দিদারুল আলম :
বহুল আলোচিত এবারের পশ্চিম বঙ্গ নির্বাচন। এ রাজ্যটি বাঙালি অধ্যুষিত। মোট ৮ দফায় এ রাজ্যে ভোট শেষ হয় ২৯ এপ্রিল।
কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের সিডিউল অনুযায়ী ২ মে রোববার ভোট গননা ও ফলাফল ঘোষণার দিন। সে অনুযায়ী আজ জানা যাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেসের টানা তৃতীয় বার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন না-কি ভারতের কেন্দ্রীয় ক্ষমতাসীন বিজেপির বিজয়ে রাজ্যে সরকার পরিবর্তন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ তার দলের নেতৃবৃন্দ ফের ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। অপরদিকে বিজেপির পক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষসহ নেতৃবৃন্দ বিজয়ের বিষয়ে দারুণ আত্মবিশ্বাসী।
দিলীপ ঘোষ বলেন, আমরা আগেই বলেছি লোকসভা নির্বাচন ২০১৯ এ পশ্চিম বঙ্গে বিজেপি হাফ এর ২০২১ বিধান সভায় ছাপ। অর্থাৎ বিজেপিই বেশি আসন পাবে এবং সরকার গঠন করবে।
এ রাজ্যে দেখা যায় গত দুই বছরে বিজেপির ভোট কর্মী সমর্থক বেড়েছে বহুগুন। যেখানে ২০১৬ সালে এ রাজ্যে বিজেপির আসন ছিল তিনটি আর এবার তারা রাজ্যে সরকার গঠনে আত্মবিশ্বাসী। এবং কোনো কোনো জরিপও এ আভাস দিচ্ছে। লোকসভা নির্বাচন ২০১৯ এ এ রাজ্যে বিজেপি জিতেছে ১৮ আসনে আর তৃণমূল ২২ টি। পরে তৃণমূলের ২ সাংসদ বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
তবে অধিকাংশ জরিপই তৃণমূলকে পরবর্তী সরকার গঠন বিষয়ে এগিয়ে রেখেছে। যদিও ২০১৬ এর তুলনায় তাদের আসন কমবে বলে জরিপগুলোতে বলা হয়। ২০১৯-এ লোকসভা নির্বাচনে বুথ ফেরত জরিপের তুলনায় ভালো করেছে বিজেপি।
তৃণমূল না বিজেপি, কার হাতে থাকবে রাজ্যের ভার? পাশাপাশি কে জিতবেন নন্দীগ্রামের যুদ্ধে? রবিবারই মিলবে সব উত্তর। সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকতে হলদিয়ার গণনাকেন্দ্রে ভিড় জমাচ্ছেন তৃণমূল এবং বিজেপি দু’পক্ষেরই নেতা-কর্মী এবং সমর্থকরা।
তৃণমূলের সেনাপতি দলের সুপ্রিমো মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বিরুদ্ধে তারই জোড়াফুল শিবির ছেড়ে বিজেপি-তে যাওয়া শুভেন্দু অধিকারী।
নন্দীগ্রামে এমন চিত্তাকর্ষক দ্বৈরথে শেষ পর্যন্ত কার জয় হবে? তা নিয়ে খোদ নন্দীগ্রাম তো বটেই, উত্তেজনায় ফুটছে গোটা রাজ্যও।
তৃণমূল বা বিজেপি, নন্দীগ্রামের কোনও শিবিরই এই মুহূর্তে হাতে হাত রেখে নিশ্চিন্তে বসে থাকতে রাজি নয়। নন্দীগ্রাম কেন্দ্রের ভোট গণনা হচ্ছে হলদিয়া মহকুমা শাসকের দফতরের অদূরে অবস্থিত হলদিয়া গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড হাইস্কুলে। নন্দীগ্রাম থেকে সড়ক পথে যার দূরত্ব প্রায় ৬৭ কিলোমিটার। ঘণ্টাদেড়েকের সেই পথ পাড়ি দিয়ে শনিবার রাতেই হলদিয়া গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড হাইস্কুলে পৌঁছে যেতে চান অনেকেই।
উত্তেজনার কথা মেনে নিলেন মমতার নির্বাচনী এজেন্ট সেখ সুফিয়ান। বললেন, রাতে বাড়িতে থাকার কোনও প্রশ্নই নেই। শনিবার বিকেলেই দলবল নিয়ে হলদিয়ার উদ্দেশে রওনা দিয়েছি। রাতটা হলদিয়ার হোটেলেই কাটাব।
ভোটের আগে যাঁর সঙ্গে তৃণমূলনেত্রীর টেলিফোনিক কথোপকথন ফাঁস হয়েছিল, তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দেয়া সেই প্রলয় পাল বলছেন, খুব সকালেই গণনাকেন্দ্রে হাজির হতে হবে। দাদা (শুভেন্দু অধিকারী)-র জয়ের ব্যাপারে আমরা একশো শতাংশ নিশ্চিত। তবে ভোরবেলা এতটা পাড়ি দেয়া যাবে না। তাই কোনও ঝুঁকি না নিয়ে শনিবার বিকেলেই হলদিয়া পৌঁছে গিয়েছি।
রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের এগজিট পোলের অধিকাংশই ‘গুরুত্ব’ দিচ্ছে না বামেদের। কিন্তু নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে দুই মহাশক্তিধরের লড়াইয়ের মাঝে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের অবস্থান কোথায় পৌঁছায় তার সাক্ষী হতে চায় বাম শিবিরও।
সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সম্পাদক নিরঞ্জন সিহির প্রতিক্রিয়া,‘নন্দীগ্রামের কর্মীরা আগে থেকেই হলদিয়ায় পৌঁছে গিয়েছেন। যদিও অন্যান্য বিধানসভা কেন্দ্রের কর্মীরা সকালে গণনার শুরু হওয়ার আগে গণনাকেন্দ্রেপৌঁছবেন।’
তৃণমূলের জমি আন্দোলনের ভিত্তিভূমি নন্দীগ্রামের সঙ্গে জড়িয়ে তেভাগা আন্দোলনের ইতিহাসও। ওই কেন্দ্রের রাজনৈতিক যুদ্ধ নিয়ে প্রথম থেকেই উত্তাপ ছড়িয়েছে। আজ রবিবার সেই যুদ্ধের অন্তিম পর্ব।
ডিএএম//
Leave a Reply