নিজস্ব প্রতিবেদক :
মহামারি করোনাভাইরাসে দেশে সরকারি হিসেবে ইতোমধ্যে ১২ হাজারের বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন।
যদিও দেশে বাস্তব এ সংখ্যা আরো বেশি। আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন এবং সুস্থতার জন্য লড়াই করছেন কয়েক লক্ষ মানুষ।
বিশ্বে করোনায় সরকারি হিসেবে মারা গেছেন প্রায় ৩৩ লাখ। আক্রান্ত কোটি কোটি।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান প্রদেশ থেকে শুরু হয়েছে এ প্রাণঘাতী করোনার প্রাদুর্ভাব। এরপর পুরো বিশ্বে এটির সংক্রমণ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে এটি প্রথম সনাক্ত ব্যক্তি চিন্হিত হয় ৮ মার্চ ২০২০ এবং প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৮ মার্চ। এরপর এটির সংক্রমণ চলছে। এখন দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। আমাদের প্রতিবেশী ভারতে করোনার নতুন ভাইব্রেন্ট আক্রান্ত কোটি মানুষ। প্রতিদিনই মৃত্যু হচ্ছে হাজারো মানুষের।
তাই বাড়তি সর্তকতায় বাংলাদেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতায় এ লকডাউন কার্যত মানছে না কেউ!
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে জারি করা বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-সিলেটসহ বিভিন্ন মহাসড়কে বাসে ঈদযাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে অনেকটা লুকোচুরি করে।
নিষেধাজ্ঞায় রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলো থেকে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হলেও আশপাশের বিভিন্ন স্থান থেকে দূরপাল্লার কিছু বাস ছেড়ে যাচ্ছে। ঈদের আগে বাড়ি যেতে এসব বাসে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে।
১১ মে ফেরিতে উঠতে গিয়ে পাঁচ জনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।
সড়ক পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নৌপথে যাত্রীর ঢল আর বুধবার বাংলাবাজার ঘাটে পাঁচ জনের প্রাণহানির পর মহাসড়কে বিকল্প যানবাহনে বাড়ি যাওয়ার প্রবণতা আরও বেড়েছে। ঈদও ঘনিয়ে এসেছে, তাই যাত্রীর চাপও বেড়েছে।
বুধবার ১২ মে গাজীপুরের চন্দ্রা, ঢাকা–আরিচা মহাসড়কের আশুলিয়া, ঢাকার প্রবেশপথ যাত্রাবাড়ী, কাঁচপুর, শিমরাইল মোড়,গাবতলী, কুমিল্লার বিভিন্ন বাস টার্মিনাল থেকে কৌশলে কিছু বাস যাত্রী নিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে রওনা দেয়।
বুধবার রাতেও বিক্ষিপ্তভাবে ঢাকা থেকে কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষীপুরের উদ্দেশ্যে কিছু বাস ছেড়ে যেতে দেখা গেছে।
সরকার মহানগরগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বাস চালানোর অনুমতি দিয়েছে। তবে দূরপাল্লার বাস বন্ধ রাখার নির্দেশনা বহাল রেখেছে।
এ অবস্থায় ঈদুল ফিতরে বাড়ি যেতে যাত্রীরা বিকল্প পরিবহন যেমন-পণ্য পরিবহনের ভারী যানবাহন, ট্রাক, পিকআপ ছাড়াও অ্যাম্বুলেন্সে করে গন্তব্যে যাচ্ছেন। আইনজীবী, চিকিৎসক ও জরুরি সেবার কাজে চলাচলকারী যানবাহনেও তারা চেপে বসছেন। প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ভাড়া করেও ছুটছেন অনেকে।
বুধবার সকালে আমিনবাজার থেকে বাস না পেয়ে শত-শত যাত্রী ভেঙে ভেঙে বিভিন্ন ছোট পরিবহন ব্যবহার করে সামনের দিকে যেতে থাকেন। বাহন না পেয়ে হেঁটে সামনে যেতে থাকা বৃদ্ধ সবুজ আলী বলেন, খুলনা শহরে যাবে। কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। কড়া রোদে ঘেমে হাতে ব্যাগ নিয়ে তিনি ছুটছিলেন গাড়ির আশায়।
বিভিন্ন পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার মহাখালী, গোলাপবাগ, কাঁচপুর, উত্তরা, গাজীপুরের চন্দ্রা ছাড়াও আশুলিয়া, বাইপাইলসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বাসচালকরা চুক্তিভিত্তিক ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করছেন।
চন্দ্রা থেকে কুড়িগ্রাম যেতে মারিয়া পরিবহনের একাধিক বাস ছেড়ে যায় বুধবার। এক্ষেত্রে বাসে সব মিলিয়ে ভাড়া আদায় করা হয় ৪০ হাজার টাকা। এভাবে বাসে অতিরিক্ত ভাড়া করে যাত্রীরা রওনা দেন রাজশাহী, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, বগুড়াসহ বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।
দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে কিছু বাস কৌশলে চলাচল করলেও পুলিশের পক্ষ থেকে বাধা দেয়া হয়নি।
তাছাড়া রেন্ট এ কারসহ অন্যান্য পরিবহনে মানুষকে গুনতে হচ্ছে নির্ধারিত টাকার চেয়েও অতিরিক্ত কয়েকগুণ ভাড়া।
সরেজমিন বুধবার সকালে রাজধানীর প্রবেশপথ কাঁচপুর থেকে কুমিল্লা, নোয়াখালী ও লক্ষীপুরে যেতে কয়েকটি বাসে যাত্রী তোলা হচ্ছিল।
গত কয়েকদিনই ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক রয়েছে বিভিন্ন গাড়ির চাপ, জ্যাম ও অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। সড়কে শৃঙ্খলায় পুলিশের তৎপরতা চোখে পড়েনি। ব্যাক্তিগত গাড়িতে ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে প্রায় পাঁচ ঘন্টা লেগেছে বলে জানান সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী আলম, চিকিৎসক আফরিনসহ অনেকে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সেন্টমার্টিন পরিবহনের বাস চলতে দেখা গেছে। এছাড়া ঢাকা-লক্ষীপুর, ঢাকা-নোয়াখালী, কুমিল্লা দাউদকান্দি ঢাকা রুটের বাসও চলাচল করেছে।
নিষেধাজ্ঞার মধ্যে যাত্রীদের বাড়ি যাওয়ার সুযোগ নিচ্ছে ভ্রাম্যমাণ দালালরাও। যাত্রীদের বাসে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়ার কথা বলে দ্বিগুণের বেশি টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলায় যেতে কাউন্টার থেকে টিকিট পাননি যাত্রীরা। রাজধানীতে বেশিরভাগ টিকিট কাউন্টার বন্ধই রাখা হয়েছিল। গাবতলী, কল্যাণপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন বাস কাউন্টারে টিকিট বিক্রি করা না হলেও ভ্রাম্যমাণ দালালরা আগে টাকা নিয়ে পরে বাসে তোলার ব্যবস্থা করছেন গত কয়েকদিন ধরে।
অকার্যকর এ লকডাউনে হয়রানি ও কষ্টের শিকার হচ্ছেন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ।
এখন শংকা এ পরিস্থিতির কারণে যেন করোনার ভয়াবহতা বৃদ্ধি না পায়।
এমএম//
Leave a Reply