গাড়ি শিল্পে দেশে বিপ্লব আনছে বাংলা কার
- Update Time : ০২:৫৩:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ মে ২০২১
- / ১ Time View
দিদারুল আলম:
বিদেশে নির্মিত গাড়ির উপর নির্ভরতা কমাতে বাংলাদেশেই গাড়ি তৈরিতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করছে।
গার্মেন্টস শিল্পের মতোই এখন গাড়ীতে বিশ্বব্যাপী পরিচিত পাবে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’। সেটি এখন আর স্বপ্ন নয় বাস্তব। এবার মেইড ইন বাংলাদেশ লেখা থাকবে বাংলাদেশে তৈরি গাড়ি ‘বাংলা কার’-এ। অবিশ্বাস্য হলেও এটিই এখন সত্যি।
তেজগাঁও বাংলা কার শোরুম এর ব্যবস্থাপক শেখ হাবিবুর রহমান নাসিম সারাদেশ’কে জানান, প্রথমাবস্থায় তৈরী ৩০ টি গাড়ী ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। ঈদের পর আনুষ্ঠানিক ভাবে গাড়ীগুলো এক আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনে হস্তান্তর করা হবে। মহামারি করোনাভাইরাস জনিত উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে আমাদের অনুষ্ঠান পিছিয়েছে। তিনি জানান, অত্যাধুনিক সুবিধা সম্বলিত এ গাড়ী ৩০ লাখ টাকায় মিলবে। সাত আসনের এই ‘বাংলা কার’ নিয়ে এলো হোসেন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। দেশীয় নিজস্ব ব্র্যান্ডের ৮ রঙের গাড়ি শোরুমে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এগুলো ২০২১ সালের নতুন মডেলের গাড়ি।
রাজধানীর তেজগাঁও ১৮১-১৮২ নম্বর ঠিকানায় ‘বাংলা কার’র শোরুমে সরেজমিন দেখা যায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ক্রেতা গাড়ীগুলো দেখছেন।
হোসেন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জাকির হোসেন গনমাধ্যমকে বলেন, কোটি টাকা খরচে মার্সিডিজ-বিএমডব্লিউ গাড়িতে একজন গ্রাহক যে সুবিধা পান বাংলা গাড়িতে সে সুবিধা মিলবে মাত্র ৩০ লাখ টাকায়। এটির বিশেষ বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অন্যতম হলো-গাড়িটি পোশাক খাতের মতো ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ নাম বহন করবে। দেশকে গাড়ি উৎপাদনে নেতৃত্ব দেবে জাপান, চায়না ও ভারতের মতো। প্রথম পর্যায়ে দেশের ৮ বিভাগে থাকছে বাংলা গাড়ির শোরুম। তাছাড়া আরও ৩০টি শোরুম খুলতে যাচ্ছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।
হোসেন গ্রুপের বাংলা কার তৈরির কারখানা নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটিতে। সেখান থেকে ১২ ধরনের গাড়ি বাজারজাত করা হবে। এর মধ্যে থাকবে প্রাইভেট কার, ট্রাক, বাস, লরি ট্রাক, পিকআপ উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশের নিজস্ব ব্র্যান্ডের বাংলা গাড়ি নির্মাণের জন্য জাপান, ইন্দোনেশিয়া ও চীনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে হোসেন গ্রুপ। ইশুজু ইঞ্জিন, জাপানি বডিতে নির্মিত গাড়িতে ‘লেখা থাকবে মেইড ইন বাংলাদেশ।’
এ প্রসঙ্গে জাকির হোসেন বলেন, আমরা দেশীয় ব্র্যান্ড, দেশীয় ডিজাইনে গাড়ি ম্যানুফ্যাচারিংয়ে যাচ্ছি। ইসুজু জাপানিজ ইঞ্জিন,চায়না বডি এবং ইন্দোনেশিয়ার চেসিস দিয়ে গাড়িগুলো তৈরি করছি। এসব গাড়ি অন্য গাড়ি থেকে ভিন্ন। ফোটন বা মিতসুবিশি একটা বা দুটি মডেলের গাড়ি তৈরি করতে পারবে কিন্তু বাংলা কারস সব মডেলের গাড়ি তৈরি করতে পারবে। ১৫০০ থেকে ২৫০০ সিসি পর্যন্ত যেটা ক্রেতার চাহিদা সেটা আমরা তৈরি করে দিতে পারব। আবার ৮ রঙের গাড়ি থাকলেও ক্রেতা যদি অন্য কোনো রঙ পছন্দ করেন, আমরা সেটাও দিতে পারব। দেশের মাটিতে দেশের তৈরি গাড়ি হলো ‘বাংলা কার’। এটা বিদেশি গাড়ি নয়, নিজেদের নামে নিজেদের গাড়ি প্রথমবারের মতো আমরা উৎপাদন করছি। আগামী বছরের শুরু বা মাঝামাঝিতে রপ্তানিতে যাওয়ার চিন্তা করছি।
তিনি বলেন, টয়োটা জাপানি কোম্পানি, হাভেল চায়নিজ কোম্পানি কিন্তু বাংলা কার আমাদের দেশীয় কোম্পানির গাড়ি। টাটার মতো আমরাও দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করব। আমরা এখন ট্রায়াল প্রডাকশনে আছি, জুন-জুলাইতে আমাদের আরও গাড়ি আসবে, পুরো বিশ্ব দেখবে যে ‘মেইড ইন বাংলাদেশের বাংলা গাড়ি।’ জুনে পিকআপ, ট্রাক নামবে। এরপর আমরা লরি, বাসসহ ১২ ধরনের গাড়ি নামাব। তাছাড়া ইলেকট্রিক গাড়ি নামবে আগামী বছর। পিএইচপি ফোটনের গাড়ি, প্রগতি মিতশুবিসির গাড়ি তৈরি করছে। আমাদেরটা নিজেদের গাড়ি। দেশের মাটিতে দেশের গাড়ি নির্মাণ হচ্ছে।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, গাড়ির এ-টু-জেড ফ্যাসিলিটি বাংলাদেশে থেকেই পাবে। প্রতি বছর চার থেকে পাঁচ হাজার গাড়ি বাজারজাত করার ইচ্ছা আছে। ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল, ইলেকট্রিক ভ্যাহিকেল, বড় লরি ট্রাক, সিমেন্টসহ যত ধরনের গাড়ি আছে সব গাড়ি উৎপাদন করব। তিনি বলেন, প্রতিটি গাড়িতে থাকছে ৫ বছরের ওয়ারেন্টি-গ্যারান্টি। গাড়ীটিতে রয়েছে অত্যাধুনিক সকল সূযোগ সুবিধা। তথ্য প্রযুক্তির নানা কমান্ড অপশন রয়েছে এ গাড়ীতে। সান ড্রপ এ গাড়ী ভয়েজ কমান্ডের ফাংশন রয়েছে।
ডিএএম//