যাসসহ অন্যান্য লেখনী ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে পরাধীন ভারতে বিশেষ করে অবিভক্ত বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা, সামন্তবাদ, সাম্রাজ্য ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বলিষ্ঠ ও সোচ্চার কণ্ঠ ছিলেন।
সে কারণে ইংরেজ সরকার তার গ্রন্থ ও রচনা বাজেয়াপ্ত করেছে এবং কারাদণ্ড দিয়েছে। কারাগারেও বিদ্রোহী নজরুল টানা ৪০ দিন অনশন করে বিদেশি সরকারের জেলজুলুমের প্রতিবাদ করেছিলেন।
রবীন্দ্রসৃষ্ট বিশাল জগতের পাশে কবি নজরুল গড়ে তোলেন নিজস্ব জগত্। সেখানে ফুটিয়ে তোলেন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ নজরুলের সদম্ভ অভ্যুদয়কে এই বলে স্বাগত জানিয়েছিলেন, ‘আয় চলে আয়রে ধূমকেতু, আঁধারে বাধ অগ্নিসেতু’।।
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ‘বিদ্রোহী কবি’ এবং আধুনিক বাংলা গানের ‘বুলবুল’ নামে খ্যাত কাজী নজরুল ইসলাম বিশ শতকের বিশ ও ত্রিশের দশকে উপমহাদেশের অবিভক্ত বাংলার সাংস্কৃতিক জগতে সবচেয়ে বর্ণাঢ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
তার কবিতা ‘চল চল চল’ বাংলাদেশের রণসংগীত। দ্রোহ, প্রেম, মানবতা কবির রচনাকে করেছে চিরন্তন, নিয়ে গেছে গণমানুষের কাছাকাছি। কবিতায় বলেছেন, ‘গাহি সাম্যের গান/ মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান…’।
কবির এমন অজস্র রচনা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর বাঙালিদের দিয়েছে শক্তি ও জুগিয়েছে প্রেরণা। এখনো সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে, সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও সংগ্রামে তার রচনা আমাদের গভীরভাবে উদ্দীপ্ত করে।
কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম বাংলা ১১ই জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬/১৮৯৯ ইং। পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে। তার পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ, মা জাহেদা খাতুন। দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় দুঃখ-দারিদ্র্য ছিল তার নিত্যসঙ্গী।
তার ডাকনাম ছিল দুখু মিয়া। পিতার অকাল মৃত্যুতে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য তিনি শিশু বয়সেই মক্তবে শিক্ষকতা, হাজি পালোয়ানের মাজারে খাদেম এবং মসজিদের মুয়াজ্জিনের কাজ করেছেন। যা পরবর্তীকালে বাংলা সাহিত্যে ইসলামী ঐতিহ্যের সার্থক ব্যবহারে এ সম্পৃক্ততা খুব ফলপ্রসূ হয়েছে।
১৯৭২ সালের ২৪ মে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে কবি সপরিবারে বাংলাদেশে আসেন।
বাংলাদেশ সরকার কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন এবং জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা দেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশেই ছিলেন। তার জীবনকাল ৭৭ বছর হলেও ১৯৪২ সালের জুলাই মাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর দীর্ঘ ৩৪ বছর ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি অসহনীয় নির্বাক জীবন কাটিয়েছেন।
জন্মদিনে যত আয়োজন: মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন কররেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
এছাড়াও, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন তার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানোর কথা। এদিকে, নজরুল একাডেমি জাতীয় কবির জন্মদিন উপলক্ষ্যে মাসব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এদিকে, নজরুলজয়ন্তীতে এ বছর ছায়ানটের নিবেদন ‘শান্তির জয় হোক’। নজরুলের মানবতা, স্বদেশ ও উদ্দীপনামূলক গান ও কবিতা দিয়ে সাজানো হয়েছে এ আয়োজন।
অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হবে আজ মঙ্গলবার, বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায়, ছায়ানটের ফেসবুক গ্রুপ (facebook.com/groups/chhayanaut) ও ইউটিউব চ্যানেলে (youtube.com/ ChhayanautDigitalPlatform)। এছাড়া, বাংলাদেশ সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২২তম জয়ন্তী উপলক্ষ্যে ‘কবি স্মরণ’-এর আয়োজন করেছে। আজ মঙ্গলবার রাত ৯টায় সংগঠনের ফেসবুক পেইজে অনুষ্ঠানটি সরাসরি দেখা যাবে। ৯টি সদস্য সংগঠনের ৯ জন শিল্পী এ অনুষ্ঠানে যুক্ত থাকবেন।
এসএস//
Leave a Reply